#পশ্চিম বর্ধমান: ভ্যাকসিন এর জন্য লম্বা লাইন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে। রাজ্য এবং জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাদেও, যে সমস্ত জায়গাগুলি থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, সেই সব জায়গাতেও লম্বা লাইন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভ্যাকসিন পাচ্ছেন হাতেগোনা মানুষ। তার মধ্যে আবার আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে ভ্যাকসিন নিয়ে। শিলিগুড়ির পর পশ্চিম বর্ধমান জেলার দু\'জায়গায় খোঁজ মিলেছে ম্যাগনেট ম্যানের।
advertisement
রবিবার পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে খোঁজ পাওয়া যায় অঙ্কুশ সাউ নামে এক যুবকের। যিনি দিন পাঁচেক আগে কোভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। তারপরেই তার শরীরে চিটিয়ে যেতে থাকে বিভিন্ন লোহার জিনিসপত্র। মুহূর্তের মধ্যে রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সেই খবর। তারপর সোমবারও পানাগড়ের এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তার শরীরে কার্যত চুম্বকে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনায় ভ্যাকসিন নিতে যাওয়া মানুষের মধ্যে তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় দুই ম্যাগনেট ম্যান দাবি করছেন, তারা শিলিগুড়ির খবর জানতে পারার পর নিজেদের শরীর পরীক্ষা করে দেখতে চান। আসানসোলের যুবক অঙ্কুশ দিন পাঁচেক আগে কোভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। তার দাবি, শিলিগুড়ির ম্যাগনেট ম্যানের খবর তিনি সংবাদমাধ্যমে দেখতে পান। অন্যদিকে আসানসোলের ম্যাগনেট ম্যানের খবর পাওয়ার পর পানাগড়ের মাঝবয়সী ব্যক্তি নিজের শরীর পরীক্ষা করতে যান। তখন তিনি দেখেন, তার শরীরেও লোহার জিনিসপত্র আটকে যাচ্ছে। তার সঙ্গে আটকে যাচ্ছে প্লাস্টিকের তৈরি মোবাইলও। মাঝবয়সী ব্যক্তি দাবি করেছেন, তিনি দিন দুয়েক আগেই তার কোভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। তারপর নিজের শরীর পরীক্ষা করতে গিয়েই তিনি এই ঘটনা চাক্ষুষ করেন। তারপর নিজের শরীর পরীক্ষা করতে গিয়েই ঘটে এই বিপত্তি।
এই ঘটনা শোরগোল পড়ে যায় বিভিন্ন দিকে। বিভিন্ন মানুষ এই ঘটনায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তবে বিজ্ঞান মঞ্চ দাবি করছে, ভ্যাকসিন নেওয়ার সঙ্গে এই ঘটনার বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা নেই। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর শরীর চুম্বকে পরিণত হওয়ার কোনো কারণ তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। এবিষয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার সিএমওএইচ নির্মল কুমার মাঝি বলেছেন, ওই ব্যক্তিদের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার দরকার আছে। তাদের পরীক্ষা করে দেখা হবে। যদিও তাদের কাছে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছিল। তবে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, এই ঘটনার সঙ্গে শরীর চুম্বকে পরিণত হওয়ার ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি। তিনিও বিজ্ঞান মঞ্চের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে ভ্যাকসিন নেওয়ার সঙ্গে চুম্বকে পরিণত হওয়ার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। অপরদিকে অন্য এক চিকিৎসক বলেছেন, রাজ্যে সদ্য বর্ষা ঢুকেছে যার কারণে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেকটা বেশি। ভ্যাপসা গরমে ভুগতে হচ্ছে মানুষকে। আর সেই ঘর্মাক্ত শরীরে চামচ সহ বিভিন্ন হালকা জিনিস শরীরের সঙ্গে চিটিয়ে থাকছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার সঙ্গে এই ঘটনার কোনো যোগাযোগ নেই বলেই মনে করছেন তিনি। যদিও পুরো বিষয়টিকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে জানানো হয়েছে। তাছাড়াও রিপোর্ট গিয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের কাছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হতে। কারণ ভ্যাকসিন নিয়ে যদি মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, তাহলে ভ্যাকসিনেশনের কাজ বিলম্বিত হবে। করোনা ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে মাস্ক পরার পাশাপাশি ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা। তাদের আবেদন, এই সমস্ত ঘটনা দেখে যেন সাধারণ মানুষ অযথা আতঙ্কিত হয়ে না পড়েন। ভ্যাকসিনেশনের কাজে যেমন গতি পাচ্ছে নিরন্তর, সেই ভাবেই যেন সাধারণ মানুষ ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করেন। তাহলেই করোনা ভাইরাসকে খুব তাড়াতাড়ি পরাজিত করা যাবে। অযথা এই সমস্ত বিষয়ে আতঙ্কিত হলে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা দীর্ঘ হয়ে যাবে। তাই অযথা আতঙ্কিত না হয়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।