বাড়ির সামনে হঠাৎই পুলিশের গাড়ি, প্রাথমিকভাবে তারাও নিমন্ত্রিত এমনটা মনে হলেও সঙ্গে থাকা নদিয়া জেলা চাইল্ড লাইনের টিমের সদস্যদের মুখ থেকে শোনা গেল, “বাল্যবিবাহ আইনত অপরাধ, তাই বিয়ে আপাতত বন্ধ।” হুলুস্থুল পড়ে গেল, সমগ্র অনুষ্ঠান বাড়ির মধ্যে।
আরও পড়ুনঃ অনুব্রতর নয়া নজির! মাধ্যমিকের পর ফের মেধা তালিকার নাম! জেলায় খুশির হাওয়া
advertisement
তবে মজার বিষয় ব্যাপক শোরগোলের মধ্যে হঠাৎই উধাও হয়ে যায় টোপর পরা বর। শান্তিপুর থানা এলাকায় দুটি পৃথক ঘটনায় বরপক্ষ কনেপক্ষ হাজির হয় শান্তিপুর থানায়। দুই কনেও হাজির হয় কিন্তু দুই বরের দেখা মেলেনি। নদিয়া জেলা চাইল্ড লাইনের তিন সদস্য সোলেমান শেখ জানান, দুটি ক্ষেত্রেই বিয়ের পরের দিন খবর পেয়ে শান্তিপুর থানায় নাবালিকা-সহ পরিবারের সদস্যদের আসার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কনেদের একজনের বয়স ১৭ বছর, অন্য জনের ১৬ বছরেরও কম। তাই এই বিয়ে আপাতত বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়। সে কথায় কর্ণপাত করেনি কেউ।
এ দিন আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বউভাতের আয়োজন করেন সাড়ম্বরে। নদিয়া জেলা কমিটির ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে শান্তিপুর থানার সহযোগিতায় এ দিন ওই দুটি অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে দুই নাবালিকা কনেকে উদ্ধার করেন তারা। আপাতত প্রধান কার্যালয় শ্রীমা মহিলা সমিতির দত্তফুলিয়ায় থাকবেন দু’জনে। কাউন্সেলিং হবে কৃষ্ণনগরে।
আরও পড়ুনঃ ঘনীভূত আশঙ্কার মেঘ! তুমুল বৃষ্টির রাজ্যের ‘এই’ জেলাগুলিতে, সতর্কতা হাওয়া অফিসের
শুধু এই দুটোই নয়, অন্য একটি দল চাকদহ থেকে এক নাবালিকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে পরিবার বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করলে সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। দেশের বাল্যবিবাহ আইনকে সকলের সামনে তুলে ধরে তাঁরা বলেন, “১৮ বছর পূর্ণ না হলে মাতৃত্বকালীন সময় বেশিরভাগ মৃত্যু হয়। নিজেদের শারীরিক গঠন সম্পন্ন না হতেই গর্ভধারণ করলে একদিকে যেমন প্রতিটি মায়ের রোগ ব্যাধি হয় তেমনই অপুষ্টি এবং অসম্পূর্ণ নবজাতকের জন্ম হয়।”
প্রসঙ্গত, ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সময়ে, মেয়েদের এবং ছেলেদের বিয়ের বৈধ বয়স যথাক্রমে ১৪ এবং ১৮ হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে, PCMA অনুযায়ী, বিবাহের আইনি বয়স মেয়েদের এবং ছেলেদের জন্য ১৮ এবং ২১ হিসাবে সংশোধন করা হয়েছিল। সংশোধিত আইনি বয়সের পিছনে প্রধান উদ্বেগ হল মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধি। অল্পবয়সে বিবাহ মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকি নবজাতকের মৃত্যুর আশঙ্কাও তৈরি করে। বাল্যবিয়ের ফলে অল্পবয়সে গর্ভবতী হওয়ার ফলে অপুষ্টিজনিত কারণে অনেকসময় নবজাতক মারাও যায়। এমনকি নবজাতক বেঁচে থাকলেও পরবর্তীতে এসব শিশুরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে জটিলতায় ভোগে।
Mainak Debnath