গড় জঙ্গলের দেবী শ্যামারূপা। দেবী একাধারে কালী, আবার অন্যরূপে দুর্গা। কথিত আছে অবিভক্ত বাংলার প্রথম দুর্গাপুজো হয় এখানেই। শারোদৎসবে দেবী শ্যামারূপা প্রথম দুর্গারূপে(Durga Puja 2021) পুজিত হন এই জঙ্গলে।
চাকচিক্যহীন মন্দিরে শতাব্দী পেরিয়ে, এখনও সমান ঐতিহ্যের অধিকারী দেবী শ্যামারূপা(Durga Puja 2021)। গড় জঙ্গল নিয়ে লোকমুখে নানান অলৌকিক ঘটনার কথা প্রচলিত রয়েছে। যা এখনও সব মানুষের কাছে সমানভাবে আকর্ষণীয়।
advertisement
পশ্চিম বর্ধমান জেলায় কয়েক লক্ষ টাকা বাজেটের একাধিক পুজো (Durga Puja 2021)হলেও, আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু গড় জঙ্গলের শ্যামারূপা মন্দিরের পুজো।
দেবী শ্যামারূপার প্রতিষ্ঠা কাল ও প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। তবে ইতিহাসবিদদের মতে রাঢবঙ্গের রাজা ইছাই ঘোষ দেবী শ্যামারূপার প্রতিষ্ঠা করেন। গভীর জঙ্গলের মাঝে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের আরাধ্য দেবীর।
শতাব্দী প্রাচীন এই দেবীর মন্দিরে (Durga Puja 2021)তেমন জৌলুস নেই। মাঝেমধ্যে সংস্কার হলেও একচিলতে মন্দিরেই নিত্যসেবা হয় শ্যামারূপার। বিশেষ বিশেষ তিথিতে কিছুটা আড়ম্বরের সঙ্গে পুজো হয়। তবে দুর্গাপুজোর সময় শ্যামারূপার আরাধনা ঘিরে স্থানীয় মানুষের উদ্দীপনা থাকে তুঙ্গে। পুজোর চারদিন জাঁকজমক ও আড়ম্বরের সঙ্গে, নিষ্ঠাভরে পুজো করা হয়। নরনারায়ণ সেবা হয়। হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শ্যাপারূপার মূল মূর্তি রয়েছে মন্দিরের(Durga Puja 2021) গর্ভগৃহে। সেখানে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ। দুর্গাপুজোর মহাষ্টমী তিথির সন্ধিপুজো, শ্যামারূপা মন্দিরের পুজোর বিশেষ আকর্ষণ। ওই দিন দেবীর পুজো দেখতে স্থানীয় মানুষদের ঢল নামে। বাইরে থেকেই বহু মানুষ আসেন দেবীর আর্শিবাদ নিতে। ওই দিন মন্দিরে জনসমাগম সামাল দিতে হিমশিম খায় মন্দির কর্তৃপক্ষ।
বহু মানুষ দেবীর অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করেন। দেবীর (Durga Puja 2021)আর্শিবাদে অনেকেরই মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়েছে বলে শোনা যায়। অনেক মানুষ নিজের বাসনা পূরণের দাবি রেখে মানত করেন।
শোনা যায়, দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে (Durga Puja 2021)বিশেষ তোপধ্বনি শোনা যায় মন্দির প্রাঙ্গনে। সেই তোপধ্বনি শুনেই হয় সন্ধিপুজোর বলিদান। সন্ধিক্ষণের কয়েক মিনিট আগে সম্পূর্ণ নিঃস্তব্ধ হয়ে যায় এলাকা। কিন্তু তোপধ্বনি কোন জায়গা থেকে আসে, তা আজও রহস্য।
যদিও বহু মানুষ এই রহস্যভেদের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখনও তোপধ্বনির রহস্যের উত্তর সবার কাছে অজানা। সন্ধিপুজোর এই ঘটনা উপলব্ধি করতে বহু মানুষ গড় জঙ্গলে ভিড় করেন।
গড় জঙ্গল সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামে কান পাতলে শোনা যায়, প্রাচীন দুর্গাপুজোগুলির(Durga Puja 2021) বলিদান হত গড় জঙ্গলের তোপধ্বনির আওয়াজ শুনে। তবে ঘনবসতি বেড়ে যাওয়ার ফলে তা আর শোনা যায় না এখন। অপরদিকে এই বিষয়ে অনেকেই অন্য মত প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির থেকে শোনা যায় তোপধ্বনি।
রহস্য যায় হোক না কেন, দুই বর্ধমান সহ আশপাশের জেলাগুলিতে গড় জঙ্গলের দুর্গাপুজো দৈবিক মর্যাদার অন্যতম অধিকারী। বহু মানুষ, রঙিন আলো, থিমের মণ্ডপ দর্শন ছেড়ে ভিড় জমান এই মন্দিরে। দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2021)সময় নিয়ম করে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন তাঁরা। লক্ষ্য একটাই, দেবীর দর্শন ও আর্শিবাদ লাভ। অনেকের বিশ্বাস, দুর্গাপুজোর সময় দেবী শ্যামনারূপার দর্শন করলে বিপদ কেটে যায়, হয় মোক্ষলাভ।
Nayan Ghosh