প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো দুর্গাপুজো। প্রতিদিন থাকে নানান আয়োজন। নেই কোনও থিমের চমক, ভক্তি ভরে রীতি রেওয়াজ মেনেই আবাহন জানানো হয় দেবী মহামায়াকে। প্রসঙ্গত এটি জেলার অন্যতম প্রাচীন পুজোর মধ্যে একটি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় চারশো বছরের বেশি সময় ধরে মুসাচক এলাকায় দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। এখানে পুজো হয় সোলার মেড় তথা পটে। শোলার পটে পারিবারিক দুর্গার পাশাপাশি পূজিতা হন মাটির দুর্গা। তবে এই মাটির প্রতিমায় থাকেন না লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী কিংবা কার্তিক।
advertisement
আরও পড়ুনঃ বহরমপুরের এই মণ্ডপে গেলেই থাকছেন অরিজিৎ সিং! একবার ঢুঁ মারতেই পারেন
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার আড়িয়াদহ থেকে এদের পূর্বপুরুষ নারায়ণগড়ে চলে আসেন। মুখোপাধ্যায় পদবিধারী ভরদ্বাজ গোত্রের ব্রাহ্মণ নারায়ণগড়ে পাল রাজ পরিবারে পুজো করতেন। বিশ্বস্ততার খাতিরে রাজাদের কাছ থেকে বেশ কিছু জমিজমাও পান তারা। পরে রাজাদের কাছ থেকে ‘চক্রবর্তী’ উপাধি পান পরিবারটি।
তবে বেশ কষ্ট করে বংশ-পরম্পরায় দুর্গাপুজো টিকিয়ে রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা। প্রতিদিনই দেবীর কাছে ফলমূল প্রসাদের পাশাপাশি অন্নভোগ, মিষ্টি এবং গুড়ের পিঠা দেওয়া হয়। কালিকাপুরাণ মতে, দুর্গাপুজো হয় চক্রবর্তী পরিবারে। অষ্টমীর দিন সন্ধিপুজো না হলেও বড় পুজোর পরেই থাকে পংক্তিভোজনের অনুষ্ঠান। গ্রামের সমস্ত মানুষকে খাওয়ানোর রীতি আছে।
চক্রবর্তী পরিবারের পুজোর বিশেষত্ব হল দশমীর দিন বিসর্জনের আগে দেবী দুর্গাকে পান্তা ভাতের সঙ্গে সুসনি শাকের চচ্চড়ি দিয়ে নৈবেদ্য দেওয়া হয়। যদিও তা হয় সম্পূর্ণ নিরামিষ। পাশাপাশি বিসর্জনের আগে খাওয়ানোর পর দেবী দুর্গার মুখ দুধ ও পান পাতা দিয়ে মুছিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিদিন রাতে পুজোর শেষে থাকে শয়নের আয়োজন। মাদুর পেতে নতুন শাড়ি বিছিয়ে দেওয়া হয় দেবী মহামায়ার শয়নের জন্য। এছাড়াও অষ্টমীতে হয় চন্ডীমঙ্গলের আসর।
পরিবারের সদস্যরা কাজের সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় থাকলেও পুজোর ক’টা দিনে সকলে একসাথে মিলিত হন। অনাড়ম্বর ও বিশেষ আয়োজনে মেতে ওঠেন গ্রামের মানুষ থেকে চক্রবর্তী পরিবারের সকলেই। এখানে দেবী মহামায়াকে ঘিরে রয়েছে অগাধ ইতিহাস।
রঞ্জন চন্দ