TRENDING:

West Medinipur News: উচ্চশিক্ষার পরেও মিলছে না চাকরি! হতাশ লোধা শবর সমাজের যুবক যুবতীরা

Last Updated:

"আমাদের দেখে বর্তমান প্রজন্ম শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। সমাজটা আবার সেই পিছিয়ে পড়বে।" লোধা শবর পরিবারের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা চাকরি না পেয়ে এমনটাই বলছেন হতাশায়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে তাদের ইচ্ছা ছিল চাকরি করার। কিন্তু পড়াশুনা করেও এখনও মেলেনি কোনও কাজ। 

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#পশ্চিম মেদিনীপুর: তাদের সমাজে শিক্ষার আলো তেমন করে পৌঁছত না। মনও ছিল না তাদের। সমাজের মূল স্রোত থেকে অনেকটা পিছিয়ে লোধা শবরেরা। সম্প্রতি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ জন্মেছে। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার প্রায় ২৯ জন যুবক যুবতীর মধ্যে কেউ স্নাতক তো কেউ আবার স্নাতকোত্তর-সহ বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষিত। তবে বয়স পেরিয়ে যাওয়ার মুখেও মিলছে না চাকরি। ফলে তাদের ফিরতে হচ্ছে তাদের বংশ পরম্পরাগত পেশায়।
লোধা যুবক
লোধা যুবক
advertisement

শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের বক্তব্য, সরকার সহযোগিতা করলে তাদের সমাজ আরও এগোতে পারত। চাকরি না জোটায় তাদের সমাজও কথা শোনাচ্ছে। ফলে বর্তমান প্রজন্ম ফের শিক্ষা থেকে মুখ ফেরাচ্ছে বলে দাবি লোধা শবর পরিবারগুলোর। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা লোধা শবর কল্যাণ সমিতি, তাদের সম্প্রদায়ের কতজন শিক্ষিত হয়েছেন, তার তালিকা তৈরি করেছেন। সেই তালিকা ইতিমধ্যেই জেলা শাসকের দফতরে দেওয়া হয়েছে। চাকরির আশায় দিন গুনছেন যুবক যুবতীরা। তবে লোধা শবর যুবকেরা শিক্ষিত হয়ে কি করছেন ? কেউ বাঁশ কাটছেন, কেউ জঙ্গল থেকে কন্দমূল তুলে বিক্রি করছেন। কেউ আবার যুক্ত দিন মজুরিতে।

advertisement

আরও পড়ুন- লাদাখে বাস দুর্ঘটনায় নিহত সেনা জওয়ানের শেষকৃত্য সম্পন্ন

তাদের বক্তব্য, "সমাজে আমাদের অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। শিক্ষিত হয়ে চাকরি না পেয়ে বাঁশ কেটে, জঙ্গল থেকে মূল, কাঠ এনে বিক্রি করে সংসার চালাতে হচ্ছে। সরকার সদয় হলে সমাজের হাল ফিরত।"

View More

আরও পড়ুন- বিকল জেনারেটর! ঘুটঘুটে অন্ধকার হাসপাতালে! কী ভোগান্তি রোগীদের!

advertisement

নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর, ডেবরা, দাঁতনের অনেকেই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ণ। তবে চেষ্টা করেও চাকরি না জোটায় দিন মজুরি করতে হচ্ছে। সম্ভ্রম ছেড়ে জুটতে হচ্ছে তাদের সমাজের পুরাতন জীবিকায়। জঙ্গল থেকে তাদের পুরনো পেশা দিন মজুর, জঙ্গল থেকে পাতা, মূল সংগ্রহ। কাউকে গেঁড়ি, গুগলি, শাক তুলতে হচ্ছে সংসার চালাতে।

এই যুবক যুবতীদের দাবি, "আমাদের দেখে বর্তমান প্রজন্ম শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। সমাজটা আবার সেই পিছিয়ে পড়বে।" লোধা শবর পরিবারের ছেলেমেয়েরা এখন পিছিয়ে নেই। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছেছে তারা। সমাজও উন্নত হচ্ছিল। তাদের ইচ্ছা ছিল চাকরি করার। কিন্তু পড়াশুনা করেও এখনও মেলেনি সরকারি চাকরি।

advertisement

কেশিয়াড়ি ব্লকের হাবু প্রামানিক, অনিল কোটাল, অতনু নায়েক, সুনীল কোটাল, নারায়ণগড়ের রাহুল কোটাল, দীপক বাগ, সমর কোটাল, অনুপ দিগার, সৌরভ নায়েক, মোহন নায়েক। এছাড়াও ডেবরা, খড়্গপুর, দাঁতনের অনেকেই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ণ।

কেশিয়াড়ির হাবু প্রামানিক, সুনীল কোটালদের বক্তব্য, "বয়স চলে যাচ্ছে। চাকরি পেলাম না। সংসার টানতে বাঁশ কেটে দূরে গিয়ে বাজারে বিক্রি করতে হয়। আবার কখনও গাছের মূল বিক্রি করলে ঘরে উনুনে হাঁড়ি চড়ছে। এখন আমাদের সমাজ আমাদের দেখে উপহাস করে। উঠতি ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে চাইছে না।"

advertisement

দরিদ্র পরিবার। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছিলেন যুবক, যুবতীরা। আশা ছিল। কিন্তু সেই আশা বাস্তবের রূপ পাবে ? ডেবরার আমদানগরের বাসিন্দা বাপন নায়েক সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ। তিনি বলেন, "আমরা তো হতাশ। পরবর্তী প্রজন্মও আমাদের দেখে হতাশ হচ্ছে। চাকরির কথা বলছি না। চাকরি দিলে তো ভালো। নয়তো সরকার স্বনির্ভর করতে যদি কিছু সদর্থক পদক্ষেপ নেয় তাহলে আমাদের সমাজটা টিকে থাকতে পারবে। আমাদের দেখে অনেকেই এগিয়ে আসতে চেয়েছিল।" তার আক্ষেপ, "বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ণ হয়ে দিন মজুরি করে সংসার টানতে হচ্ছে। বাবা, কাকাদের মতো একই অবস্থা আমাদের।"

খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকার সামরাইপুরের বাসিন্দা যুবতী অঞ্জুষা আড়ি ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে শিক্ষকতার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি টিউশন করছেন। তিনি বলেন, "সরকার যে কোনও একটা কাজ দিক। নইলে এত কষ্ট করে পড়াশোনার দাম পাব না।"

গত ১৭ মে মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক সভা করেছিলেন। সেখানে জেলা লোধা শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাইচন্দ্র নায়েক লোধা শবর পরিবারের শিক্ষিত যুবক যুবতীদের দুরবস্থার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী জেলা শাসককে নামের তালিকা দিতে বলেছিলেন। তাদের স্বনির্ভর করতে কোনও প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় কিনা সে কথাও তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ১৯ মে জেলা শাসককে লোধা যুবক যুবতীদের কাজের সংস্থান করে দেওয়ার আবেদন জানান সম্পাদক বলাইচন্দ্র নায়েক।

অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষিত হয়েছেন। তাদের কাজ কি দিতে পারে না সরকার ? প্রশ্ন পরিবারগুলোর। লোধা শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাইচন্দ্র নায়েক বলেন, "লোধা সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে। যারা এগিয়েছে তারা চাকরি না পেয়ে হতাশ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি বিবেচনার জন্য জানিয়েছি।"

জেলা শাসক রশ্মি কমল বলেন, "চাকরির জন্য আবেদন করতে হবে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। ওদের তো সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এরপরেও যদি প্রয়োজন হয় ওদের কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার, সেটা বুঝে নিয়ে স্পেশাল কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখা হচ্ছে।"

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
'আসছে বছর আবার হবে'! দিঘার সমুদ্রে বিলীন দেবী দুর্গা, ঢেউয়ের গর্জনে মিশল বিদায়ের সুর
আরও দেখুন

Partha Mukherjee

বাংলা খবর/ খবর/পশ্চিম মেদিনীপুর/
West Medinipur News: উচ্চশিক্ষার পরেও মিলছে না চাকরি! হতাশ লোধা শবর সমাজের যুবক যুবতীরা
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল