উত্তম কুমার মাজি বর্তমানে জামুরিয়া ১ নম্বর চক্রের অধীন আসানসোল হুড়মাডাঙ্গা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ২০০০ সালে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। তাঁর কর্মজীবনের প্রথম স্কুল ছিল রানীগঞ্জ চক্রের অধীন চেলোদ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর পরিবর্তন হয়ে তিনি হুড়মাডাঙ্গা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন। মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় এই স্কুল। এই অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করে তুলতে ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের বাংলা ভাষায় সুশিক্ষিত করে তুলতে তিনি কঠোরভাবে পরিশ্রম করেছেন।
advertisement
আরও পড়ুনঃ দুর্গাপুরে বসেই পাঞ্জাব ‘ভ্রমণ’! কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হচ্ছে…! শহরবাসীর জন্য বড় চমক
জানা গিয়েছে, স্কুলছুট রুখতে তিনি নিজেই ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের মুখ থেকে বিভিন্ন কথা শুনতেন। পাশাপাশি বাবা-মায়েদের কথাও শুনতেন তিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করে তুলতে দিনের পর দিন প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। ফলত তাঁর স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার অনেকটাই বেশি থাকত। এছাড়া বিদ্যালয়ে সামগ্রিক দিক থেকে উন্নয়নের ছোঁয়া দিয়েছেন তিনি।
২০১২-১৩ সাল নাগাদ বিদ্যালয়ে কোনও বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল না। সেই সময় ছাত্রছাত্রীরা অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে পড়াশোনা করত। সেই বিষয়গুলি দেখে উচ্চপর্যায়ে কথা বলেন উত্তমবাবু। এরপর বিদ্যালয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়ে যায়। স্কুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্রেণিকক্ষের অভাব ছিল সেই শ্রেণিকক্ষ বাড়ানোর গুরুদায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। ছাত্রছাত্রীরা যাতে সহজে অক্ষরগুলি মনে রখতে পারে তাই বিদ্যালয়ের চতুর্দিকে বিভিন্ন অক্ষর মালা ও ছবি দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন। বিদ্যালয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সব সময় বজায় রেখেছেন। ২০১৫ সালে তাই নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কারও এসেছে।
আরও পড়ুনঃ ৪০০০ টাকা দিয়ে শুরু, পুজোর আগে কলকাতা কাঁপায় ‘এই’ ব্যবসা! আয়ের নয়া দিশা দেখাচ্ছেন বাঁকুড়ার ব্যবসায়ী
ছাত্রছাত্রীরা একসঙ্গে বসে মিড ডে মিলের খাবার খেতে পারছিল না, সেই সময় তিনি ভাবেন একটি সুন্দর ডাইনিং রুমের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল হবে। এরপর সেই ডাইনিং রুম তৈরি করার উদ্যোগ নিলেন। সেই সঙ্গে উন্নত রান্নাঘর, বাথরুমের ব্যবস্থা হল। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য স্মার্ট ক্লাসরুম, কম্পিউটার প্রযুক্তিরও ব্যবস্থা করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই স্কুলের মান উন্নয়নে উত্তমবাবুর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
উত্তমবাবু বলেন এই পুরস্কার পেতে চলেছি বলে আমি খুব গর্ব অনুভব করছি। আগামীতে এই স্কুলকে আরও কীভাবে উন্নত থেকে উন্নততর জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। উত্তমবাবুর শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাওয়ার কথা জানতে পেরে খুশি জামুরিয়া ১ নম্বর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অরিজিত মন্ডল। তিনি জানিয়েছেন, উনার এই শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাওয়ার জন্য সমগ্র চক্রের পক্ষ থেকে ওনাকে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে। তিনি বছরের পর বছর ধরে একটি আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। এটা সত্যিই প্রশংসনীয় এবং আগামীদিনে বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড আরও প্রসার পাবে, বিস্তার লাভ করবে এটাই আশা রাখি।