ইংরেজবাজার শহরের গাজোল ট্যাক্সি স্ট্যান্ড সংলগ্ন ব্লক প্রশাসনিক ভবনের পিছনে এই পুকুর রয়েছে। শহরের কিছু মানুষ এই পুকুরটিকে 'বিবি' পুকুর নামে চেনেন। অনেকেই বলেন এটি 'ভিক্টোরিয়া পুকুর'। বিবি পুকুর বা ভিক্টরিয়া পুকুর নামকরণের পেছনে রয়েছে পুকুর খননের ইতিহাস।মালদহের ইংরেজবাজার ব্লক প্রশাসনিক ভবনের পেছনে রয়েছে এই পুকুর।
চারিদিকে কংক্রিটের দেওয়ালে ঘেরা থাকায় বাইরে থেকে দেখা যায়না পুকুরটি। তবে ভারত স্বাধীনের পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিত্যাক্ত হয়ে পড়েছিল পুকুরটি। এক সময় এই পুকুরে শহরের মানুষ স্নান করতেন। ধীরে ধীরে আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। পরে প্রশাসনের উদ্যোগে পুকুরটির সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে পুকুরটি সংস্কার করে চারিদিকে সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের অধীনে রয়েছে এই পুকুর।
advertisement
আরও পড়ুন : ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ছাদবাগান, শুক্রাণু বর্ধক কালো টমেটো টবে ফলিয়ে বাজিমাত যুবকের
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নীল চাষের একাধিক নীলকুঠি তৈরি হয়েছিল মালদহে। নীলকুঠিগুলির পরিচালনা থেকে দেখভালের জন্য মালদহে গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ কলোনি। বসতি স্থাপনের জন্য সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন পড়ে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন হয় সমাধিস্থলের। কারণ এখানে অনেক ইংরেজ সাহেব ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন কারণে মৃত্যু হয়েছে। সমাধিস্থল তৈরির পর প্রয়োজন হয় জলাশয়ের। কারণ পবিত্র কাজে জল প্রয়োজন। সেই সময় মালদহে পুকুর খননের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে সরকারি ভাবে আবেদন জানান এখানকার নীলকর সাহেবরা।
আরও পড়ুন : বাস না জাহাজ! এই বাস জলেও চলে! ভাইরাল ভিডিও দেখে হতবাক নেটিজেনরা
রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে সরকারি চিঠি পৌঁছয়। তিনি দেখেন পুকুরটি খনন করার প্রয়োজন হচ্ছে পবিত্র কাজের জন্য। তাই তিনি সেই সময় সরকারি কোষাগারে টাকা না দিয়ে নিজের উপার্জনের টাকা দেন। সেই টাকায় খনন করা হয় সমাধিস্থলের পুকুর। রানী ভিক্টোরিয়ার নিজের উপার্জনের টাকা প্রদান করায় পুকুরটির নাম করণ করা হয়েছিল 'কুইন ভিক্টোরিয়া ট্যাঙ্ক'। সরকারি ভাবে নাম দেওয়া হলেও অনেকেই এই পুকুরের নাম দেন 'বিবি পুকুর'। 'বিবি' একটি ফারসি শব্দ। যার অর্থ সন্মানীয় মহিলা। অর্থাৎ রানি ভিক্টোরিয়াকে সন্মান জানিয়ে পুকুরের নাম অনেকেই বিবি পুকুর দিয়েছিলেন।
বিবিপুকুর বা ভিক্টোরিয়া পুকুর এখনও ব্রিটিশ শাসনের বহু ইতিহাসের সাক্ষী। এমন এই পুকুর পাড়ে আজও রয়েছে একাধিক সমাধি। কিন্তু প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ও প্রচার না করায় পুকুরটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য আজও বর্তমান প্রজন্মের কাছে অজানা।