পশ্চিম বর্ধমানের সিলামপুরে রয়েছে এমন একটি শিব মন্দির। স্থানীয়দের মতে বারোশো বছরেরও বেশি পুরনো শিবলিঙ্গটি। ইছাই ঘোষের সভাকবি, কবি ঘোষের শিষ্য বাউল দাস এই স্থানে বসে সাধনা করতেন। পরবর্তী ক্ষেত্রে জাঁকজমক সহকারে এই শিবলিঙ্গের পুজো করে আসছেন সিলামপুর সহ স্থানীয় মানুষজন।
সিলামপুরের এই শিব মন্দিরে ভিড় জমান হাজার হাজার ভক্তরা। কাটোয়া থেকে জল নিয়ে এসে শিবের মাথায় ঢাল হয় জল। মাটি থেকে বেশ কয়েক ফুট নিচে অবস্থান শিবলিঙ্গটির। সেখানেই জল ঢালা হয়। ভক্তরা জানিয়েছেন, প্রত্যেক বছর এই শিবলিঙ্গে জল ঢালতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমান। তাদের মনস্কামনা পূরণ করার ইচ্ছা নিয়ে আসেন এখানে। মনস্কামনা পূরণ হলে, পরের বছর আবার জল ঢালতে আসেন তারা। প্রত্যেক বছর জনসমাগম বেড়েই চলেছে এইস্থানে। শিব মন্দিরকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের উদ্যোগ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায়, শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার এখানে পুজা হচ্ছে। তাছাড়াও পৌষ সংক্রান্তিতে এই শিবলিঙ্গ কেন্দ্র করেই মেলা বসে। যা কেন্দুলি মেলা নামে পরিচিত।
advertisement
এ বিষয়ে মন্দিরের সেবায়েত তারক চৌধুরী বলেছেন, করোনার জন্য কঠোর নিয়ম কানুন রয়েছে মন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে। সম্পূর্ণ কোভিড বিধি মেনে পুজো করা হচ্ছে এখানে। ভক্তরা রবিবার জল নিয়ে রওনা হচ্ছেন মন্দিরের উদ্দেশ্যে। সোমবার জল ঢালার পর তারা তাদের মনস্কামনা জানিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
১২০০ বছরের পুরনো এই শিবলিঙ্গটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে, ওই সেবাইত এক অলৌকিক ঘটনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্থানীয় মানুষরা যদি এই শিব লিঙ্গের মাথায় জল না ঢেলে, কাশি বিশ্বনাথে জল ঢালতে গিয়েছেন, তাহলে তাদের যাত্রা সম্পূর্ণ হয়নি। এই মন্দিরে জল ঢালার পরেই তারা কাশি বিশ্বনাথে পৌঁছে সেখানে পুজো দিতে পেরেছেন। শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবারে মহামৃত্যুঞ্জয় শিবের কাছে তারক চৌধুরীর প্রার্থনা, খুব দ্রুত করোনা মহামারী থেকে এই বিশ্ব যেন মুক্তি পায়।
মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই শিবলিঙ্গটি একসময় বাঁকুড়ার বিখ্যাত ঘোষাল পরিবারের অধীনে ছিল। পরে দামোদরে প্লাবনের জেরে মন্দিরে জল ঢুকে, শিবলিঙ্গটি এই পাড়ে ভেসে চলে আসে। পরে আবার শিবলিঙ্গটি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান ঘোষাল পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু তারা স্বপ্নাদেশ পান, শিবলিঙ্গটি যেখানে ভেসে এসেছে, সেখানেই প্রতিষ্ঠা করে যেন তার পুজো করা হয়। তারপর থেকে সেই নিয়মই চলে আসছে।
পরবর্তীকালে বাউল দাস এখানে সাধনা করতেন। তখন থেকেই মন্দিরটি স্থানীয়দের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। বর্তমানে মন্দির ও মন্দির চত্বর সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। নিয়ম মেনে প্রতিদিন এই শিবলিঙ্গের পূজা অর্চনা করা হয়। প্রতিবছর পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে মেলা হয় এখানে। আর শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবারে, শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালতে ভিড় জমান হাজার হাজার ভক্তরা।