শিশুটির বাবা মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা শিশুটিকে না নেওয়ায় হাসপাতালে ছয় মাস থাকার পর শিশুটির ঠাঁই হয় মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বালিকা ভবন বা হোমে। হোমের আয়া ও নার্সদের কোলে পিঠেই চেপেই পালন হচ্ছিল শিশুটি। এদিকে আমেরিকার মিসিসিপি রাজ্যের বাসিন্দা দুই দম্পতি একটি কন্যা সন্তানের খোঁজ করছিল বহুদিন ধরেই। শিশুটির বর্তমান বয়স প্রায় দু’বছর তিন মাস। ওই হোমে আরও প্রায় ন’জন শিশু ছিল। তারাই হয়ে উঠেছিল শিশুটির বন্ধু। তবে সে আর পাঁচটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতো ছিল না। বাকিদের মতো সে দৌড়াতে পারত না। মাথাও সোজা রাখতে পারত না দীর্ঘক্ষণ।
advertisement
এরকম একটি বাচ্চাকে দত্তক নেওয়ায় ওই আমেরিকান দম্পতির মহানুভাবতাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন প্রত্যেকেই। জেলার শিশুসুরক্ষা দপ্তর সুত্রে খবর, শিশুটিকে দত্তক নেওয়া ওই দম্পতির বাড়ি আমেরিকার মিসিসিপি রাজ্যে। তাঁদের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। তাদের বয়স যথাক্রমে চার ও ছয় বছর। ওই দম্পতির একজন আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার, অন্যজন খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত। সংসারে টাকা পয়সার অভাব না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরেই একটি কন্যা সন্তানের অভাব বোধ করছিলেন ওই দম্পতি। তাঁরা ভারতীয় কন্যাসন্তান দত্তকের জন্য মনস্থির করেন। সেইমতো আফা’র (অথোরাইজড ফরেন অ্যাডাপশন অথরিটি) মাধ্যমে তাঁরা ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
আরও পড়ুনঃ পানীয় জলের কলে বেরোচ্ছে কাদা, নোংরা! মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ কাউন্সিলর
যাবতীয় কাগজপত্র আপলোড করে রেজিস্টার করেন কেন্দ্রের ‘সেন্ট্রাল অ্যাডাপশন রিসোর্স অথরিটি’র পোর্টালে। শিশুকন্যা দত্তক নেওয়ার জন্য ভারতের যেকোনও তিনটি রাজ্য নির্বাচন করেন। তার মধ্যে বাংলাও ছিল। সেই সুত্র ধরেই বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনের এই শিশুটিকে তাঁদেরকে দেখানো হয়। শিশুটিকে দেখেই তাঁদের পছন্দ হয়ে যায়। শিশুটির সমস্ত মেডিক্যাল রিপোর্টও দেখেন তাঁরা। মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখে তাঁরা পারতেন এই শিশুটিকে না নিয়ে অন্য শিশুর খোঁজ করতে, কিন্তু তাঁরা তা করেননি।
আরও পড়ুনঃ কাটা গাছ পাচারের চেষ্টা! উদ্ধার করল বন দফতর
জেলা আদালতের বিচারক সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে শিশুটিকে ওই দম্পতির হাতে তুলে দেওয়ার ছাড়পত্র দেন। অতিরিক্ত জেলা শাসক (সমাজকল্যাণ) কেম্পা হোন্নাইয়া বলেন, শিশুটিকে আজ ওই আমেরিকার দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালেই মেদিনীপুর শহরে এসে পৌঁছান ওই দম্পতি। তাঁরা দেখা মাত্রই কোলে তুলে নেন শিশুটিকে। শিশুটি যখন হোম ছেড়ে যাচ্ছে, তখন হোমের আয়া, নার্সদের চোখে জল। খেলার সঙ্গীকে হারিয়ে মন খারাপ অন্যান্য শিশুদেরও। মঙ্গলবার সারা দিনেও কান্না থামেনি এক শিশুর।
Partha Mukherjee