TRENDING:

Independence Day 2021: দেশ স্বাধীনের পর মেদিনীপুর কলেজ মাঠ থেকে পাকড়াও করা হয়েছিল বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত-কে!

Last Updated:

২০০০ সালের ৩ রা মার্চ, ৯০ বছর বয়সে মেদিনীপুর শহরেই তাঁর মৃত্যু হয় ।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
কাকভোরে মেদিনীপুর কলেজ মাঠে হাঁটছিলেন তিনি। হঠাৎ দুই পুলিশ কনস্টেবল তাঁকে পাকড়াও করে বলেন, "কি ব্যাপার, এই সময় এখানে ঘোরাঘুরি করছেন কেন? এখানে হাঁটাহাঁটি করা নিষেধ আছে। ফাইন দিন!" তিনি বলেন, "আমার কাছে কিছুই নেই!" প্রত্যুত্তরে দুই কনস্টেবল, "তবে, থানায় চলুন।" স্বাধীনতার যুদ্ধে ১০ বছর জেল খাটা ওই ব্যক্তি সহজভাবেই বললেন, "তবে চলুন"। এরপর, থানার সামনে তাঁকে দেখে মুখ কাচুমাচু করে ছুটে আসেন বড়বাবু! সব শুনে কান-ধরে বলেন, "বড্ড ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করবেন"! এরপর চা খাইয়ে ছাড়েন, মেদিনীপুরের বীর সন্তান (জন্ম যদিও বাংলাদেশে), বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত-কে।
advertisement

৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে, বিপ্লবের অন্যতম ধাত্রীভূমি মেদিনীপুরের বিপ্লবীদের বিষয়ে বলতে বলতে এমন গল্পই শোনালেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের সমাজ ও সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম ধারক ও বাহক মেদিনীপুর ডট ইনের প্রতিষ্ঠাতা তথা গবেষক ও লেখক অরিন্দম ভৌমিক। তিনি বললেন, "১৯৯০ সালের কাছাকাছি সময়ে স্বয়ং বিমল দাশগুপ্ত আমাদের একটি অনুষ্ঠানে এসে নিজেই এই গল্প করেছিলেন। ঘটনাটি ১৯৮০ সালের। আসলে পোশাক-আশাক, চাল-চলনে উনি এতোটাই সাধারণ ছিলেন যে, দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, উনি অগ্নিযুগের এক বীর বিপ্লবী ছিলেন।"

advertisement

ব্রিটিশ জেলাশাসক পেডি ও ভিলিয়ার্স হত্যার নায়ক, স্বাধীনতা সংগ্রামী বিমল দাশগুপ্ত ১৯১০ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের বরিশাল জেলার ঝালকাঠিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা ছিলেন বিখ্যাত কবিরাজ অক্ষয়কুমার দাশগুপ্ত। কবিরাজি চিকিৎসার সূত্রে অক্ষয় বাবু মেদিনীপুর এসে বসবাস শুরু করেন। ক্রমেই এখানকার নামকরা কবিরাজ হিসেবে পরিচিত হন। পুত্র বিমল দাশগুপ্ত তখন নিতান্তই নাবালক। সেই বিমল-ই ১২-১৩ বছর বয়স থেকে বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণ করবার আগে ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। বিপ্লবের আঁতুড়ঘর মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯২৮ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত'কে বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্সের মেদিনীপুর শাখার দায়িত্ব দেন। দীনেশ গুপ্তের অক্লান্ত চেষ্টায় মেদিনীপুর জেলায় বিপ্লবী আন্দোলন অন্য মাত্রা পায়। বিমল দাশগুপ্ত হয়ে ওঠেন দীনেশ গুপ্তের মন্ত্রশিষ্য। লবন আইন অমান্যের সময় জেলাশাসক জেমস পেডি দীঘা সমুদ্রতীরে সত্যাগ্রহীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছিল। এর প্রতিশোধ নিতে বিপ্লবীরা সিদ্ধান্ত নেন পেডি হত্যার। জ্যোতিজীবন ঘোষের সাথে বিমল দাশগুপ্ত এই দায়িত্ব পান। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের একটি প্রদর্শনীতে উপস্থিত হলে, পেডি সাহেব এই দুই বিপ্লবীর গুলিতে নিহত হয়। দুজনেই পালাতে সক্ষম হন।

advertisement

মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মনীষীদের নিয়ে অসংখ্য বইয়ের লেখক অরিন্দম ভৌমিক বললেন, "প্রদর্শনী হলের লাইট বন্ধ করে গুলি চালিয়েছিলেন বলে কেউ তাঁদের দেখতে পাননি! বিমল দাশগুপ্ত লোকের সাইকেল কাড়িয়ে নিয়ে সোজা শালবনী পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেখানে একজন চিনতে পেরে বিমলদা বলে ডেকে উঠেছিলেন!" এরপর, আত্মগোপন করে ঝরিয়া অঞ্চলের কয়লাখনিতে চাকরি নেন ও পরে কলকাতার মেটিয়াবুরুজেও থাকতেন বলছ জানা যায়। পুলিশ সন্ধান পায়নি।

advertisement

এরপর, ক্লাইভ স্ট্রীটে ভিলিয়ার্স সাহেবের হত্যার ভারও অর্পণ করা হয়, বিমল দাশগুপ্তের উপর। ২৯ জুলাই, ১৯৩১ সালে তিনি ভিলিয়ার্সকে গুলি করেন তার অফিসে ঢুকে। পকেট থেকে সায়ানাইড বের করার আগেই ধরা পড়ে যান। পেডি মার্ডার কেসের আসামী হিসেবে পুলিশ তাঁকে শেষ পর্যন্ত খুঁজে পায়। এদিকে, বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য গার্লিককে হত্যা করেন ও শহীদ হন বিমল দাশগুপ্ত (বা বিমল গুপ্ত) নাম নিয়ে, যাতে পুলিশ আসল বিমল দাশগুপ্ত কে খোঁজা ছেড়ে দেয়! শহীদ কানাইলাল ভট্টাচার্যের নামহীন হয়ে থেকে যাওয়া ও অন্য এক বিপ্লবীকে পুলিশের হাত হতে বাঁচিয়ে যাওয়ার এই আত্মত্যাগ ইতিহাসে বিরল। সুভাষচন্দ্রের উদ্যোগে তিনজন ব্যারিস্টার দাঁড়িয়েছিলেন স্পেশাল ট্রাইবুন্যালে বিপ্লবীদের পক্ষে। জ্যোতিজীবন ঘোষ প্রমাণাভাবে ছাড়া পেলেন এবং সওয়ালের সময় প্রধান সাক্ষী সুশীল দাস জানান "পেডি হত্যাকারী বিমল দাশগুপ্ত নয়"। কথিত যে, বিমল দাশগুপ্ত-কে বাঁচাতে মেদিনীপুরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান সুশীল দাসকে একথা বলতে নির্দেশ দেন। পেডি হত্যায় খালাস পেলেও ভিলিয়ার্স হত্যা মামলায় দশ বছর কারাদণ্ড হয় তার। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি তাকে আন্দামান সেলুলার জেলে পাঠানো হয়। ১৯৩৬ সালে সেখানে রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদার দাবীতে অনশন করেন। সুভাষচন্দ্র ও মুজফফর আহমেদের মধ্যস্থতায় অনশন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ১৯৩৮ সালে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় যদিও মুক্তি পাননি। চার বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলে বন্দিজীবন যাপন করেন বিমল দাশগুপ্ত। ১৯৪২ সালে মুক্তিলাভ নিজ বাড়ি মেদিনীপুরেই জমিজমা দেখাশোনা করতেন।

advertisement

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
​'শুভ বিজয়া' সন্দেশ স্পেশালে মন মজেছে জনতার! বর্ধমানের মিষ্টির দোকানে ভিড়
আরও দেখুন

স্বাধীনতার পরে আনন্দবাজার পত্রিকার সেলস ইনস্পেকটর হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছেন। ২০০০ সালের ৩ রা মার্চ, ৯০ বছর বয়সে মেদিনীপুর শহরেই তাঁর মৃত্যু হয় । তাঁর দুই ছেলের মেদিনীপুর কলেজের সামনে হোটেল আছে। তাঁরাও অত্যন্ত সৎ ও সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। অপরদিকে, মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ঠিক বিপরীতে, বিখ্যাত কলেজ কলেজিয়েট ময়দানের সম্মুখে বীর বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্তের দন্ডায়মান মর্মর মূর্তি আজও দেশবাসী, রাজ্যবাসী তথা মেদিনীপুর বাসী-কে তাঁর বীরত্বের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়।

বাংলা খবর/ খবর/Local News/
Independence Day 2021: দেশ স্বাধীনের পর মেদিনীপুর কলেজ মাঠ থেকে পাকড়াও করা হয়েছিল বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত-কে!
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল