এই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন এই বিত্তি বানিয়েই। বড় বাঁশ কেটে ছোট ছোট কাঠি তৈরি করে, সুতো দিয়ে তা গেঁথে মাছ ধরার ছোট বড় নানান মাপের বিত্তি তৈরি হয় এখানে। আর যা স্থানীয় হাটে বিক্রি করে দিন কাটে পরিবারগুলির।
advertisement
সুদীর্ঘ পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে তাঁরা মাছ ধরার এই বিত্তি তৈরি করেন। তবে তাঁদের তৈরি এই কুটির শিল্পের চাহিদা নির্ভর করে বৃষ্টির সঙ্গে। বৃষ্টি বাড়লে বেচাকেনা বাড়ে, আর বৃষ্টি না হলে ভাটা পড়ে তাদের বেচাকেনায়।
তবে নিজেদের এই কাজের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে আক্ষেপের সুর শিল্পীদের গলায়। নিজেদের এই কাজ ও বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে কোমডাঙার এক কুটির শিল্পী বলেন, ‘‘এটা কোমডাঙার দক্ষিণপাড়া। এখানে এই জিনিস বানানো হয়, যাকে আমরা বিত্তি বলি।’’
‘‘এই কাজ আমি ৪৫ বছর ধরে করছি। এখানে ২৫ থেকে ৩০টি ঘর আছে। সবাই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই বিত্তি তৈরি করেই আমাদের রুটি রোজগার হয়।’’
এ বছর পরিমাণ মতো বৃষ্টি না হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এই বিত্তি শিল্পীদের কপালে। নিজেদের বাপ ঠাকুরদার সময় থেকে এই কাজ চলে এলেও এই গ্রামের শিল্পীদের নেই কোনও সরকারি স্বীকৃতি। যার জেরে বেশ খানিকটা ক্ষুব্ধ কোমডাঙার কুটির শিল্পীরা।
এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা গ্রামের গৃহবধূদের কথায়, বিত্তি বানানোর পর ঠিক মতো বিক্রি না হওয়ায় এই কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর বৈশাখ মাস থেকে এই বিত্তি বিক্রির মরশুম শুরু হয় এবং যা চলে দুর্গাপুজা পর্যন্ত। বছরের বাকি সময় তাঁরা অনেকেই যুক্ত থাকেন চাষবাসের সঙ্গে। এই গ্রামে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও পাল্লা দিয়ে এই কাজ করেন।
মাছ ধরার এই বিত্তি বানানোর পদ্ধতি প্রসঙ্গে এক শিল্পী বলেন, ‘‘প্রথমে বাঁশ কেটে আনতে হয়। সেই বাঁশ টাকে কেটে কুটি কুটি করে কাঠি তৈরি করতে হবে। তারপর কাঠি জলে ভেজাতে হবে। আবার কাঠিগুলোকে শুকোতে হবে। এরপর কাঠিগুলোকে মেজে তারপর বুনতে হবে।’’
শিল্পীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের তৈরি ছোটো বিত্তিগুলি স্থানীয় হাটে ১০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। মাঝারি মাপের বিত্তিগুলি বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত দরে।
তবে এই বিক্রির সবটুকুই নির্ভর করে বৃষ্টির উপর। বৃষ্টি না হলে বেচাকেনায় ভাটা পড়ে এই কুটির শিল্পীদের। অবিলম্বে তাই সরকারি স্বীকৃতি ও সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছে কেতুগ্রাম দু’নম্বর ব্লকের কোমডাঙার বিত্তি তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকা পরিবারগুলি।