সবই চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু হঠাৎই হয়েছিল ছন্দপতন। ১৯২২ সালে ভয়াবহ আগুনের কবলে পরে জগন্নাথ দেবের রথ। আর তারপর থেকেই যেন রানীগঞ্জের সিয়ারসোলের রথযাত্রার জাঁকজমক আরও বেড়ে গিয়েছে। কারণ পরের বছর ১৯২৩ সালে জগন্নাথ দেব চড়েছিলেন পিতলের তৈরি রথে। গোবিন্দপ্রসাদের কন্যা হরসুন্দরী দেবী এই পিতলের রথ তৈরি করান। যা তৈরি হয়েছিল মাহেশের রথের আদলে।
advertisement
রাজবাড়ির সদস্যদের সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে ওই পিতলের রথ ১০০ তম বর্ষে পদার্পণ করল। পিতলের রথটির উচ্চতা ৩৫ ফুট। পিতলের রথের গায়ে লেখা আছে রামায়ণ, মহাভারতের বিভিন্ন কথা। পিতলের তৈরি রথে রয়েছে নানান দেবদেবীর মূর্তি। প্রত্যেক বছর নতুন রাজবাড়ি থেকে জগন্নাথ দেবকে নিয়ে যাওয়া হয় মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে। নতুন রাজবাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দূরে অবস্থিত পুরনো রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় রথ। আবার উল্টো রথের দিন সেটিকে ফিরিয়ে আনা হয় নতুন রাজবাড়িতে।
রানীগঞ্জের সিয়ারসোলে রথযাত্রা একটা সময় গোটা বর্ধমান জেলার মধ্যে ছিল অন্যতম। বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী রথ হয় রানীগঞ্জে। এই রথের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অনেক আবেগ, অনেক ইতিহাস। স্থানীয় মানুষজন বলেন, একটা সময় এটি পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের মধ্যে সবথেকে বড় পিতলের তৈরি ছিল। এখন বিভিন্ন জায়গাতেই পিতলের রথের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু ১০০ বছর আগে এমন রথের দেখা পাওয়া যেত সৌভাগ্যক্রমে। পাশাপাশি সবথেকে আশ্চর্যের বিষয়, বিগত ১০০ বছরে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি পিতলের তৈরি রথটির।
আরও পড়ুন: Unique Umbrella: এসি-কুলারের মতো হু হু করে বিক্রি হচ্ছে এই বিশেষ ছাতা! হচ্ছে বিরাট লাভ, মিলছে কোথায়?
রানীগঞ্জে রথযাত্রা উপলক্ষে বসে একটি বিশাল মেলা। ১৫ দিনব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বহুদিন ধরেই এই মেলা চলে আসছে। মেলার সঙ্গেও জড়িত রয়েছে অনেক ইতিহাস। একটা সময় এলাকায় তেমন কোনও বাজার ছিল না। ফলে রথের মেলায় জন্য অপেক্ষা করতেন বহু মানুষ। বিশেষ করে রথের মেলায় বিক্রি হতো কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র। কারণ রথের পর পরই বর্ধমান জেলায় শুরু হয় ধান চাষের মরশুম। এখনও রথ উপলক্ষে মেলা বসে কিন্তু কালের নিয়মে সেই মেলা দখল করেছে নানা আধুনিক জিনিসপত্রের দোকান। মেলায় দাপট কমেছে চাষাবাদের সামগ্রীর দোকানগুলির।
Nayan Ghosh