জন্ম থেকেই তাঁকে একটি কিডনি নিয়েই চলাফেরা করতে হয়৷ তার উপরে বাবার মারণ রোগ ক্যানসার ধরা পড়েছে৷ তবে শারীরিক সমস্যা থাকলেও তীব্র দাবদাহে গুসকরা শহরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁকে ট্রাফিক ডিউটি করতে হয়৷ এই গরমের দাপটে সুরজিৎ বুঝতে পারে যে এই পরিস্থিতিতে গাছের অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। তাই গাছ লাগানোর বার্তা দিয়ে অভিনবভাবে ডিউটির ফাঁকে সকলকে সচেতন করেন বর্ধমানের এই সিভিক ভলেন্টিয়ার।
advertisement
এই প্রসঙ্গে সুরজিৎ পাত্র জানিয়েছেন, ‘সমাজে গাছের অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমি কাজের ফাঁকে সকলকে গাছ লাগানোর বার্তা দিয়ে থাকি। জানিনা মানুষ কতটা সচেতন হবে, তবে আমি আমার এই কাজ চালিয়ে যাব।’ গুসকরা শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চোঙদার পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা সুরজিৎ বর্তমানে কর্মরত আউশগ্রাম থানার গুসকরা পুলিশ ফাঁড়িতে। বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান ও ভাই নিয়ে তাঁর সংসার। সিভিক ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করে যেটুকু রোজগার হয়, তাতে বাবার চিকিৎসা ও নিজের ওষুধের খরচও ওঠে না। তাই অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য স্টেজ শো করেন পুতুল নিয়ে। পুতুল দিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন করে পারিশ্রমিক পান সামান্য কিছু টাকা।
২০১৮ সালে প্রথম ধাক্কা আসে পরিবারের জীবনে, সুরজিৎ এর বাবা রমেশ চন্দ্র পাত্রর শরীরে ধরা পড়ে ক্যানসার। এরপর লকডাউনের সময় জানা যায়, সুরজিৎও জন্ম থেকে একটি কিডনি নিয়েই বেঁচে আছেন। নিয়মিত চিকিৎসা চলছে তাঁরও। তবু তিনি মনোবল হারাননি। ডিউটিও করেন আবার একই সঙ্গে ছড়িয়ে দেন পরিবেশ সচেতনতার বার্তা। তাঁর এমন পরিবেশ সচেতনতা দেখে সাধুবাদ জানান অনেকেই। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা তথা গুসকরা বাস ইউনিয়নের কর্মাধ্যক্ষ শেখ বকুল বলেন, ‘এই ভাই যা কাজ করছেন এটা সত্যিই একটা দারুণ উদ্যোগ। আমরা প্রায়ই ওকে দেখি এইধরনের সচেতনতামূলক কাজ করতে। আরও এগিয়ে চলুক, সমাজের উন্নতি হোক।’
আউশগ্রাম থানার আইসি শান্তনু অধিকারী তিনিও সুরজিৎ এর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সত্যিই পূর্ব বর্ধমানের এই সিভিক ভলেন্টিয়ার-এর চিন্তাধারা একেবারে ভিন্ন। তীব্র গরমে পরিবেশ সচেতনতার জন্য ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া এহেন উদ্যোগ প্রশংসার দাবীদার।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী