শোনা যায়, কালীমূর্তি দেখেই সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দেমাতরম রচনা করেন। বঙ্কিম আনন্দমঠ উপন্যাসও এখানে বসেই লেখেন। মন্দিরের মা কালীকে দেখেই স্বাধীনতার বীজমন্ত্র তৈরি হয়েছিল।
advertisement
মুর্শিদাবাদ জেলার বিখ্যাত লালগোলা রাজবাড়ি। এই রাজবাড়ির কালীপুজো বহু বছরের প্রাচীন। লালগোলা রাজবাড়িতে কালীপুজো হয় রাজরাজেশ্বরী রুপে। পুরোহিত জানান, লালগোলার রাজরাজেশ্বরী কালী পুজোর শুরু ঠিক কবে হয়েছিল, সে নিয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে, কথিত রয়েছে এই পুজো প্রায় সাড়ে তিনশো বছর পুরনো। দেওয়া হয় ইলিশ মাছের ভোগ জেলার ইতিহাসবিদ সুমন মিত্র বলেন, লালগোলার রাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়ের সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটা ভালো সম্পর্ক ছিল। এ ছাড়াও ওরাল হিস্ট্রিতে যা জানা যায়, লালগোলা রাজবাড়ির কালী মন্দিরের সঙ্গে কাজি নজরুল ইসলামের সম্পর্ক ছিল।
এই কালীপুজোর শুরু করেছিলেন রাজ রাও রাম শঙ্কর রায়। কথিত আছে, রাজা রাও রাম শঙ্কর রায় একদিন স্বপ্নদেশ পান, লালগোলার কলকলির চরে দেবী রাজরাজেশ্বরী রয়েছেন দেবীকে রাজবাড়ী এনে সেখানে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার। তারপর রাজা রাও রাম শঙ্কর রায় রাজপুরোহিতকে এ কথা জানান তারপর সকলে মিলে চরে গিয়ে দেবীকে উদ্ধার করে এনে রাজপ্রাসাদের সামনে পাকা দালানবাড়ি তৈরি করে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন তারপর থেকে শুরু হয় পুজো।
যদিও অন্য কালী মূর্তির চেয়ে লালগোলা রাজরাজেশ্বরী কালি মুর্তি অনেকটাই আলাদা। এখানে কালী মূর্তির পাশে রয়েছে লক্ষ্মী, সরস্বতী। শিবের ওপর এক পা দিয়ে ও এক পা তুলে নৃত্য রত অবস্থায় রয়েছে কালী। এ ছাড়াও কালীর চার হাতের মধ্যে একটি হাতে আশীর্বাদ ও একটি হাতে খড়্গ রয়েছে। বাকি দুটো হাত রয়েছে হাতাতালি দেওয়ার ভঙ্গিমায়।
মন্দিরের সেবাইতরা জানিয়েছেন, ‘‘দেবী মালদহের একটি জায়গায় পুজিত হতেন। সেখান থেকেই পদ্মার জলে কোনও রকমে ভেসে চলে আসেন চরে। পরে মালদহের ওখানকার লোকজন এসে দেবীর পাশে থাকা মূর্তিগুলো চিহ্নিত করেন।’ রাজবাড়ির কালীপুজোয় অন্ন ভোগ দেওয়া হয় সঙ্গে পুরনো রীতি মেনে ইলিশ মাছের ভোগও দেওয়া হয়। স্বপ্নাদেশেই রাজা রাও রাম শঙ্কর রায় দেবীকে এনে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন।