এক সময়ে বন্দর কাশিমবাজারকে কেন্দ্র করে ওই এলাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নগরীতে পরিণত হয়। কিন্তু অষ্টাদশ শতকে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভাগীরথী ‘কাটিগঙ্গা’তে পরিণত হলে বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে ক্রমশই গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে কাশিমবাজার। কিন্তু প্রতি বছরের এই সময়টা একেবারে বদলে যায় শহরের ছবিটা। আর তার কারণ, পাতালেশ্বর মন্দির।
আরও পড়ুন – Shukra Gochar in Kumbha: কুম্ভতে গোচর শুক্রের, এত্ত এত্ত টাকা পয়সা রাখবেন কোথায়, ডবল ধামাল এই রাশিগুলির
advertisement
মুর্শিদাবাদের ইতিহাসে কাশিমবাজার এক সুপ্রসিদ্ধ নাম। এক সময় ফরাসি, ডাচ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সকলেই এখানে বাণিজ্য কুঠি গড়ে তুলেছিল। হুগলি, পদ্মা ও জলঙ্গীর মাঝখানে অবস্থিত ত্রিভুজাকার শহরটিকে অনেকে কাশিমবাজার বলে বর্ণনা করেছেন। এই কাশিমবাজার প্রাচীনকাল থেকেই ইতিহাসের অনেক সাক্ষ্য বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। শোনা যায় ১৭ দশকে ভাগিরথী নদী তার গতিপথ কিছুটা পরিবর্তনে করে কাশিমবাজারের পাশে দিয়ে ফরাসডাঙ্গা পর্যন্ত গড়ে তুলেছিল কাটিগঙ্গা।
কথিত আছে আনুমানিক ৩০০ বছর আগে কাটিগঙ্গার দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠেছিল পাতালেশ্বর শিব মন্দির। মুর্শিদাবাদের এক অন্যতম জাগ্রত এই শিব মন্দির। আসল মন্দিরটি ছিল ৬৪ স্কোয়ার ফুট জায়গার উপরে। ২০০৬ সালে মন্দিরটির উন্নয়ন হয়৷ পাতালেশ্বর মন্দির কমিটি তৈরি করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এই অঞ্চলের আদিবাসীরা ও ব্যবসায়ীরা মন্দিরটির উন্নতিকল্পে চার লক্ষ টাকা দান করেন। পরবর্তীকালে মন্দিরটিকে একটু বৃহৎ আকার দেওয়া হয়।
এই কাটিগঙ্গাতে প্রতিবছর অনেক পরিযায়ী পাখি আসে। এই মন্দিরের উত্তর দিকে রয়েছে সতীদাহ ঘাট। যেখানে রাজা রামমোহন রায়ের মতো ব্যাক্তিত্বরা এসেছিলেন। এই পাতালেশ্বর মন্দিরের নিকটে রয়েছে ১০০ বছরের পুরোনো পাথুরেঘাটা শিব। যেটি বাঁধাঘাট নামে সুপরিচিত। এই সতীদাহ ঘাট ও বাঁধাঘাটকে ব্যাসকাশি বলা হয়। কথিত আছে এই অঞ্চলে ১০৮ টি শিব মন্দির রয়েছে।
মূলমন্দিরের বামদিকে রয়েছে মনসা মন্দির ও ডানদিকে দেখতে পাবো গনেশ মন্দির। এই মনসা মন্দিরের ঠিক পেছনে রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষ বহনকারী সুপ্রাচীন সতীদাহ ঘাট। সমগ্র মন্দিরটি কংক্রিট ভাবে ঘেরা রয়েছে। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কাটিগঙ্গা। কাটিগঙ্গার পার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বসার জায়গা। এই জায়গা আপনাকে এনে দেবে চিরশান্তি। প্রতিবছর শিবরাত্রিতে এখানে সাত দিন ব্যাপী বিরাট মেলা বসে, হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেষ দিন হাজার হাজার মানুষের প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা থাকে। এখানে প্রতিদিন পুজো হয়। বাবার কৃপা পেতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন এই ঐতিহ্যবাহী শিবমন্দির দর্শনে।
Kaushik Adhikary