স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতার ব্লকের বসতপুর গ্রামে তৈরি হওয়া চোলাই মদ টিনে ভরে, সিল করে তা প্লাস্টিক ত্রিপলে মুড়ে ফেলা হচ্ছে। এরপর বাঁশের সাহায্যে ভাসিয়ে রাখা হচ্ছে নদীর জলে। চক্রের সদস্যরা সেই টিনগুলি একসঙ্গে সাজিয়ে রেখে তৈরি করেছে এক ডুবে থাকা সেতুর মতো গোপন ভান্ডার। বসতপুর থেকে শুরু হওয়া এই ভাসমান ‘সেতু’ গিয়ে মিলেছে গুসকরা শহরের কাছাকাছি নদীর ধারে।
advertisement
আউশগ্রাম আবগারি থানার ওসি উত্তম মাহাতো বলেন, “আমি জীবনে এত অভিনব পদ্ধতিতে চোলাই চোরাচালান দেখিনি। মনে হচ্ছে নদীর নিচে মদের টিন দিয়ে আস্ত একটা সেতু বানানো হয়েছে। উদ্ধার করতে গিয়ে আমাদের সাঁতার কেটে নামতে হয়েছে। এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতা হলো।” সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, কারবারিরা নদীর নিচে জায়গা ভাগ করে টিন সাজিয়ে রাখে। কে কোন এলাকায় কত টিন রাখবে, তা আগেভাগেই ঠিক হয়ে যায়। নির্দিষ্ট সময় নদী থেকে সেই টিন তুলে এনে সরবরাহ করা হচ্ছে আউশগ্রাম, গুসকরা সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। এই কৌশলে প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকার অবৈধ ব্যবসা চলছে। কার্যত নদীর জলের তলায় তৈরি হয়েছে এক ভাসমান মদের সাম্রাজ্য। আবগারি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে প্রায় ১৫ হাজার লিটার চোলাই উদ্ধার হয়েছে। ১০০রও বেশি মামলা রুজু হয়েছে এবং ধরা পড়েছে অন্তত ৯ জন।
পাশাপাশি ভাঁটি থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও প্রায় ২ হাজার লিটার প্রস্তুত চোলাই। আউশগ্রামের বাহাদুরপুর, প্রেমগঞ্জ, ভাল্কী, সামন্তপাড়া, আদুরিয়া, যাদবগঞ্জ প্রায় সর্বত্রই সক্রিয় চক্রের সদস্যরা।প্রশাসনের তরফে এখন নদীর উপর কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে জলের তলায় রাখা টিন শনাক্ত করতে। পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে লিফলেট বিলি করে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। তবে নদীর ভেতর তৈরি এই গোপন ‘সাপ্লাই লাইন’ ভেঙে ফেলাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “সব জানি, কিন্তু কিছু বলতে পারি না। প্রতিবাদ করলেই ভয় দেখায়। তবে নদীটা এভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, ভাবতেই পারিনি।”
সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে নদীর এই অপব্যবহার কবে থেকে চলছে? প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও কীভাবে এতদিন ফাঁকি দিয়ে সক্রিয় থেকেছে এই চক্র? গুসকরা ও আউশগ্রামের মতো জনবহুল এলাকায় কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এই বিপজ্জনক চোলাই? নদীর তলা দিয়ে গড়ে ওঠা এই ‘চোলাই করিডর’ নিছক অভিনব চক্রান্ত নয়, এক ভয়াবহ সামাজিক সংকটও বটে। তাই সাধারণ মানুষ এখন অপেক্ষায়, কবে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে ভেঙে পড়বে এই ভাসমান মদের সাম্রাজ্য।