বাইজীদের অপভ্রষ্ট রূপই হল এই নাচনীরা। নাচনীদের জীবন পরিচালনা করে তাদের রসিকরা। তাদের স্ত্রীর মর্যাদা না দিলেও ‘রাখনী’ হিসাবে রেখে দেন রসিকরা। তাই নাচনীদের থাকেনা স্বামী, রসিকরাই হল তাদের জীবনের বাহক। শরীরে এয়োতি চিহ্ন থাকলেও সমাজ দেয় না তার মর্যাদা। পুরুলিয়া জেলার এমনই এক নাচনী শিল্পী হলেন 'পস্তুবালা কর্মকার'। ছোটবেলা থেকে দীর্ঘ সংগ্রাম করে বড় হয়ে উঠেছেন তিনি। বাল্যকালে বাবাকে হারিয়ে পরিবারের বোঝা হয়ে চরম অবহেলিত হয়েছেন পস্তুবালা।
advertisement
দীর্ঘ অন্ধকারে কেটেছে তার জীবন। রসিক হিসেবে তার হাত ধরেছেন বিজয় কর্মকার। পোস্তুবালার জীবনের সমস্ত সংগ্রামে তার পাশে থেকেছেন তার রসিক বিজয়। পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে সুরুলিয়া ডিয়ার পার্কের বিপরীতে দুর্বার মহিলা সমিতির সাহায্যে গঠিত নাচনি উন্নয়ন মঞ্চের অফিস, সেইখানেই একটি ঘরে রসিক বিজয় কর্মকারের সঙ্গে বসবাস করেন পস্তুবালা। ২০১৮ সালের ২৬ শে মে কলকাতার নজরুল মঞ্চে লালন পুরস্কার পান নাচনী শিল্পী পস্তুবালা। পাশাপাশি পেয়েছেন বহু স্বীকৃতি।
আরও পড়ুনঃ পুরুলিয়ার জন্ম দিবস পালন লোক সেবক সংঘের
সরকারিভাবে শিল্পী মর্যাদা পাওয়ার পর নাচনীদের জীবনে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বলে দাবি করেন পস্তুবালা। তারা বর্তমানে পান শিল্পী ভাতা। বৃদ্ধকালে হস্তশিল্পের মাধ্যমে সরকার তাদের জন্য বিকল্প কিছু পরিকল্পনা করুক বলে দাবি রাখেন তিনি। পস্তুবালার রসিক বিজয় কর্মকার জানিয়েছেন, দীর্ঘ সংগ্রামের পর পস্তু বালা সরকারিভাবে যে স্বীকৃতি পেয়েছেন তাতে তিনি ভিষন খুশি।
আরও পড়ুনঃ দুর্বিষহ দশা দুলমি বাঁধের, পুরসভার উদ্যোগে হতে চলেছে সংস্কার
ভালোবাসার টানে দীর্ঘ এতগুলো বছর তারা একসাথে লড়াই করে গেছেন। এককালে সমাজের কাছে অস্পৃশ্য ছিল নাচনীরা। ভোগলালসার শিকার হয়ে যেদিন তারা অমরলোকে যাত্রা করত, তখন কেউই তার শবদেহ সৎকার পর্যন্ত করতে আসতেন না। রাতের অন্ধকারে গরুর জোয়ালের সঙ্গে শবদেহের পায়ে দড়ি বেঁধে ফেলে আসা হত ভাগাড়ে। বর্তমানে কিছুটা হলেও সেই চিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে। শিল্পী সম্মান নাচনীদের জীবনে আশীর্বাদ স্বরূপ এসেছে।
Sharmistha Banerjee Bairagi