উত্তরে তিনি বলেন, “এই তো বাবা সামনেই।” তবে এভাবে অসহায় অবস্থায় দেখে পাড়ার ছেলেরা ঠাকুমার বাড়ি খুঁজতে উদ্যোগী হন। কখনও হেঁটে, তো কখনও টোটোতে চাপিয়ে এদিক ওদিক ঘুরেও ওই বৃদ্ধার সঠিক ঠিকানা না মেলায় গোপালনগর থানার দ্বারস্থ হয় সহৃদয় ব্যক্তিরা।
advertisement
ততক্ষণে ওই বৃদ্ধা শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ধকলে। এরপর পুলিশের তরফ থেকে তাকে স্থানীয় জে আর ধর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। তবে কোনোভাবেই ঠিকানা না মেলায়, দফায় দফায় ডাক্তার বাবু থেকে নার্সরাও নানা ভাবে জানতে চান ওই বৃদ্ধার নাম ঠিকানা। তবে বৃদ্ধার উত্তর শুধু \”এই তো বলেই\” আর কিছু বলতে পারছেন না। তবে মাঝে মাঝে বলে উঠছেন \”বাবু টা কোথায় গেল! হ্যাঁ রে কও আমারে লইয়া যাইতে \” এভাবেই দুমাস বাড়িছাড়া হয়ে হাসপাতালে দিন কাটাছিলেন বৃদ্ধা নির্মলা দেবী।
আরও পড়ুন- ঘণ্টায় ৩৮,০০০ কিমি…! ধেয়ে আসছে ‘মহাপ্রলয়’! ধ্বংস হবে বহু শহর…ভারতও ‘গুঁড়ো’ হয়ে যাবে?
কথায় জানা যায় বাবু হল তার নিজের আদরের নাতি। ছোট্ট থেকে যাকে কোলে পিঠে বড় করেছেন তিনি। যদিও, ‘তোমার নাতি তোমায় ফেলে রেখে গিয়েছে’ বললেই রেগে উঠছেন ওই বৃদ্ধা। এরপরই বৃদ্ধার বাড়ি ও পরিবারের খোঁজে হাসপাতালের অ্যাসিসট্যান্ট সুপার সোমদত্ত বসু হ্যাম রেডিওর সাহায্য চান। ফোন করেন রেডিও ক্লাবের সদস্য পরিমল রায় কে।
তারপর থেকেই শুরু হয় ওই বৃদ্ধার খোঁজ। অবশেষে পুত্র ও গুণধর নাতি সহ পরিবারের খোঁজ মেলে নদিয়ার শিমুরালির পালপাড়ায়। প্রথমে বিষয়টি নিখোঁজ বলে চালানোর চেষ্টা করা হলেও, পরিবারের তরফ থেকে কোনরকম নিখোঁজ ডায়েরী না করায় ওঠে প্রশ্ন। এরপরই বিষয়টিকে সহজ ভাবে দেখেনি পুলিশ। পরিবারের এমন ভূমিকায় কড়া ভূমিকা নিতে দেখা যায় প্রশাসনকে। এদিন হাসপাতালে এসে ছেলে অনন্ত হালদার মা কে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও, নিয়মিত থানায় আপডেট দিতে হবে মায়ের বলেও জানিয়ে দেওয়া হয় তাকে।
প্রতি সপ্তাহে একবার থানা খবর নেবে ওই বৃদ্ধার। কারণ যে নিষ্ঠুর ঘটনার সাক্ষী থাকল এদিন, সেই সমস্যা সমাধানে পুলিশের এমন ভূমিকার কুর্নিশ জানাচ্ছেন সমাজ সচেতন মানুষজন। যা দৃষ্টান্ত তৈরি করল, ফলে আগামী দিনে কোন সন্তান তার মা-বাবাকে অসহায় ভাবে ফেলে দিতে একবার হলেও ভাববে বলেই মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা। এদিন ছেলেকে দেখেই অঝোরে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধ মা।
Rudra Narayan Roy