ইতিমধ্যেই মহকুমা হাসপাতালে করোনা সংক্রামিত রোগীদের জন্য বিশেষ ওয়ার্ডে অনেকগুলি বেড রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃতীয় (coronavirus third wave) ধাক্কায় সংক্রমিত হতে পারে শিশুরাও। সেই কথা মাথায় রেখে, শিশুদের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি সেরে রাখা হচ্ছে। ব্যবস্থা করা হচ্ছে বিশেষ বেডের। চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণ এর কাজ চলছে জোরকদমে।
এই বিষয়ে দুর্গাপুর (Durgapur) মহকুমা হাসপাতালের সুপার ডঃ ধীমান মণ্ডল জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের (coronavirus) আশঙ্কিত তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে, সবরকম প্রস্তুতি সেরে রাখছে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল। ইতিমধ্যেই করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে বেড। শিশুদের চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন রাখা হচ্ছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম তৈরির কাজও চলছে জোরকদমে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় মানুষ যেভাবে আতঙ্কিত এবং দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন, সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নিয়ে রাখা হচ্ছে।
advertisement
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার থার্ড ওয়েভে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে শিশুদের।
দেশে এখনও পর্যন্ত শিশুদের ভ্যাকসিন (corona vaccine) দেওয়ার কাজ শুরু হয়নি। সেক্ষেত্রে কিছুটা চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা। পাশাপাশি শিশুদের করোনা চিকিৎসার অভিজ্ঞতা সেই অর্থে নেই চিকিৎসক মহলেরও। ফলে শিশুদের চিকিৎসার জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল যেমন সবরকম প্রস্তুতি সেরে রাখছে, ঠিক তেমনভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও। যদি দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানে, তবুও যাতে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে না যায়, তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করার প্রচেষ্টা চলছে। অক্সিজেন থেকে শুরু করে ওষুধ, বেড - অত্যাবশ্যকীয় সমস্ত জিনিস নাগালের মধ্যে রাখছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রাজ্যে এখনও বিধি-নিষেধ জারি থাকলেও, কড়াকড়িতে কিছুটা শিথিলতা আনা হয়েছে। তা ছাড়াও সামনে পুজোর (Durga puja 2021) মরশুম। অনেককেই স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করে অসচেতনভাবে রাস্তায় ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মানুষকে সাবধান করেছেন মহকুমা হাসপাতালে সুপার ডক্টর ধীমান মন্ডল। তিনি বলেছেন, করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিৰ্দিষ্ট দূরত্ববিধি বজায় রাখা, মাস্ক পড়ে থাকা। যতটা সম্ভব কম জমায়েত করা। এক্ষেত্রে ধীমানবাবু বলেছেন, অনেকেই হয়তো সংক্রমিত হয়েও বুঝতে পারবেন না। তারপর তিনি স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কোন জমায়েতে অংশগ্রহণ করে সংক্রমণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারেন। এইরকম হলে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার অনেকটাই বেশি হয়ে যাবে। তাই প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছেন তিনি। বলেছেন, উৎসবে সামিল হলেও, করোনার জন্য সরকার নির্দেশিত বিধি-নিষেধ মেনে চলা উচিত। তাহলেই এই মারণ ভাইরাসের ছোবল থেকে নিজেদের রক্ষা করা যাবে।
থার্ড ওয়েভ (coronavirus third wave)ভ্যাকসিন কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন চিকিৎসক মহলের একাংশও। এই বিষয়ে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে সুপার ধীমানবাবু বলেছেন, করোনা ভাইরাস খুব দ্রুত নিজেদের পাল্টে ফেলছে। দ্রুত মিউটেশন হচ্ছে এই ভাইরাসের। কিন্তু ভ্যাকসিন তৈরি করা হয় যেকোনও একটি ভ্যারিয়েন্ট মাথায় রেখে। তাই এই বিষয়ে তার মতামত, ভ্যাকসিনগুলি করোনার ডেল্টা প্লাস ভেরিয়েন্ট (Delta plus) এর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকরী হবে, তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে। কিন্তু, ভ্যাকসিন নিয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত মনে করে, স্বাস্থ্যবিধিকে উপেক্ষা করার ক্ষেত্রে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ভ্যাকসিন হয়তো ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে, সংক্রমনের আশঙ্কা কিছুটা থেকেই যায়। সেই জায়গা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হলে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নিদান দিয়েছেন তিনি।
সবশেষে দুর্গাপুরবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, তৃতীয় (coronavirus third wave) ঢেউ রুখে দিতে প্রশাসন সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সমস্ত চিকিৎসাকেন্দ্রগুলি নিজেদের প্রস্তুতি সেরে রাখছে। অক্সিজেনের সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে। তৈরি রাখা হচ্ছে সেফহোমগুলিকেও। তাই আশঙ্কিত না হয়ে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশিষ্ট এই চিকিৎসক।
Nayan Ghosh