প্রশ্ন: বৈঠক আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর জি২০-র প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল?
উত্তর: জি২০-এর জন্য আমাদের নীতি বাক্যটির দিকে তাকান, ‘বসুধৈব কুটুম্বকম – এক পৃথিবী এক পরিবার এক ভবিষ্যৎ’। এটি যথাযথ ভাবে জি২০ সভাপতিত্বের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকেই তুলে ধরছে। আমরা মনে করি, পুরো পৃথিবী একটি পরিবারের মতো। যেকোনও পরিবারে, প্রতিটি সদস্যের ভবিষ্যৎ অন্য সদস্যের সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িত। সুতরাং, আমরা যখন একসঙ্গে কাজ করি, তখন কাউকে পিছিয়ে না রেখে, আমরা একসঙ্গেই অগ্রগতি করি।
advertisement
Read:- Moneycontrol EXCLUSIVE: ‘India’s Growth is Good for the World’: PM Modi’s Interview
শুধু তাই নয়, সকলেই জানেন আমাদের দেশে আমরা গত ৯ বছর ধরে ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাস, সব কা পেয়ার’ নীতি নিয়ে চলছি। এর ফলে সমগ্র দেশ একজোট হয়ে দেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছে। আজ সেই নীতির সাফল্যকে স্বীকৃতি দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল।
বৈশ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এটি আমাদের পথপ্রদর্শক নীতি।
সব কা সাথ– আমাদের সকলকে প্রভাবিত করে এমন সম্মিলিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বকে একত্রিত করা।
সব কা বিকাশ– প্রতিটি দেশ এবং প্রতিটি অঞ্চলে মানবকেন্দ্রিক বৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত করা।
সব কা বিশ্বাস– তাঁদের আকাঙ্ক্ষার স্বীকৃতি এবং তাঁদের দাবিদাওয়া উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রতিটি সদস্যের বিশ্বাস অর্জন করা।
সব কা প্রয়াস– বিশ্বের ভালর জন্য প্রতিটি দেশের অনন্য শক্তি এবং দক্ষতাকে কাজে লাগানো।
প্রশ্ন: আপনি যুদ্ধ এবং বিরাট ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিশ্ব নেতাদের আপ্যায়ন করবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এতটা অস্থির হয়নি। এই পরিস্থিতিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের থিম হল ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’, বা এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যত। বসুদৈব কুটুম্বকম এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে মানব-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আপনার আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য আপনি যেসমস্ত রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁদের মনোভাব কেমন?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে বলে নিতে হবে কোন পরিস্থিতিতে ভারত জি২০ সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব পেয়েছিল। আপনি যেমন বলেছেন, মহামারী এবং সংঘাতের পরিস্থিতিতে বর্তমান উন্নয়ন মডেল কেমন হবে তা বিশ্বের কাছে প্রশ্নচিহ্ন দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এটি বিশ্বকে এক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার যুগে ঠেলে দিয়েছে।
বিগত বহু বছর ধরে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিশ্ব। আমাদের অর্থনৈতিক সংস্কার, ব্যাঙ্কিং সংস্কার, সামাজিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, আর্থিক ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ এবং আবাসনের মতো মৌলিক প্রয়োজনীয়তার সম্পৃক্তিকরণ এবং পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞরা প্রশংসা করেছেন। সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা বছরের পর বছর FDI-তে রেকর্ড তৈরি করে ভারতে তাদের আস্থা দেখিয়েছে।
সুতরাং, অতিমারীর সময় ভারত কীভাবে তা সামলাবে, সেই বিষয়ে কৌতূহল ছিল। আমরা স্বচ্ছ এবং সমন্বিত ভাবে অতিমারীর সঙ্গে লড়েছি। দরিদ্র এবং দুর্বলদের যত্ন নিয়েছি। ডিজিটাল পাবলিক পরিকাঠামো সরাসরি তাঁদের কাছে পৌঁছতে সাহায্য করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিষেধক প্রদান করা হয়েছে, ২০০ কোটি ডোজ বিনামূল্যে প্রদান করেছে ভারত। আমরা ১৫০টিরও বেশি দেশে প্রতিষেধক এবং ওষুধ পাঠিয়েছি। মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিই যে কাজ করছে তা প্রাক-মহামারী, মহামারীকালীন এবং তৎপরবর্তী কালেও, এটা স্বীকৃতি পেয়েছে। ভারতীয় অর্থনীতি দীর্ঘকাল ধরে একটি সারা বিশ্বে উজ্জ্বল ছিল। সারা বিশ্ব যখন সংঘাতের বহুমাত্রিক প্রভাবের মুখোমুখি হয়েছিল তখনও তা অব্যাহত ছিল।
আরও পড়ুন– ‘দেশি মটন’ চাষে চার গুণ লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা! কীভাবে এই ব্যবসা করবেন জেনে নিন
এদিকে, গত ৯ বছরে, বিশ্বও প্রত্যক্ষ করেছে যে ভারত বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে একত্রিত করতে আগ্রহী। যেমন আন্তর্জাতিক সৌর জোট এবং দুর্যোগ প্রতিরোধী পরিকাঠামোর জন্য জোট। অতএব, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে ভারতবর্ষের কথা, কাজ এবং দৃষ্টিভঙ্গি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং কার্যকরী হিসাবে ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে। এমন এক সময়ে আমাদের দেশের সামর্থ্যের উপর বিশ্বের আস্থা ছিল অভূতপূর্ব, ঠিক তখনই আমরা জি২০ সভাপতিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি।
সুতরাং, যখন আমরা জি২০-এর জন্য আমাদের আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করি, তখন তাকে সকলেই স্বাগত জানায়। কারণ সকলেই জানতেন, আমরা বৈশ্বিক সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজতে আমাদের সক্রিয় এবং ইতিবাচক মনোভঙ্গির পরিচয়ই দেব। জি২০ সভাপতি হিসেবে, আমরা একটি জৈব-জ্বালানি জোটও করতে চলেছি যা দেশগুলিকে তাদের শক্তির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে। এটি গ্রহ-বান্ধব অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।
যখন সারা বিশ্বের নেতারা আমার সঙ্গে দেখা করেন, তাঁদের মধ্যে একটা ইতিবাচকতা তৈরি হয়। আর সেটা হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৪০ কোটি ভারতীয়দের প্রচেষ্টার কারণে। তাঁরা এও নিশ্চিত, ভারত অনেক কিছু দিতে পারে, পৃথিবীর ভবিষ্যত গঠনে তাদের বৃহত্তর ভূমিকা থাকবে। জি২০ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমাদের কাজের প্রতি তাদের সমর্থনেও এটি প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি জি ২০-তে ভারতের সভাপতিত্বকে ‘পিপলস প্রেসিডেন্সি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জি ২০ ইভেন্টগুলি দু’একটি শহরে সীমাবদ্ধ না করে, সারা দেশে আয়োজন করা হয়েছে। জি ২০ গণতান্ত্রিক করার অভিনব ধারণা সম্পর্কে আপনার কী সিদ্ধান্ত?
উত্তর: গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই সকলে আমার জীবন সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার আগে বহু দশক আমি অরাজনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই সাংগঠনিক ভূমিকা পালন করেছি। ফলে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ঘুরে দেখার ও সেখানে থাকার সুযোগে পেয়েছি। আমার মতো একজন স্বভাব-অনুসন্ধিৎসু মানুষের বিভিন্ন অঞ্চল, সেখানকার মানুষ, সংস্কৃতি, খাদ্য এবং অন্য দিকগুলি, তাঁদের জীবনের চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে শেখার আগ্রহ ছিল। এটি দুর্দান্ত শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা। আমি আমাদের বিশাল জাতির বৈচিত্র্য দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য আমি সারা দেশে লক্ষ্য করেছি। প্রতিটি অঞ্চল এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে দৃঢ়তা আছে, তাঁরা যেকোনও কিছুই ‘করতে দেখাতে পারেন’। তাঁরা দুর্দান্ত পারদর্শিতা এবং দক্ষতার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁদের অগাধ আত্মবিশ্বাস।
ঐতিহাসিক ভাবে, চেয়েছিলাম ক্ষমতার বৃত্তে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সভা আয়োজনের জন্য দিল্লি, বিশেষ করে বিজ্ঞান ভবনের বাইরে চিন্তা করতে। সুবিধার কারণে বা জনগণের আস্থার অভাবের কারণে হতে পারে।
শুধু তাই নয়, আমরা এটাও দেখেছি যে বিদেশি নেতৃবৃন্দের সফরগুলি কীভাবে প্রধানত জাতীয় রাজধানী বা অন্য কয়েকটি জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে। জনগণের সক্ষমতা এবং আমাদের দেশের বিস্ময়কর বৈচিত্র্য প্রত্যক্ষ করার পরে, আমি একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছি। আমাদের সরকার প্রথম দিন থেকেই পদ্ধতির পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছে।
আমি সারা দেশে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বেশ কয়েকটি কার্যক্রমের আয়োজন করেছি।
যেমন ধরা যাক, তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বেঙ্গালুরুতে এসেছিলেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বারাণসী সফর করেছিলেন। পর্তুগিজ প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডি সুসা গোয়া ও মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন। শান্তিনিকেতন সফরে গিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ চণ্ডীগড় সফর করেন।
দিল্লির বাইরে বিভিন্ন জায়গায় বহু বৈশ্বিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত হয় গ্লোবাল আঁত্রেপ্রেনারশিপ সামিট। ভারত গোয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন এবং জয়পুরে ইন্ডিয়া-প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ কর্পোরেশনের ফোরাম সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। এই সব উদাহরণ থেকেই বোঝা যাবে, প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে বেরিয়ে একটি দুর্দান্ত পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য আরেকটি বিষয় হল, আমি যে উদাহরণগুলি উদ্ধৃত করেছি তার মধ্যে অনেকগুলি সেইসব রাজ্যে যেগুলিতে তখন নন-এনডিএ সরকার ছিল৷ এটি জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে সমবায় ফেডারেলিজম এবং দ্বিদলীয়তার প্রতি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাসেরও একটি প্রমাণ।
এই একই চেতনা আপনি আমাদের জি ২০ সভাপতিত্বের ক্ষেত্রেও দেখতে পাচ্ছেন।
আমাদের জি ২০ বৈঠকের শেষ দিকে, ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৬০টি শহরে ২২০টিরও বেশি বৈঠক আয়োজন করা হবে৷ প্রায় ১২৫টি দেশ, এক লক্ষেরও বেশি অংশগ্রহণকারী ভারত সফর করবেন। আমাদের দেশে দেড় কোটিরও বেশি মানুষ এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিভিন্ন দিকের উন্মোচন ঘটবে। এত বৃহৎ সভা করা এবং বিদেশি প্রতিনিধিদের আপ্যায়ন করার মধ্যে পরিকাঠামো, রসদ, যোগাযোগ দক্ষতা, আতিথেয়তা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে দুর্দান্ত সক্ষমতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হচ্ছে। জি ২০ সভাপতিত্বের গণতন্ত্রীকরণ হল দেশের বিভিন্ন শহরের জনগণের, বিশেষ করে তরুণদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমাদের বিনিয়োগ। এটাকে বলা যেতেই পারে ‘জন ভাগিদারী’—আমাদের আরও একটি নীতি। আমরা বিশ্বাস করি মানুষের যোগদানের মধ্যে দিয়েই যেকোনও বিষয়ে সাফল্য লাভ করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: ১৯৯৯ সালে এশিয়ার আর্থিক সঙ্কটের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছিল জি ২০। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আর তাদের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে উপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে না, আপনি কি মনে করেন যে জি২০ তার আদেশবিধি পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে?
উত্তর: ভারত এখন জি২০ সভাপতি। এই পরিস্থিতিতে বছরের পর বছর ধরে জি২০-এর যাত্রার মূল্যায়ন করা আমার পক্ষে এখন ঠিক হবে না।
তবে আমার মনে হয়, এটা খুব ভাল প্রশ্ন, অনেক অনুশীলনের পর এই উত্তরে আসা যেতে পারে। জি২০ প্রতিষ্ঠার পঁচিশ বছর হতে চলেছে। এই সময় জি২০-র উদ্দেশ্য স্থির করা এবং তা কতদূর অর্জন করা গিয়েছে, সেবিষয়ে মূল্যায়ন করার ভাল সুযোগ দেয়। এই ধরনের আত্মদর্শন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন। ৭৫ বছর বয়সে জাতিসঙ্ঘ যদি এমন একটি মহড়ার আয়োজন করত, ভাল হত।
জি ২০-এ ফিরে আসা যাক। জি ২০-এর বাইরের দেশগুলির মতামত জানাও প্রয়োজন। বিশেষত ২৫ বছর পূর্তির সময় গ্লোবাল সাউথকে আনা প্রয়োজন। এই ধরনের মতামত পরবর্তী ২৫ বছরের জন্য খুবই মূল্যবান।
আমি উল্লেখ করতে চাই যে অনেক দেশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সিভিল সোসাইটি রয়েছে যারা ক্রমাগত জি২০ –এর সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেক রকম তথ্য দিয়ে থাকে, অনেক প্রত্যাশার কথাও জানায়।প্রত্যাশা সেখানেই তৈরি হয় যেখানে প্রাপ্তির আশা থাকে, যেখানে প্রাপ্তি ঘটে।
আরও পড়ুন-এক সময় ছিল হিরে ব্যবসার বিশাল সাম্রাজ্য; এখন নীরব মোদির অ্যাকাউন্টে রয়েছে কত টাকা?
ভারতও জি২০ সভাপতি হওয়ার আগে থেকেই এই সম্মেলনে সক্রিয়।সন্ত্রাসবাদ থেকে কালো টাকা, সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিস্থাপকতা থেকে জলবায়ু-সচেতনতা বৃদ্ধি পর্যন্ত, আমরা বছরের পর বছর আলোচনা এবং কার্যক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছি। জি২০-তে উত্থাপিত হওয়ার পর এই বিষয়গুলিতে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার ক্ষেত্রেও প্রশংসনীয় উন্নয়ন হয়েছে।যদিও সর্বদা আরও উন্নতির সুযোগ থাকে। যেমন গ্লোবাল সাউথের বৃহত্তর সম্পৃক্ততা, এবং আফ্রিকার বড় ভূমিকা রয়েছে। জি ২০ সভাপতিত্ব করার সময় ভারত এইসব ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করছে।
প্রশ্ন: একদিকে, কথা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীগুলির মধ্যে বিশ্ব-ব্যবস্থার বিভাজন সম্পর্কে, অন্যদিকে, ভারত বহু মেরু বিশ্ব এবং বহু মেরু এশিয়ার পক্ষে কথা বলে আসছে। কীভাবে ভারত জি ২০ দেশগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং এমনকী বিচ্ছিন্ন স্বার্থের সমন্বয় করবে, কী মনে করেন?
উত্তর: আমরা একটি পরস্পর সংযুক্ত এবং পরস্পর নির্ভরশীল বিশ্বে বাস করি। প্রযুক্তির প্রভাব সীমান্ত ছাড়িয়ে গিয়েছে।
একই সঙ্গে এটাও বাস্তব যে, প্রতিটি দেশের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। সুতরাং, অভিন্ন লক্ষ্যে একমত হওয়ার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা চালাতে হবে। আলাপ আলোচনার জন্যই তো বিভিন্ন সংগঠন, সম্মেলন।
নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা বহুমুখী। প্রতিটি দেশ কয়েকটি বিষয়ে অন্য দেশের সঙ্গে একমত এবং কোথাও দ্বিমত পোষণ করে। এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে, তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করা হয়। ভারতও তাই করছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তারা কেউ কেউ হয়তো বিরুদ্ধ মত পোষণ করে। তবে একটি সাধারণ বিষয় হল এই সমস্ত দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক দৃঢ়।
বর্তমানে প্রাকৃতিক সম্পদ ও অবকাঠামোর উপর চাপ বাড়ছে। এমন সময়ে, সারা বিশ্বকে ‘মাইট ইজ রাইট’ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দৃঢ় ভাবে দাঁড়াতে হবে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারই সমৃদ্ধির একমাত্র পথ।
এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের একটি সম্পদ রয়েছে যা সম্ভবত অন্য যেকোনও সম্পদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ—তা হল, মানব সম্পদ, যা অত্যন্ত দক্ষ এবং প্রতিভাবান। আমাদের জনসংখ্যা, বিশেষত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যুব জনসংখ্যা, পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক তুলছে ভারতকে। এই কারণেই বিশ্বের দেশগুলি অগ্রগতির সাধনায় আমাদের অংশীদার হতে চাইছে। সারা বিশ্বের সমস্ত দেশের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখতে, আমি ভারতীয় প্রবাসীদের ভূমিকারও প্রশংসা করতে চাই। ভারত এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংযোগ হিসাবে, তাঁরা ভারতের বিদেশ নীতি প্রচারে একটি প্রভাবশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
প্রশ্ন: ভারত জি ২০-তে অগ্রাধিকার হিসাবে সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতার দৃঢ় প্রবক্তা, যাতে আমাদের একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা থাকে। আপনি কি পরিমার্জিত বহুপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারেন?
উত্তর: যেসব প্রতিষ্ঠান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের সংস্কার বা পরিমার্জন করতে পারে না তারা ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নিতে পারে না। এই ক্ষমতা ছাড়া, তারা কোনও বাস্তব প্রভাব তৈরি করতে পারে না এবং অপ্রাসঙ্গিক বিতর্ক কেন্দ্র হিসাবে শেষ হতে পারে।
তাছাড়া, যেসমস্ত দেশ বিশ্বব্যাপী জারি করা আদেশ লঙ্ঘন করে বা আরও খারাপ কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে এই সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যখন কোনও পদক্ষেপ করতে পারে না, বা নিজেই ওই দেশ বা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা অপহৃত হয়ে যায়, তখন তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে যায়। সংস্কার করা হলে এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ধারাবাহিকতা, সমতা এবং মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা হলে এই সব প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্য বহুপাক্ষিকতা বজায় থাকে।
এ তো গেল প্রতিষ্ঠানের কথা, কিন্তু এর বাইরেও, পরিমার্জিত বহুপাক্ষিকতাকে ব্যক্তি, সমাজ, সংস্কৃতি এবং সভ্যতার শক্তিতে আবিষ্ট করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্র ছাড়িয়ে যাওয়ার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। এটি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণের মাধ্যমে করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শুধু এক সরকার থেকে অন্য সরকারের সম্পর্ক, যোগাযোগই একমাত্র মাধ্যম নয়। বরং বাণিজ্য ও পর্যটন, খেলাধুলা ও বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও বাণিজ্য এবং মেধা ও প্রযুক্তির গতিশীলতার মতো উপায়ে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তাতে বিভিন্ন জাতি, তাদের আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সত্যিকারের বোঝাপড়া তৈরি হবে।
আমাদের বিশ্বের আন্তঃসম্পর্কিত প্রকৃতি আজ শান্তি ও অগ্রগতির শক্তি হয়ে উঠতে পারে যদি আমরা একটি জনকেন্দ্রিক নীতিতে মনোনিবেশ করি।
প্রশ্ন: আপনার কূটনীতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল এই যে, ভারত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, এটি বিরল ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত, আপনি সকলের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করেছেন। আপনি কি মনে করেন যে আজ ভারত জি ২০-এ গ্লোবাল সাউথের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি?
উত্তর: নানা দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নয়নের পিছনে অনেকগুলি বিষয় কাজ করে। বহু দশকের অস্থিতিশীলতার পরে, ২০১৪ সালে, ভারতের জনগণ একটি স্থিতিশীল সরকারকে ভোট দিয়েছিল, যার স্পষ্ট এজেন্ডা ছিল উন্নয়ন।
এই সংস্কারগুলি ভারতকে কেবল তার অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জনকল্যাণ মূলক কাজকে শক্তিশালী করতেই নয় বরং দেশটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সমাধানের অংশ হওয়ার দিকেও এগিয়ে দিয়েছে। মহাকাশ হোক বা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি হোক বা বাণিজ্য, অর্থনীতি হোক বা বাস্তুবিদ্যা, ভারতবর্ষের কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
যখনই কোনও দেশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তারা জানে যে তারা একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ভারতের অগ্রগতিতে তারাও অংশীদার হতে চাইছে আবার নিজেদের স্বার্থের কথাও ভাবছে। ভারত এমন ছিল যার প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক অবদান ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই, আমাদের পদচিহ্ন বিশ্বের সমস্ত অঞ্চলে এবং এমনকী দেশগুলিতেও বৃদ্ধি পেয়েছিল। এরা একে অপরকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দেখে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ।
শুধু তাই নয়, যখন গ্লোবাল সাউথের কথা ওঠেই তখন বলা যায়, এগুলি এমন দেশ যাদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। আমরাও উন্নয়নশীল বিশ্বের অংশ। তাই আমরা তাদের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারি। জি ২০-সহ প্রতিটি মঞ্চে ভারত গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছে।
জি ২০-এর সভাপতিত্ব করার পাশাপাশি আমরা ‘ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এরও আয়োজন করেছিলাম। এতে স্পষ্ট হয়েছিল যে আমরা যারা বিশ্বব্যাপী আলোচনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রাধিকার থেকে বাদ পড়েছি তাদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি রয়েছে জোরালো।
আমরা বছরের পর বছর ধরে আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়েছি। এমনকি জি ২০-তেও আমরা আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে গতি দিয়েছি।
আমরা এমন একটি জাতি যারা বিশ্বকে এক পরিবার হিসেবে দেখে। আমাদের জি ২০ নীতিবাক্য নিজেই এটি বলে। কোনও পরিবারে, প্রতিটি সদস্যের দাবি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলি আমরা।
প্রশ্ন: এটি এল নিনো বছর, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বন্যা এবং দাবানল আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। উন্নত দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক কথা বলেলেও তারা ২০২০ সালের মধ্যে তাদের ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ প্রদানের মূল জলবায়ু প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে না। উল্টোদিকে, যুদ্ধের জন্য অর্থ খরচ হচ্ছে। জি ২০-এর একটি অংশ ধনী দেশগুলি, গ্লোবাল সাউথের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একজন নেতা হিসেবে, তাদের প্রতি আপনার বার্তা কী?
উত্তর: আমি মনে করি, অগ্রগতির পথটি সুযোগ, কৌশল এবং সংবেদনশীলতার পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত, এটা বুঝতে হবে। প্রথমত বলি, কীভাবে সুযোগের পরিবর্তন প্রয়োজন। গোটা বিশ্বে উন্নত বা উন্নয়নশীল যেমন দেশই হোক না কেন, মেনে নিতে হবে যে জলবায়ু পরিবর্তন বাস্তব। সারা বিশ্ব তা ভাগ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আঞ্চলিক বা স্থানীয় নয়, বৈশ্বিক।
হ্যাঁ, কোথায় কেমন প্রভাব পড়ছে তা হয়তো আঞ্চলিক ভাবে উপলব্ধি করা যবে। হ্যাঁ, গ্লোবাল সাউথ অসম ভাবে প্রভাবিত হবে।
কিন্তু সারা বিশ্বে এক প্রভাব পড়বে একটি গভীর ভাবে। নীলগ্রহের বিশাল জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করলে তা স্বাভাবিক ভাবেই বাকি বিশ্বের উপরও প্রভাব ফেলবে। অতএব, সমাধান বিশ্বব্যাপী হতে হবে।
দ্বিতীয় যে ক্ষেত্রটিতে পরিবর্তন প্রয়োজন তা হল কৌশল। বিধিনিষেধ, সমালোচনা এবং দোষারোপের নিয়ে ব্যস্ত থাকলে কোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। বিশেষত যখন আমরা একসঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চাইছি। সুতরাং, শক্তির স্থানান্তর, কৃষি এবং জীবনযাত্রার রূপান্তরের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপগুলির উপর জোর দিতে হবে।
তৃতীয় যে ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রয়োজন তা হল সংবেদনশীলতা। বুঝতে হবে যে দরিদ্রদের সাহায্যের প্রয়োজন, আবার এই গ্রহেরও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথ, জলবায়ু সঙ্কটের একেবারে শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। তারা প্রকৃতি রক্ষায় যা যা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত। কিন্তু তাদের দেশের দরিদ্র মানুষের কিছু সাহায্য প্রয়োজন, সারা বিশ্বকে সেই সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। সুতরাং, সংবেদনশীল এবং সহানুভূতিশীল পদ্ধতি প্রয়োজন, যা সম্পদ সংগ্রহ এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের উপর নির্ভর করে। এটি বিস্ময়কর কাজ করতে পারে।
প্রশ্ন: পরিচ্ছন্ন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির পক্ষে দৃঢ় ভাবে সওয়াল করেন আপনি। যদিও কিছু শক্তি-সমৃদ্ধ দেশের তরফে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং জীবাশ্ম জ্বালানীর পর্যায়ক্রমিক হ্রাসের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়েছে। তবু ভারত অবিচল। সম্মিলিতভাবে এবং স্বতন্ত্রভাবে জি২০ সদস্যদের কী করা উচিত, যাতে তারা পরিচ্ছন্ন শক্তি স্থাপনে নিবেদিত বলে প্রমাণ করা যায়?
উত্তর: জলবায়ু সঙ্কটের প্রতিক্রিয়ায় আমি এর আগেই পরিষ্কার বলেছি বিধিনিষেধমূলক পদ্ধতির পরিবর্তে গঠনমূলক পদ্ধতি গ্রহণের কথা। গত ৯ বছর ধরে ভারত তার উদাহরণ দিয়ে আসছে।
আসুন প্রথমে আমরা ঘরোয়া ভাবে যে পদক্ষেপ করেছি তার কথা বলি। প্যারিস সভায় বলেছিলাম যে আমরা নিশ্চিত করব যাতে আমাদের ৪০ শতাংশ শক্তি ২০৩০ সালের মধ্যে অ-জীবাশ্ম জ্বালানি উৎস থেকে আসে। ৯ বছর আগে ২০২১ সালেই এটি অর্জন করেছি। তবে তা আমাদের শক্তি খরচ কমিয়ে নয় বরং আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে। সৌর শক্তি ইনস্টল করার ক্ষমতা ২০ গুণ বেড়েছে। বায়ু শক্তির দিক থেকে আমরা বিশ্বের শীর্ষ চারটি দেশের মধ্যে আছি।
সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে। বৃহত্তর উদ্ভাবনের সাড়াও মিলছে। নাগরিকেরাও এই বিষয়ে উৎসাহী। একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক এড়াতে নাগরিকদের আচরণ বদলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নিরাপদ নিষ্কাশন এবং পরিচ্ছন্নতা এখন সামাজিক নিয়ম। সরকার জৈব চাষকে জনপ্রিয় করার কাজ করছে, কৃষকরাও উৎসাহী।
বাজরা উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা, আমাদের শ্রীঅন্ন, এখন আমাদের জাতীয় আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি গণআন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। সুতরাং, ভারতে এমন অনেক কিছু ঘটছে যা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই, আমরা আমাদের গ্রহের যত্ন নেওয়ার জন্য দেশগুলিকে একত্রিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়েছি।
আন্তর্জাতিক সৌর জোট ‘এক বিশ্ব এক সূর্য এক গ্রিড’ মন্ত্র নিয়ে বিশ্বের কাছে পৌঁছেছে। এটি বিশ্বব্যাপী অনুরণিত হয়েছে এবং ১০০ টিরও বেশি দেশ সদস্য। এটি অনেক সৌরালোক-সমৃদ্ধ দেশে আমাদের সাফল্যের গল্প জানাতে সাহায্য করবে।
ভারত মিশন লাইফ-এর উদ্যোগ পরিবেশের জন্য জীবনধারা বদলের লক্ষ্যে কাজ করছে। আমাদের সাংস্কৃতিক নীতি এবং ঐতিহ্যগত জীবনধারার পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, সেখানে সংযম এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার বার্তা ছিল। এই নীতিগুলিই এখন মিশন লাইফ-এর সঙ্গে সারা বিশ্বে প্রচারিত।
এছাড়া, আর একটি উপায় আমি একাধিক ফোরামে ব্যাখ্যা করেছি। স্বাস্থ্য-সচেতন ব্যক্তিরা যেমন তাদের জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন সিদ্ধান্তটি কীভাবে দীর্ঘমেয়াদে তাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করবে তার উপর ভিত্তি করে, গ্রহ-সচেতন ব্যক্তিদেরও তা প্রয়োজন।
জীবনচর্যাগত প্রতিটি সিদ্ধান্ত, যদি গ্রহের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে করা হয়, তাহলে তা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উপকৃত হবে। এই কারণেই আমি বলেছি আমাদের অবশ্যই বিবেকহীন এবং ধ্বংসাত্মক ভোগবাসনা থেকে মননশীল এবং সুচিন্তিত ব্যবহারের কথা ভাবতে হবে। আপনি যদি আমার সমস্ত কথার ধারাবাহিকতা পর্যবেক্ষণ করেন তবে বোঝা যাবে, সম্পূর্ণরূপে দায়িত্ব নেওয়া এবং কার্যকর করার উপরই লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। দেশ হোক বা জনসমষ্টি, জলবায়ু সঙ্কটের কথা ভাবতে গেলে এমন কিছু করতে হবে যা ফারাক তৈরি করে দেবে।
প্রশ্ন: যখন বিশ্বে আন্তঃসংযোগ বাড়ছে, আমরা সরবরাহ ক্ষেত্রগুলি সুরক্ষিত করার পাশাপাশি তাদের বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে বৃহত্তর জাতীয় স্বায়ত্তশাসনের দিকে একটি প্রবণতাও দেখতে পাচ্ছি। আপনি কি মনে করেন যে ভূ-রাজনীতি এখন বৈশ্বিক কর্পোরেশনগুলির জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি নির্ধারক ফ্যাক্টর, এবং মসৃণ বিশ্ব বাণিজ্যের সুবিধার্থে জি ২০ ছাতার অধীনে ভারত কী করছে?
উত্তর: ভূ-রাজনীতি এবং সংশ্লিষ্ট কারণগুলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এই জাতীয় কারণগুলির দ্বারা চালিত একতরফা মনোভাব এবং বিচ্ছিন্নতার উদাহরণ সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত করতে এবং জীবিকাকে প্রভাবিত করে থাকে। বিশেষত সমালোচনামূলক খাতে।
এই কারণেই, আজ নির্ভরযোগ্য বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খল তৈরিতে বিনিয়োগ গুরুত্ব পাচ্ছে।
একই সময়ে, ভূ-রাজনৈতিক কারণই একমাত্র নয়। দেশগুলিকে স্থিতিশীল নীতি তৈরি করতে হবে যা বাণিজ্য, শিল্প এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে। তার জি২০ আয়োজক হিসেবে ভারত বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং নিয়ম-ভিত্তিক বিশ্ব বাণিজ্যের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
আমরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমএসএমইগুলিকে যুক্ত করে নিতে চাইছি, এক্ষেত্রে বাধা অপসারণের জন্য বিশ্বব্যাপী আলোচনাও করেছি। এমন কাঠামো তৈরি করতে আমরা সক্ষম হয়েছি যা বিশ্বব্যাপী মূল্য শৃঙ্খলগুলিকে ভবিষ্যতের জন্য স্থিতিস্থাপক করে তুলতে পারে। ডব্লিউটিও সংস্কারের বিষয়ে ঐক্যমত্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিতে পারে।
প্রশ্ন: কিছু ধনী ও শক্তিশালী দেশের একতরফা সিদ্ধান্ত এবং ‘বেগার-দাই-নেইবর’ বাণিজ্যনীতির ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নষ্ট হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি যেমন হচ্ছে তেমনই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রাসঙ্গিকতা হ্রাস পাচ্ছে। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। আমাদের যদি দরিদ্রতম দেশগুলিতে উন্নয়নের জন্য ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্য নীতি রাখতে হয় তবে জি ২০-তে এগিয়ে যাওয়ার উপায় কী?
উত্তর: জি ২০-এর আয়োজক হিসেবে ভারত এমন আলোচ্যসূচিকে সমর্থন করছে যা স্থিতিশীল, স্বচ্ছ এবং ন্যায্য-বাণিজ্য ব্যবস্থা তৈরি করে, যা সকলের জন্য উপকারী। ডব্লুটিও-এর মূল অংশে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার অপরিহার্য ভূমিকা স্বীকার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ডব্লুটিও-র নিয়মগুলিকে শক্তিশালী করা, বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধার এবং নতুন পারস্পরিক উপকারী চুক্তিগুলি শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের দিকে কাজ করা হবে।
ভারতও উন্নয়নশীল বিশ্বের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, যার মধ্যে আফ্রিকান ইউনিয়নের দেশগুলির মতো জি ২০-তে প্রতিনিধিত্ব করে না এমন দেশগুলির স্বার্থও রয়েছে৷
সম্ভবত জি২০-এর ইতিহাসে এই প্রথমবার Troika-তে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং ব্রাজিল। এই বিশেষ সংগঠন উন্নয়নশীল বিশ্বের দাবি জোরালো করতে পারে। বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনীতির উত্তেজনা বৃদ্ধির সময়ে দাঁড়িয়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ। ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্য নীতি অবশ্যই জি ২০-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদে সমগ্র বিশ্বকে সরাসরি উপকৃত করে।
প্রশ্ন: বেশ কয়েকটি নিম্ন-আয়ের এবং মধ্যম আয়ের দেশের জন্য ঋণের সঙ্কট বেড়েছে। এই দরিদ্র দেশগুলিকে ঋণের যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করার জন্য ঋণদাতা জি ২০ রাষ্ট্রগুলির আরও কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: ২০২৩ সালে ভারতের জি২০ সভাপতি হিসেবে নিম্ন-ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে ঋণ সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলায় প্রচুর জোর দিয়েছে।
আমরা এই সঙ্কটে গ্লোবাল সাউথের স্বার্থের জন্য আন্তরিক ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি। আমরা ঋণগ্রস্ত দেশগুলির জন্য সমন্বিত ঋণ-সুরাহার জন্য বহুপাক্ষিক সমন্বয় জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করছি।
জি২০-তে অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যঙ্কের গভর্নরদের একটি বৈঠকে বলা হয়েছিল, অভিন্ন কাঠামোর আওতায় এবং কমন ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে উভয় দেশের ঋণ সুরাহার ক্ষেত্রে ভাল অগ্রগতি হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ঋণ পুনর্গঠন প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার জন্য, গ্লোবাল সভরেন ডেট রাউন্ডটেবল (GSDR) আয়োজন করা হয়েছিল বছরের শুরুতে। এটি IMF, বিশ্বব্যাঙ্ক এবং সভাপতির যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়।
যাই হোক, এই সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার বাইরে একটি বৃহত্তর আন্দোলন তৈরি হচ্ছে। তথ্য সমৃদ্ধ এই যুগে এক দেশের ঋণ সঙ্কটের খবর অন্য অনেক দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানুষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছে এবং সচেতনতা ছড়াচ্ছে। জনগণের সমর্থনে তাদের নিজ দেশে একই ধরনের পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করতে এটি সহায়ক হবে।
আমাদের দেশেও, একাধিক প্ল্যাটফর্মে, আমি আর্থিক ভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন নীতির বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি। এই ধরনের নীতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব শুধু অর্থনীতিকেই নয়, সমাজকেও ধ্বংস করে। দরিদ্রদেরই এজন্য বড় মূল্য দিতে হয়। মানুষ ক্রমশ সচেতন হচ্ছে।
প্রশ্ন: যেভাবে ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরিতে অগ্রগামী হয়েছে ভারত, তা অভূতপূর্ব। UPI বা আধার বা ONDC যাই হোক না কেন, এই পরিকাঠামোর উপরে যে অ্যাপ্লিকেশনগুলি তৈরি করা হচ্ছে তা অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বিশ্বব্যাপী, ভারতের অবদানকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
উত্তর: দীর্ঘকাল ধরে, ভারত তার প্রযুক্তি প্রতিভার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। আজ, প্রযুক্তিগত প্রতিভা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা তাকে পরিচিতি দিচ্ছে, বিশেষত ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারে। আপনি যেমন উল্লেখ করেছেন, গত ৯ বছরে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ এবং প্ল্যাটফর্মগুলি অর্থনীতিতে একটি ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। যাই হোক, ভারতের প্রযুক্তি বিপ্লব শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলেনি বরং গভীর সামাজিক প্রভাবও ফেলেছে।
আমরা আমাদের আলোচনায় আগে যে মানবকেন্দ্রিক মডেলের কথা বলছিলাম তা আমরা যেভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি তাতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। আমাদের জন্য, প্রযুক্তি হল মানুষের ক্ষমতায়ন, যাঁরা পাননি তাঁদের কাছে পৌঁছানোর এবং বৃদ্ধি ও কল্যাণকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার একটি মাধ্যম।
আজ, জন ধন – আধার – মোবাইল (জেএএম) এই তিনের কারণে, ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র এবং সবচেয়ে দুর্বলরাও সক্ষম বোধ করছেন। কেউ তাঁদের অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। অতিমারী চলাকালীন যেভাবে প্রযুক্তি আমাদের কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে তা অবিস্মরণীয়।
আজ, যখন বিদেশি প্রতিনিধিরা ভারতে আসেন, তখন রাস্তার বিক্রেতারা গ্রাহকদের UPI-এর মাধ্যমে একটি QR কোডের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করতে বলছেন দেখে তাঁরা বিস্মিত হন। আশ্চর্যের কিছু নেই, বিশ্বে যে রিয়েল-টাইম ডিজিটাল লেনদেন হয়েছিল তার প্রায় অর্ধেকই ভারতে! এমনকী অন্য অনেক দেশ UPI-এর সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী। আসলে ভারতীয়রা ভারতের বাইরেও UPI-এর মাধ্যমে অর্থ প্রদানের বিকল্প খুঁজে পেতে চাইছেন।
আজ, লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সরকারি ই-মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে পাবলিক প্রকিউরমেন্টের একটি অংশ হয়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন। অতিমারী চলাকালীন, COWIN, আমাদের বিনামূল্যে ২০০ কোটির বেশি ভ্যাকসিন ডোজ পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছিল। আমরা পুরো বিশ্বের ব্যবহারের জন্য প্ল্যাটফর্মটিকে ওপেন সোর্স বানিয়েছি।
ONDC হল একটি ভবিষ্যমূলক উদ্যোগ যা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাবে।
SWAMITVA স্কিমের মাধ্যমে ড্রোনগুলি মানুষকে সম্পত্তির অধিকার দিয়ে ক্ষমতায়ন করে। এই ধরনের আরও অনেক বিষয় রয়েছে যা আমরা অর্জন করেছি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এটি বিশ্বে কী প্রভাব ফেলছে।
ভারতকে দেখে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলি উৎসাহিত বোধ করছে। খুব দ্রুত দরিদ্রদের ক্ষমতায়নের জন্য প্রযুক্তির উপর নির্ভর করার কথা ভাবা হচ্ছে, কোনও রকম ফাঁক-ফোঁকর ছাড়াই। এতে তাদের বৃদ্ধিও গতি পাবে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতার স্বীকৃত পাওয়ার পরে, ভারতের ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গিকে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্লাটফর্মে স্বাগত জানানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের জি২০ আয়োজনের সময়, ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচর পরিচালনার জন্য একটি ডিজিটাল কাঠামো গৃহীত হয়েছে অর্থমন্ত্রীদের দ্বারা। এটি ‘ওয়ান ফিউচার অ্যালায়েন্স’-এর ভিত্তি স্থাপন করেছে।
তাছাড়া, ক্রিপ্টো হোক বা সাইবার সন্ত্রাস— প্রযুক্তি-সম্পর্কিত সমস্যাগুলি বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার জন্য ভারতের আহ্বানকে বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে দেখা হচ্ছে। কারণ আমরা এমন একটি জাতি যাদের উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি গ্রহণের গভীর অভিজ্ঞতা রয়েছে গণ পরিসরে।
প্রশ্ন: ভারত-সহ বেশিরভাগ দেশের জন্য মুদ্রাস্ফীতি একটি বড় সমস্যা। কোভিড এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সময় সহজ আর্থিক নীতিগুলি মুদ্রাস্ফীতিকে সবচেয়ে বড় সমস্যা করে তুলেছে সারা বিশ্বে। ধনী জি ২০ দেশগুলি কি এমন প্রতিক্রিয়া দেবে যাতে এখন বা ভবিষ্যতে উন্নয়নশীল দেশগুলি তাদের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা না বহন করে?
উত্তর: গোটা বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি এখন মূল সমস্যা। প্রথমে অতিমারী এবং তারপরে সংঘাত, মুদ্রাস্ফীতিকে গতি দিয়েছে। ফলস্বরূপ, উন্নত বা উন্নয়নশীল সমস্ত দেশের অর্থনীতিতেই উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রয়োজন।
জি ২০ অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নরদের একটি বৈঠক হয়েছিল। তারা স্বীকার করেছে যে প্রতিটি দেশের মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় গৃহীত নীতিগুলি যাতে অন্য দেশে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির নীতিগত অবস্থান সময়োপযোগী হতে হবে। যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
আমরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছি। প্রতিকূলতা এবং বৈশ্বিক গতিশীলতার মধ্যেও, ভারতের মুদ্রাস্ফীতি ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী গড় মুদ্রাস্ফীতির হারের তুলনায় দুই শতাংশ কম ছিল। তবে আত্মসন্তুষ্টির কোনও কারণ নেই। জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। সম্প্রতি রাখি বন্ধনে উপলক্ষে কীভাবে আমরা সমস্ত গ্রাহকদের জন্য এলপিজির দাম কমিয়েছি।
প্রশ্ন: ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০২৭ সালে আমরা তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারি। বাকি বিশ্বের জন্য এর প্রভাব কী?
উত্তর: ভারত পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশ যেভাবে এই সাফল্য পেয়েছে তা গর্ব করার মতো। এই অর্জনে কৃতিত্বের কারণ হল এখানে এমন একটি সরকার রয়েছে যা জনগণের বিশ্বস্ত। তাই সরকারও জনগণের ক্ষমতার উপর আস্থা রাখে।
জনগণ আমাদের ওপর অভূতপূর্ব আস্থা রেখেছে এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্য ও সম্মানের। তারা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত দিয়েছে একবার নয়, দু’বার। প্রথমবার জনমত গিয়েছিল প্রতিশ্রুতির পক্ষে। দ্বিতীয়বার কার্যকারিতা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার পক্ষে। এই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে অন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীর কাঠামোগত সংস্কার দেখা যেতে পারে। অর্থনীতি, শিক্ষা, সামাজিক ক্ষমতায়ন, কল্যাণকর কাজ, অবকাঠামো নির্মাণে সংস্কার করা হয়েছে।
তার ফলেই ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বছরের পর বছর রেকর্ড ভাঙছে, পরিষেবা এবং পণ্য উভয় ক্ষেত্রেই রফতানির রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে, স্টার্টআপ এবং মোবাইল উৎপাদন বিস্ময়কর কাজ করেছে। পরিকাঠামো নির্মাণে এমন গতি আগে দেখা যায়নি। সবই যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রবৃদ্ধির সুফল শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। একটি ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আমাদের দরিদ্র পরিবারগুলিকে রক্ষা। সরকার তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে সহায়তা করছে। মাত্র পাঁচ বছরে আমাদের ১৩.৫ কোটিরও বেশি নাগরিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছেন, নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণী রূপ পাচ্ছে। সমাজের এই অংশটি আরও বৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা উচিত, নারীরা এই বৃদ্ধির যাত্রার চালিকা শক্তি হিসেবে উঠে এসেছেন। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, উদ্যোক্তা যাই হোক না কেন অনেক উন্নয়ন উদ্যোগ তাদের সামনে আসছে। মহাকাশ থেকে খেলাধুলা, স্টার্ট-আপ থেকে স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী, প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জি ২০-এর সঙ্গে, নারী-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের বার্তা সারা বিশ্বে পৌঁছেছে। দরিদ্র, যুবক, মহিলা এবং কৃষকদের ক্ষমতায়ন থেকে গড়ে ওঠা ক্রমবর্ধমান গতি অবশ্যই অদূর ভবিষ্যতে ভারতকে বিশ্বের শীর্ষ তিনটি অর্থনীতির একটিতে পরিণত করবে।
ভারতের বৃদ্ধি শুধু ভারতীয়দের জন্যই নয়, বিশ্বের জন্যও ভাল। ভারতের বৃদ্ধি হল পরিচ্ছন্ন ও সবুজ। মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে অর্জিত এই বৃদ্ধি অন্য দেশও অনুকরণ করবে। ভারতের বৃদ্ধি গ্লোবাল সাউথের স্বার্থকে আরও সাহায্য করে। ভারতের বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে নির্ভরযোগ্যতা এবং স্থিতিস্থাপকতা আনতে সাহায্য করে। বিশ্ব কল্যাণের জন্য উৎসর্গীকৃত এই বৃদ্ধি।
প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী, আপনার বয়স ৭২ বছর, কিন্তু আপনার শক্তির মাত্রা অনেক অল্প বয়সী মানুষকে লজ্জায় ফেলে দেয়। কী করে সম্ভব?
উত্তর: সারা বিশ্বে অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁরা তাঁদের শক্তি, সময় এবং সম্পদের সম্পূর্ণ ব্যবহার করে একটি বিশেষ লক্ষ্যে। এই ক্ষেত্রে আমি ব্যতিক্রমী নই।
রাজনীতিতে আসার আগে কয়েক দশক আমি তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের মাঝখানে সক্রিয় ভাবে সমাজের কাজ করেছি। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি অনেক গভীর অনুপ্রেরণাদায়ক মানুষের সঙ্গে দেখা করেছি। তাঁরা নিজেদের জীবন কোনও লক্ষ্যের জন্য সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের থেকে শিখেছি।
দ্বিতীয় দিক হল উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং লক্ষ্যের মধ্যে পার্থক্য করতে পারা। যখন কেউ উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে কাজ করেন, তখন যেকোনও উত্থান-পতন তাঁদরে অস্থির করে দিতে পারে। কারণ উচ্চাকাঙ্ক্ষা অবস্থান, ক্ষমতা, স্বাচ্ছন্দ্য ইত্যাদি সঙ্গে যুক্ত।
কিন্তু যখন কেউ কোনও লক্ষ্যে স্থির থেকে কাজ করেন, তখন ব্যক্তিগত ভাবে লাভ করার কিছুই থাকে না। তাই, উত্থান-পতন প্রভাব ফেলে না। কোনও লক্ষ্যে নিবেদিত থাকা অবিরাম আশাবাদ এবং শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলি থেকে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতিও থাকে, যা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে শক্তিকে নিয়োজিত করতে সাহায্য করে।
দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করাই আমার লক্ষ্য। এটিই আমাকে দুর্দান্ত শক্তি দেয়, কারণ আমাদের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবে। আমি আগেও বলেছিলাম, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে আমি একজন সাধারণ মানুষের মতো ভারতের প্রায় প্রতিটি জেলায় গিয়েছি, থেকেছি। কঠিন জীবনযাপনের লক্ষ লক্ষ উদাহরণ খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছি। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি তাঁদের দৃঢ় মনোভাব ও আত্মবিশ্বাস দেখেছি। আমাদের মধ্যে এখনও বিদ্যমান রয়েছে মহান ঐতিহ্য এবং মহত্ত্বের উপাদান।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের দেশে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, বিশ্বকে দেওয়ার মতো আরও অনেক কিছু রয়েছে। আমাদের সমস্ত লোকের প্রয়োজন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা থেকে তারা বিস্ময়কর কাজ করে দেখাতে পারেন। এমন একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করাই আমার লক্ষ্য। এই লক্ষ্যই আমাকে সর্বদা অনুপ্রাণিত রাখে। যখন কেউ কোনও লক্ষ্যে স্থির থাকেন, তখন ব্যক্তিগত স্তরে সুস্থ শরীর ও মন বজায় রাখা প্রয়োজন। তাই শৃঙ্খলা, দৈনন্দিন অভ্যাসের প্রয়োজন হয়। আমিও সেই বিষয়ে যত্নশীল।