সন্ধ্যে থেকে তার চারপাশের ভিড় যেন ছিল নিত্য সঙ্গী। তার হাতের ফুচকায় রীতিমতো জল ঝরতো জিভে। যখন একদল ফুচকা খাওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে গপাগপ খাচ্ছে ফুচকা, তখন আর একদল তৈরি হয়ে থাকতো ফুচকা খাবার জন্য। গন্ধ লেবু তেতুল মাখার গন্ধে আলাদা আমেজ তৈরি হতো মৌচাক চত্বরে। বাড়িতে বন্ধু-বান্ধব অতিথি আসলে মিঠুদার ফুচকা খাওয়ানো যেন বারাসত বাসীদের কাছে এক আলাদা গুরুত্ব পেত। কে কি রকম ঝাল খাবে শুনে প্রতি রাউন্ডে চেঞ্জ হত আলু মাখা। জব্বর ঝাল মসলা দেওয়া এক স্পেশাল ফুচকা। মিঠুদার হাতের তৈরি গন্ধ লেবু দিয়ে তেঁতুল গোলা জলেও ছিল অপূর্ব স্বাদ। শেষে ফ্রি হিসেবে থাকতো স্পেশাল ছোলা বাদাম দেওয়া ফুচকাও।
advertisement
আরও পড়ুন: শয়ে শয়ে মুরগি মারা যাচ্ছে? নতুন রোগ নয়তো? গরমে নয়া আতঙ্ক! জানুন
আরও পড়ুন:
কে নেই সেই ফুচকা খাওয়ার ভিড়ে! প্রেমিক প্রেমিকা, বন্ধু বান্ধবী, নব বিবাহিত দম্পতি, ছেলে মেয়ে, দাদু দিদা, কাকু কাকিমা সকলে। আর সকলের সেই ভিড় ছিল এই একজনকে ঘিরেই, মিঠু দা। কিছুদিন আগেই দোকানের জায়গা সামান্য পরিবর্তন হয় তার। বিষয়টি নিয়ে কৌতুহলীরা জিজ্ঞাসা করলে মিঠুদা বলতেন, 'বোঝোই তো বাবু, বিভিন্ন রকমের চাপ।'
রমরমিয়ে চলা এই ব্যবসায় কিছুদিন হল জৌলুসহীন হয়ে পড়ছিলেন মিঠুদা। বাজারে অনেকটাই হয়ে গিয়েছিল ধার বাকি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক ছন্দে চলছিল ব্যবসা, কিন্তু হঠাৎই ঘটল ছন্দপতন। বাড়িতেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় মিঠুদার। নিজেই এই রাস্তা বেছে নিলেন। আর মিলবে না লোভনীয় তার হাতের ফুচকা। মন খারাপ বারাসতবাসীদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই, রীতিমতো আবেগে ভাসছেন বারাসতের নেটাগরিকরা। নানা স্মৃতির কথা তুলে ধরার পাশাপাশি অনেকেই করছেন দুঃখ প্রকাশ। কিন্তু স্থানীয় কিছু পরিচিত মানুষদের কাছে আক্ষেপের সুরে বলা সেই কথাই যেন বারংবার উঠে আসছে মিঠুদার স্মরণে, 'বোঝোই তো বাবু, অনেক চাপ।' ফুচকা খাওয়ার জন্য আর হয়তো ভিড় জমবে না পরিচিত এই দোকানে। সকলের একটাই কথা ভাল থেক মিঠুদা।
Rudra Narayan Roy