#নয়াদিল্লি: চিনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার পরে গত ১২ মাসে প্রায় অর্ধেক ভারতীয় চিনে তৈরি পণ্য কেনেননি। সম্প্রতি এমন একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। দেশের ২৮১টি রাজ্যে বসবাসকারী ১৭,৮০০ জন নাগরিকের মধ্যে ১-১০ জুনের মধ্যে সমীক্ষা করে এই রিপোর্টটি দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, করোনার জন্য ভারতে জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অক্সিজেন সরঞ্জামের আমদানি বেড়েছে বলে চলতি বছরে জানুয়ারি-মে মাসে চিন থেকে আমদানি ৪২ শতাংশ বেড়েছে। বাস্তবে কিন্তু যে সব পণ্য আমদানি করা হয়েছে, তার মধ্যে চিনের ভাগ মাত্র ১২ শতাংশ!
গত ১২ মাসে ভারতের গ্রাহকরা চিনে তৈরি কতগুলি পণ্য কিনেছিলেন তা বোঝার জন্য সমীক্ষায় প্রথম প্রশ্ন করা হয়েছিল। যার উত্তরে ৪৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা চিনে তৈরি কোনও জিনিস কেনেননি। ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতারা জানিয়েছেন, তাঁরা ১-২ টি পণ্য, ৮ শতাংশ ৩-৫ টি পণ্য কিনেছেন। পাশাপাশি চার শতাংশ ক্রেতা চিন থেকে তৈরি হয়ে আসা ৫-১০টি পণ্য কিনেছিলেন, তিন শতাংশ বলেছেন যে তাঁদের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান ১০-১৫, এক শতাংশ বলেছেন ২০টির বেশি এবং অন্য এক শতাংশ বলেছেন ১৫-২০টির মধ্যেই এমন পণ্য কিনেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছয় শতাংশ ভারতীয় ক্রেতা এই বিষয়ে মতামত দিতে চাননি।
২০২০ সালের নভেম্বরে পরিচালিত আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ১ শতাংশ ভারতীয় গ্রাহক চিনে তৈরি পণ্য কেনেননি এবং বেশিরভাগ মানুষই কম দামের কারণে কিনেছেন। যদিও ২০২০ সালের তুলনায় এই বছর ভারতের সঙ্গে চিন বাণিজ্যেরও উন্নতি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের জুনে গালওয়ান উপত্যকায় সীমান্ত বাড়ানো নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ যায় ২০ জন ভারতীয় সেনার। যদিও ভারতীয় সেনা এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল যে উভয় পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তবুও ভারত-চিন সীমান্তে ভারতীয় সেনাদের উপরে হামলার পরেই অনেক ভারতীয় চিনে তৈরি পণ্য বয়কট করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
সম্প্রতি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে এদেশে কোভিড ১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চিন থেকে ভারতে জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অক্সিজেন সরঞ্জাম আমদানি বৃদ্ধির কারণেই ভারতে চিনা পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। পাশাপাশি, লকডাউনে অনেক পরিবারের উপার্জনে মারাত্মক ভাবে প্রভাব পড়েছে। ফলে কারও কারও জন্য, স্বল্প ব্যয়ের পণ্য কেনা একমাত্র বিকল্প হয়ে উঠেছিল। তাই তাদের চিনা পণ্যের দিকে ঝুঁকতে দেখা যায়।
অন্য দিকে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে জিডিপি ১১ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে শীর্ষস্থানীয় গ্লোবাল সংস্থাগুলির হাত ধরে এবছর জানুয়ারি মাসে ভারত ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল, কিন্তু কোভিড ১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রায় সমস্ত রাজ্যে ৪৪-৬০ দিনের লকডাউন হয়ে যায়। ফলে ফের মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। একথা ঠিকই যে চিনের অনেক উচ্চমানের একেবারে অন্য রকমের পণ্য রয়েছে যার কোনও ভারতীয় সমকক্ষ নেই। একইভাবে, বিশ্বব্যাপী চাহিদার জন্য গ্যাজেট এবং এই জাতীয় সরঞ্জাম তৈরির অনেকগুলি গ্লোবাল ব্র্যান্ডের চিনে কারখানা আছে, তাই এদিক থেকেও চিনা পণ্য কেনা একেবারে বর্জন করা সম্ভব হয়নি।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে ২০২০ এবং ২০২১ সালের অতিমারীতে, অনেক ভারতীয়, প্রায় ৯০ শতাংশ চিনে তৈরি পালস অক্সিমিটার কিনেছেন। একই সঙ্গে ভারতের বেশিরভাগ ক্রেতার চিনে তৈরি পণ্য কেনার পিছনে ওই জিনিসপত্রগুলির কম দাম হওয়া অবশ্যই একটি কারণ। তবে এক্ষেত্রে চিনের পণ্যের গুণমানকেও অনেকে কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Chinese goods, Coronavirus