মেদিনীপুরে তার বিপ্লবী-জীবনের অভিষেক। তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায় যোগ দেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো। সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন হেমচন্দ্র দাসের সহকারী।
অনুশীলন সমিতি কিংসফোর্ডকে হত্যা করার প্রচেষ্টা জারি রেখেছিল। এপ্রিলে দুই সদস্যের একটা পরিদর্শক দল মুজাফফরপুর সফর করে। যুক্ত হন অপর এক বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী। বিদেশ থেকে শিখে আসা পদ্ধতিতে বোমা বানিয়ে দিয়েছিলেন হেমচন্দ্র। প্রফুল্ল চাকী মুজাফফরপুরে গিয়েছিলেন যাঁকে নিয়ে, তিনি ছিলেন ক্ষুদিরাম বসু।
advertisement
কিংসফোর্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় বোমা। তবে সেই বোমার আঘাতে মৃত্যু হয়নি অত্যাচারী শাসকের। এর পর ধরা পড়েন ক্ষুদিরাম। বিচারের নামে চলে প্রহসন। বিচারে ক্ষুদিরামের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। তবে এর পর ক্ষুদিরামের অস্ত্রগুরু নারায়ণগড়ের বীর বিপ্লবী হেমচন্দ্র তাঁর ‘বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা’ বইতে ক্ষুদিরাম সম্পর্কে বর্ননা দিয়েছেন। তিনি লিখলেন, ‘‘ক্ষুদিরামের সহজ প্রবৃত্তি ছিল প্রাণনাশের সম্ভাবনাকে তুচ্ছ করে দুঃসাধ্য কাজ করবার। তাঁর স্বভাবে নেশার মতো অত্যন্ত প্রবল ছিল সৎ সাহস। আর তাঁর ছিল অন্যায় অত্যাচারের তীব্র অনুভূতি। সেই অনুভূতির পরিণতি বক্তৃতায় ছিল না, বৃথা আস্ফালনও ছিল না; অসহ্য দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ, এমনকি মৃত্যুকে বরণ করে, প্রতিকার অসম্ভব জেনেও শুধু সেই অনুভূতির জ্বালা নিবারণের জন্য, নিজ হাতে অন্যায়ের প্রতিবিধানের উদ্দেশে প্রতিবিধানের চেষ্টা করবার ঐকান্তিক প্রবৃত্তি ও সৎসাহস ক্ষুদিরাম চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য।’’