বিভিন্ন সময়ে হস্তশিল্পের মেলা অথবা অন্যান্য মেলাতেও বাঁশের তৈরী ঘর সাজানোর বিভিন্ন জিনিস দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি কি একবারও ভেবে দেখেছেন যে কোথায়? কিভাবে তৈরী হয় এই জিনিস ? কতক্ষনই বা সময় লাগে তৈরী হতে ? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন ঃ আদালত বাহিনী থাকার মেয়াদ বাড়ানোয় পড়াশোনা লাটে
advertisement
পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের দিগনগর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত একটি গ্রাম হল যাদবগঞ্জ। এই গ্রামে প্রায় ৩৫০০ মানুষের বসবাস। এই যাদবগঞ্জ গ্রামের প্রত্যেকেই এই বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। গ্রাম ঢুকলেই দেখতে পাবেন প্রত্যেক বাড়ির বেশিরভাগ মহিলারাই বিভিন্ন রকম বাঁশের কাজ করছেন। ছোট থেকে বড় প্রত্যেকেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত।
ষাট বছরেও বেশি বয়সের এক মহিলা এই শিল্প প্রসঙ্গে জানান, “পাঁচ ছয় বছর বয়স থেকেই এই কাজ করছি। আমাদের গ্রামের সবাই এই কাজ করে। আমি মা বাবার কাছে এই কাজ শিখেছি।”
আরও পড়ুন ঃ মাত্র ৩০ টাকায় চিকেন বিরিয়ানি! কোথায় পাওয়া যাচ্ছে, জেনে নিন
বাঁশ কেটে তারপর এনারা তার থেকে বেত তৈরী করেন এবং তার পরই শুরু করেন বিভিন্ন জিনিস বানানো। জানা গেছে, বেত রেডি থাকলে সারাদিন পরিশ্রম করলে পাঁচ থেকে ছয়টি জিনিস বানানো সম্ভব। তবে শুধু বাঁশের ঝুড়ি নয়, এই গ্রামের বাসিন্দারা জুয়েলারি বক্স, পেনদানি, ফুলদানি, হ্যারিকেন, ফুলের সাজি এবং বড় জিনিসের ক্ষেত্রে বাঁশের পেতে, কুলো আরও বিভিন্ন ধরনের জিনিস বানিয়ে থাকেন।
এখনও অবধি এই যাদবগঞ্জের তৈরী বাঁশ শিল্প পাড়ি দিয়েছে উড়িষ্যা, দিল্লি, বোলপুর, পুরুলিয়ার মত জায়গায়। এই প্রসঙ্গে ললিতা মাহালি নামে এক মহিলা শিল্পী জানান, “আমি নতুন তো এই ১২ থেকে ১৫ বছর হবে এই কাজ করছি এবং মা দের কাছে শিখেছি। উনারা দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করে আসছে। এই গ্রামের সবাই এই পেশার সঙ্গেই যুক্ত। আমাদের রোজগার এই কাজ থেকে এবং ক্ষেতে কাজ করে হয়। গ্রামের প্রায় বাসিন্দার এটাই পেশা, সকলেই পেতে, ঝুঁড়ি, কুলো এইসবই তৈরী করে। এই সূক্ষ্ম কাজ গুলো আমরা শিখেছি একটা এনজিও এসেছিল এর মাধ্যমে আমরা শিখেছি। ২০১৭ সালে সূক্ষ্ম কাজ শিখেছিলাম।”
আরও পড়ুন ঃ গ্রীষ্মের ছুটির কারণে শেষ হয়নি সিলেবাস! এই স্কুলের নতুন নিয়ম জানলে অবাক হবেন
বর্তমানে যাদবগঞ্জের বাঁশ শিল্পীরা তাদের এই শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু ওনাদের দাবী উনারা কোনরকম সাহায্য পাচ্ছেন না। এই বিষয়ে মহিলা শিল্পী ললিতা মাহালি আরও জানান, “কেউ যদি আমাদের পাশে এসে দাঁড়াতো যে আপনারা কাজ করুন, আপনাদের তৈরী জিনিস আমরা নিয়ে যাবো, আপনাদের তৈরী জিনিস নষ্ট হবেনা অথবা আমরা ভরসা দিচ্ছি। এইধরনের হেল্প পেলে আমাদের খুবই ভাল হত। আমরা এখনও সরকার থেকে কোনও রকম সুযোগ সুবিধা পাই না।”
যাদবগঞ্জের এই শিল্প এক সময়ে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিলেও বর্তমানে আর সেরকম বাজার নেই। গ্রামবাসীরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যাতে তাদের তৈরী এই জিনিস বিক্রির পথ তৈরী করে দেওয়া হয়।