জানা যায় এই গ্রামে অন্য কোন পুজোর চল ছিল না। গ্রামের মানুষের প্রথম ভীম পুজো বা বীরের পুজো শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে সেই পুজো তা গ্রামের একমাত্র পুজো হিসেবে হয়ে আসছে। তিথি ও পঞ্জিকা অনুসারে ৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার তাড়াগেড়িয়া গ্রামের পুজোর ঘট স্থাপন হয়। নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তানের মঙ্গলকামনায় ভীম ঠাকুরের কাছে মানত করেন। তাদের মনস্কামনা পূর্ণ হলে ভীম ঠাকুরের ব্রত রেখে পুজো দেন।
advertisement
এই পুজো দেওয়ায় নিয়ে আর এক অন্যরকম রীতি আছে তাড়াগেড়িয়া গ্রামে। ভীম ঠাকুরের ঘট স্থাপনের জন্য যে পুকুরে যাওয়া হয় সেই পুকুরে ঘট ডোবানোর সঙ্গে সঙ্গে ভীম ঠাকুরের ব্রত পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে স্নান করে ভিজে অবস্থায় মন্দিরে আসে। এবং মন্দিরের চারপাশে দণ্ডি কাটে। ব্রতীরা ছোট ছোট পুতুল বা ভীম ঠাকুর অর্পণ করে ভীম ঠাকুরের পুজো দেন।
ভীম পুজোর ইতিহাস নিয়ে দু’ধরনের মতবাদ পাওয়া যায়। একটি হল মহাভারতের পঞ্চপান্ডবকে ঘিরে কাহিনী অন্যটি এক প্রভাবশালী রাজা ভীমকে ঘিরে। ভীমের মহিমায় মহিমান্বিত হয়। মধ্যম পাণ্ডব ভীমকে দেবতার ন্যায় পুজো শুরু করেন। ওপর একটি লোক প্রচলিত কাহিনী হল, রাঢ়বঙ্গের চন্দ্রবংশীয় প্রবল পরাক্রমশালী রাজা ছিলেন ভীম। দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে যে ভীমের পুজো হয় বর্তমানে তা এই রাঢ়বঙ্গের চন্দ্রবংশীয় প্রবল পরাক্রমশালী রাজা ভীমের।
ভীম পুজো শুরু নিয়ে একাধিক মতবাদ থাকলেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাশাপাশি ব্লক তমলুক ও নন্দকুমারে দুটি ঐতিহ্যশালী ভীম পুজো হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। নন্দকুমার ব্লকের তাড়াগেড়্যা গ্রামের ভীম মেলাটি প্রায় ৩৫৪ বছর ধরে চলছে বলে জানিয়েছেন গ্রাম কমিটির সম্পাদক গোপাল চন্দ্র গুড়িয়া ও সভাপতি স্বদেশ ঘড়া। ভীম জীউর মূর্তিটির উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট এর বেশি। মূল ভীম মন্দিরটি প্রায় ৫ ডেসিমল জায়গার উপর ১ কোটি টাকা খরচ হয় নির্মিত হয়েছে।
আরও পড়ুন : ব্রেকফাস্টের ৪ খাবারে ধুয়েমুছে সাফ গ্যাস, অম্বল, পেট ফাঁপা! মুক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যর অসহ্য যন্ত্রণা থেকে
প্রতিবছর রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে ভক্তরা তাদের মানত করা টাকার মালা ভীমের গলায় দান করেন। প্রতি বছর সেই টাকার পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়। মেলা চালাতে প্রায় খরচ হবে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। এ বিষয়ে গোপালচন্দ্র গুড়িয়া জানান, ‘লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় ভীম মন্দিরে। মেলা চলে এগারো দিন।’ কয়েক লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে ভক্তদের জন্য মেলা প্রাঙ্গণে শৌচালয় ও স্নানাগার নির্মিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের দু’হাজার পাখির প্রদর্শনী মেলা বসেছে।