পশ্চিম বর্ধমান জেলার হীরাপুর বিধানসভার ধেনুয়া গ্রাম। এখানেই হয় একদিনের দুর্গাপুজো। মহালয়ার দিনেই পুজো নেন দেবী মহামায়া। কুমারীরূপে পুজো করা হয় দেবীকে। একদিনের পুজো শেষে হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। এখানে দেবী অসুরবিনাশিনি রূপে দেখা দেন না। দুই সখা, জয়া-বিজয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ি আসেন পার্বতী। হয়ত এতে পার্বতীকে ছেড়ে থাকার বিরহ কম হয় মহাদেবের। তবে দেবীর একদিন পরেই কৈলাস প্রস্থানের জন্য, মনঃকষ্ট ভোগেন গ্রামের মানুষ। তারা সকলেই চেষ্টা করেন, একদিনের পুজোতে চারদিনে উপভোগ করতে। পুজোর দিনে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন সকলে। তবে মাতৃপক্ষের সূচনার দিনে দেবীর প্রস্থান কাঁদিয়ে যায় ধেনুয়া গ্রামের মানুষকে।
advertisement
আরও পড়ুন: জলঘড়ি মেনে সন্ধিপুজো, ৫ গ্রামে রিলে সিস্টেমে পৌঁছয় সন্ধির ডাক, গায়ে কাঁটা দেওয়া পুজোর ইতিহাস...
গত ৪৮ বছর ধরে একদিনের দুর্গাপুজো হয়ে আছে ধেনুয়া গ্রামে। ১৯৭৩ সালে এই পুজো শুরু হয়। পুজো শুরু করেন সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী। যদিও তিনি একদিনের দুর্গাপুজো করতেন মায়ের সিংবাহিনী রূপেই। কালীকৃষ্ণ সেবাশ্রমের উদ্যোগে পুজো শুরু করা হয়। যদিও পুজো শুরু হওয়ার তিন বছর পরে কোনও অজ্ঞাত কারণে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯৭৮সালে আসাম থেকে এসে তেজানন্দ ব্রহ্মচারী আবার পুজোর শুরু করেন। তিনিই মহামায়ার কুমারীরূপের আরাধনা শুরু করেন।
আরও পড়ুন: রূপকথাও গল্পও হার মানবে, মুঘল আমলের সাক্ষী হাওড়ার সাঁঝের আটচালা
তেজানন্দ মহারাজের চালু করা নিময় মেনে এখনও ধেনুয়া গ্রামে হচ্ছে একদিনের দুর্গাপুজো। তবে এখন পুজো পরিচালনার সব দায়িত্ব রয়েছে গৌরি কেদারনাথ মন্দির কমিটির হাতে। ২০০৩ সাল থেকে এই পুজো পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে তারা। ধেনুয়া গ্রামে কুমারী মহামায়ার পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। যুগলমন্ত্র জানা কোনও পুরোহিত এই পুজো করেন। এই মন্দিরে পশুবলি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। শান্তি প্রতিষ্টার লক্ষ্যে এই পুজো করা বৈষ্ণব মতে।
আরও পড়ুন: ৩০০ বছরের হাঁসখালির গাজনা হরিতলার মহিলা পরিচালিত পুজো, প্রতিমা গড়েন মহিলারাই
জয়া-বিজয়ার সঙ্গে দেবী দুর্গার মূর্তি সচরাচর দেখা মেলে না এই বাংলায়। তবে এই ধরণের মূর্তির পুজো, বিশেষভাবে প্রচলিত রয়েছে বাংলাদেশে। অনেকের ধারণা, আসামের বাসিন্দা তেজানন্দ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে নিবিড় যোগযোগ ছিল বাংলাদেশের। সেই কারণে বাংলার গ্রামে অসুর মর্দিনী রূপে দুর্গা পুজো না করে, কুমারী মহামায়ার মূর্তি আরাধনার জন্য বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
কুমারী দুর্গারপুজোর জন্য আগে বিশেষ নিয়ম চালু ছিল ধেনুয়া গ্রামে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ২১ জন কুমারী মেয়ে, পুজোর আয়োজন করত। তবে সেই নিয়মে কিছুটা ভাটা পড়েছে এখন। কিন্তু অক্ষুণ রাখা হয়েছে পুরোনো প্রথা। পূর্বনির্ধারিত সব রীতি রেওয়াজ মেনে হয় ধেনুয়া গ্রামের একদিনের দুর্গাপুজো। স্থানীয় মানুষের এই পুজোকে কেন্দ্র করে উৎসাহ থাকে তুঙ্গে। পাশাপাশি, দূরদূরান্ত থেকে এই পুজো দেখতে ছুটে আসেন অনেকে। বাইরের মানুষের কাছে মহালয়ার এই দুর্গাপুজো বোনাস হলেও, স্থানীয়দের কাছে দেবীর দ্রুত গমন কিছুট মনখারাপের সাক্ষী হয়েই থাকে।
Nayan Ghosh