মহাশিবরাত্রির দিনে সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় শিবের মাথায় জল ঢালা, আর তার জন্য লাইন পড়েছিল দুপুর থেকেই। মন্দির ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরের ধার ঘেঁষেও ভক্তদের দাঁড়াতে দেখা যায় অধীর আগ্রহে। যত রাত বেড়েছে তত বেড়েছে মানুষের ঢল। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু বছর ধরে ক্রমেই বদলাচ্ছে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্রটা। পুজো উপলক্ষ্যে আলো দিয় সাজিয়ে তোলা হয়েছে গোটা মন্দির চত্বর, বসেছে মেলা।
advertisement
ইতিহাস থেকে জানা যায়, দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে শিব পুজোর প্রচলন শুরু হয় গাইঘাটার এই জলেশ্বর অঞ্চলে। মন্দির উন্নয়ন কমিটির নিধু শেখর মণ্ডল জানান, প্রথমে উত্তর ২৪ পরগণার মন্দিরটি ছিল ছোট ও সাধারণ মানের। পরবর্তীতে গোবরডাঙ্গার জমিদার রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় শিবমন্দের জন্য ৬০ বিঘা জমি দান করেছিলেন।
আরও পড়ুন - Maha Shivratri 2023: এই শিবরাত্রিতে রয়েছে মহাযোগ! জানুন কী করলে পাবেন মহাদেবের আশীর্বাদ
তবে মন্দিরের মুল বিগ্রহটি অবশ্য বছরের নির্দিষ্ট দিন ছাড়া দেখা যায় না। তবে কোথায় থাকে শিবের মুল বিগ্রহটি ? তিনি জানান, মন্দিরের পাশেই রয়েছে ৪ একরেরও বেশী জায়গা নিয়ে শিবপুকুর । বছরভর পুকুরের নীচে রাখা থাকে বিগ্রহটি। যেহেতু জলের নীচে ইশ্বর অর্থ্যাৎ মহাদেব বাস করেন সেহেতু এই অঞ্চলের নাম হয়েছে জলেশ্বর।
আরও পড়ুন - প্রেমিকার বাড়ির 'অপমানে' আত্মঘাতী একাদশ শ্রেণীর ছাত্র! ন্যায় বিচারের আশায় দিন গুনছেন সন্তান হারা বাবা-মা
প্রতিবছর বিগ্রহটি চৈত্র মাসের তৃতীয় সোমবার শিবপুকুর থেকে তুলে আনা হয়। আর সেই কাজটি করে থাকেন চড়কে যাঁরা সন্ন্যাসী হন তাঁরা। পরদিন ওই বিগ্রহ নিয়ে সন্ন্যাসীরা পায়ে হেঁটে হালিশহর গিয়ে বিগ্রহকে গঙ্গায় স্নান করিয়ে নিয়ে আসেন জলেশ্বরের এই শিবমন্দিরে। ফের ১ বৈশাখ মূল বিগ্রহকে শিব পুকুরেই ডুবিয়ে দেওয়া হয়।
কথিত আছে মনের বিশ্বাস নিয়ে কেউ এই মন্দিরের বাবা ভোলানাথের পুজো দিলে তার মনস্কামনা পুর্ন করে থাকেন তিনি। আর সেই বিশ্বাসে প্রতিবছর শিবরাত্রে ও চৈত্র মাসে পুজো দিতে দুরদুরান্ত থেকে ছুটে আসেন পুর্নার্থীরা। এছাড়া সারাবছর ধরেই তারকেশ্বরের মতোই পুর্নার্থীদের ভিড় লেগে থাকে জলেশ্বর শিবমন্দিরে। এই মন্দিরকে ইতিমধ্যেই হেরিটেজ ঘোষনা করেছেন রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জলেশ্বর শিবমন্দিরের নাম তাই রয়েছে প্রথম সারিতেই। রাত ভোর চলছে শিবের মাথায় জল ঢালার প্রক্রিয়া, যা এদিনও সারাদিন চলবে বলে জানানো হয়েছে মন্দিরের তরফ থেকে।
Rudra Narayan Roy