বাজারের সাধারণ মোম নয়, ফানুসের ভেতর বসানো হয় প্যারাসিন দিয়ে তৈরি সলতে পাকানো বিশেষ ধরনের মোম। এখনও বংশ-পরম্পরায় এই মোম তৈরি করেন শান্তিপুরের কয়েক ঘর মোমশিল্পী। ভাঙা রাসের দিন নগর পরিক্রমা দেখতে শহরের রাজপথে যে ভিড় উপচে পড়ে, আলো আঁধারির খেলা দেখতে বিগ্রহ বাড়ির রাস উৎসবে সেই ভিড়ে অন্তত তিনগুণ দর্শনার্থী থাকেন। নামে বেলজিয়াম ফানুস হলেও এগুলি একসময় নিয়ে আসা হয়েছিল ফ্রান্স এবং ভেনিস থেকে। এখনও সেখানে এই ফানুস তৈরি হয়। বিগ্রহবাড়ির সদস্যদের কথায়, এখন আর ইউরোপ থেকে বেলজিয়াম ফানুস নিয়ে আসা হয় না। পরিবর্তে জায়গা নিয়েছে শহর কলকাতায় তৈরি কাঁচের অন্যান্য ফানুস। দামে কম হলেও আভিজাত্যে ধারে কাছেও যায় না।
advertisement
রাসের তিনদিন সন্ধ্যার পর থেকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় শহরের মঠবাড়ি ও দীনদয়াল বাড়িকে। রাসের সময় অন্তত শতাধিক বেলজিয়াম কাচের ফানুসে আলোয় আলো হয়ে ওঠে এই বাড়ি। পরিবারের সদস্য সুশান্ত মঠ বলেন, দেখতে অতীব সুন্দর। কিন্তু ফানুসের ভেতর মোমবাতি বসানোর ধরণ একেবারেই সহজ নয়। অসাবধানতা কিংবা ভেতরের জ্বলন্ত মোমবাতি প্রায় এক ইঞ্চি ছোট হয়ে এলেই তাপের কারণে ভেঙে যেতে পারে সেগুলো। এভাবেই ৩০০ বছরের বহু পুরনো ফানুস ভেঙে গিয়েছে এই বাড়িতে। একসময় মঠ বাড়িতে রাসের প্রাঙ্গণে নাকি অন্তত ১৫০ খানা বেলজিয়াম কাঁচের ফানুস ঝোলানো হত।
আরও পড়ুন: লুচির মতো খাজা খেয়েছেন? নাম কী বলুন তো এই খাজার? জানুন
আজ শুধুই যত্নের ওপর টিকে রয়েছে এই প্রথা। জানা গিয়েছে, ফানুসগুলোতে মোমবাতি জ্বালানোর ধরন যেমন আলাদা, তেমনিই মোমবাতি নেভানোর কায়দা। সরু আকৃতির একটি লাঠির মাথায় ন্যাকড়া বেঁধে স্পিরিটে চোবানো হয়। এরপর তাতে আগুন ধরিয়ে ঝুলন্ত ফানুসের ভেতরে থাকা মোমবাতি জ্বালানো হয়। স্থানীয় ভাষায় একে বলে ‘হুঁশ’। ঠিক একইভাবে লাঠির মাথায় ধাতব পাত্র ঝুলিয়ে কাচের ফানুসের উপরে আলতো চেপে ধরলে নিভে যায় মোমবাতি। এই পদ্ধতিকে স্থানীয়রা বলেন ফোঁস। শান্তিপুরের বাসিন্দারা বলছেন, এই শহরে রাসের মাহাত্ম্যের সঙ্গে যেন ওতপ্রোত সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছে অভিজাত আলোকধারা।
Mainak Debnath