পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত বনগ্রামে বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে পুজিতা হয়ে আসছেন পুঁই-চিংড়ি মা। দেবী দুর্গার বিশেষ এই নামকরণের পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের এক সদস্যের কথায় জানা যায়, আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় এই দেবীর ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়েছিল কাটা থোর , পুঁই শাক এবং কুচোচিংড়ি। পরবর্তীকালেই সেই অবস্থার উন্নতি হলেও , রয়ে গিয়েছে ভোগের সেই প্রাচীন রীতি। আরও জানা যায় করজগ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বনগ্রামে আজ থেকে কয়েকশো বছর পূর্বে এই দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন এক নিঃসন্তান কুমোর দম্পতি। পরবর্তীকালে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বপুরুষ, দু’কড়ি চট্টোপাধ্যায়কে ‘ভিক্ষে সন্তান’ হিসেবে নিয়ে আসেন । এর পর এই পুজো হয়ে ওঠে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের।
advertisement
এখানকার দেবীর ভিন্নধর্মী নামকরণ প্রসঙ্গে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “যিনি এখানে এসেছিলেন তিনি আর্থিকভাবে ভীষণই দুর্বল ছিলেন। ঠাকুরটা ছিল কুমোরদের । তিনিও যে আর্থিক দিক থেকে খুব একটা স্বচ্ছল ছিলেন তা নয়। তখন কুচো থোড়ের একটা নৈবেদ্য, সেই সঙ্গে পুঁইশাক ,চিংড়ির আর কচু দিয়ে নিবেদন করা হত। সেই রীতিই আজও চলে আসছে।”
তবে বিশেষ প্রকারের এই ভোগ ছাড়াও বনগ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপূজার রয়েছে আরও এক এক প্রথা। অতীতের রীতি মেনে আজও দুর্গা পুজোর নবমীর দিন চট্টোপাধ্যায় পরিবার এবং বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের মধ্যে হয় ঢাকের আদানপ্রদান। যাকে ঘিরে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন দুই পরিবারের সদস্যরা।
নিজেদের পরিবারের এই রীতি নীতি প্রসঙ্গে পরিবারের সদস্যদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ আমাদের সপ্তমী অষ্টমী নবমী তিন দিনই বলিদান হয়। ষষ্ঠীর দিন চালকুমড়ো ভোগ হয়। আর একটা জিনিস হয়, আমাদের এখানে দিগম্বরী গাওয়া হয় নবমীর দিন। যেটা সাধারণত অন্যান্য জায়গায় গাওয়া হয় দশমীর দিন। এখানে নবমীর দিন দিগম্বরী গাইতে গাইতে এখানেরই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার আছে, সেখানে যাওয়া হয়। আমাদের এখানকার ঢাক দিয়ে ওই পরিবারে আরতি হয়। আবার ওখানকার ঢাক ঢোল এসে আমাদের এখানে ভোগ আরতি সম্পন্ন হয়। আগে আলমপুরের বাবুদের বাড়ির ঢাকের আওয়াজ শুনে এখানে মহাষ্টমীর সন্ধিপুজোর বলিদান হত। কিন্তু বর্তমানে সেটা সন্ধিপুজোর সময় দেখেই হয়।’’
বনগ্রামের এই পুজো চট্টোপাধ্যায় পরিবারের হলেও পুজোর ক’টা দিন সকল গ্রামবাসী সামিল হন এই পুঁই-চিংড়ি মায়ের আরাধনায়। আর এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে কাটোয়ার বনগ্রামের এই দুর্গাপুজো।