জামুরিয়া বিধানসভার শ্যামলা পঞ্চায়েতের ভুড়ি গ্রামের বাসিন্দা কাজী মোতেহার। দীর্ঘদিন ভুগছিলেন শারীরিক অসুস্থতায়। হঠাৎই তার পেটে ব্যথা শুরু হয়। তাকে ভর্তি করা হয় দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা হয় তার। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মোতেহারবাবুর গলব্লাডার অপারেশন হয় ওই হাসপাতালে।
এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু গন্ডগোল বাধে, যখন অপারেশনের সাতদিন পর ফের পেটেব্যাথা শুরু হয়। কাজী মোতেহারকে ফের দুর্গাপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আবার নানান ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। ধরা পড়ে, মোতেহারবাবুর পিত্তনালী সংক্রমনের জেরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে। তার জন্য প্রয়োজন পুনরায় আরও একটি অপারেশনের। যা আরও বেশি খরচসাপেক্ষ, এবং ওই বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে আর অপারেশন করা আর সম্ভব নয় বলেও জানানো হয়। কারন সেসময় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে আর প্রয়োজনীয় অংকের টাকা ছিলনা।
advertisement
এরপর মোতেহারবাবুর প্রতিবেশী এবং আত্মীয়রা, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিংয়ের মধ্যস্থতায়, তাকে ভেলোরের খ্রিস্টান মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখানই অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যক্তির অপারেশন হয়। চিকিৎসার টাকা খরচ হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে। অপারেশনের জন্য খরচ হয়েছে এক লক্ষ আশি হাজার টাকা। পুরো টাকাটাই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে দেওয়া হয়েছে। একমাস সিএমসি হাসপাতালে কাটানোর পর সুস্থ হয়ে গ্রামে ফিরেছেন কাজী মোতেহার।
উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনের আগে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের উপর বিশেষ নজর দিয়েছিল তৃণমূল সরকার। যদিও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে পরিষেবা পাওয়া নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল বিভিন্ন জায়গা থেকে। বিরোধী নেতারা বিভিন্ন ধরনের কটাক্ষ করছিলেন সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেইসময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা না দিলে, হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে এবার এইমস, সিএমসির মত বড় হাসপাতালগুলিতেও পরিষেবা পাওয়া যাবে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথা যে শুধুমাত্র ঘোষণা ছিল না, তা প্রমাণ করেছে এই ঘটনা। আর্থিকভাবে দুর্বল কাজী মোতেহার, রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন ভিনরাজ্যে গিয়ে। খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা কম খরচে হয়েছে এই কার্ডের দৌলতে। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বলছেন, এই ঘটনা, সমস্ত কটাক্ষের বিরুদ্ধে বিরোধীদের যোগ্য জবাব দিল। অন্যদিকে তৃণমূল সরকারের প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে আপ্লুত জামুড়িয়া বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা কাজী মোতেহার। তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবং স্থানীয় বিধায়ক হরেরাম সিংকে।