এদিনের আলোচনা সভার আয়োজন সংগঠন সোলিটারি নেচার অ্যানিম্যাল প্রোটেকশন ফাউন্ডেশন (SNAP)-এর চেয়ারম্যান কৌস্তভ চৌধুরী বলেন, 'এদিনের বৈঠকে আমরা নানান বিষয়ে আলোচনা করি। শকুনের প্রজনন ও সংরক্ষণে আমরা গত বছরের জুন মাস থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। Wild Life trust of India - এর অর্থানুকূল্যে এবং Forest department Government of West Bengal - এর বৈকুন্ঠপুর বিভাগের তত্ত্বাবধানে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখতে চাই, আমবাড়ি মাঝিয়ালিতে ১৩টি শকুন মারা গিয়েছিল। তারপর আমরা খোঁজখবর শুরু করি তাতে দেখা যায় যে ডাইক্লোফেনাকের জন্য একটা অসুবিধা তৈরি হয়েছে। আর দুটো কীটনাশকের জন্য আজ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য হারিয়ে যেতে বসেছে।'
advertisement
কৌস্তভবাবু বলেন, 'ক্ষতিকর রাসায়নিক তথা কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পশুদের জন্য শকুনবান্ধব ও গ্রব্য ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। কোনপ্রকার নিষিদ্ধ কীটনাশক বা ওষুধ কেনাবেচার কারণে যদি পশু বা বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয় তবে এবার থেকে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।' তিনি বলেন, 'যেকোনো লিফ কালচারের জন্য আর সয়েল কালচারের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক বা রাসায়নিক পদার্থের জন্য আজ শকুন বিপন্নের মুখে। কিছু অসাধু ব্যাক্তিত্ব নিজের বাড়ির ছাগল বা গরুর শরীরে এইসমস্ত রাসায়নিক ব্যবহার করছে ফলপ্রসূ এদের মরার পর এদের মাংস যখনই শকুন খাচ্ছে তাতে মৃত্যু ঘটছে তাদের। যদিও শকুনের ইমিউনিটি শক্তি এবং স্টোমাকে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকায় এরা অন্যান্য প্রাণী ও মানুষের থেকে যথেষ্ট বেশি হজম ক্ষমতা সম্পন্ন হয়। যার ফলে এই ধরনের খাদ্য সহজে হজম করতে পারে। কিন্তু এরা এই তিনটে জিনিস হজম করতে পারে না সাইগনেট, ডাইক্লোফেনাক ও মনোক্রোটোফস। এগুলো শকুনের শরীরে প্রবেশ করলে তাতে তারা মারা যায়।'
কৌস্তভবাবু বলেন, 'এদিন জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি এবং রাজগঞ্জের পেস্টিসাইড ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি-প্রেসিডেন্ট এবং তাদের টিমের সঙ্গে বসা হয়েছিল। বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং তাদের পুরো টিম, ভেটেনারি সেকশনের টিম এবং টি এস্টেটের টিম ছিল এদিনের বৈঠকে ছিল। সঙ্গে জলপাইগুড়ি স্মল টি গ্রোয়ার্স, ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন ছাড়াও অনেকই উপস্থিত ছিলেন। আমরা ৫০ - এর বেশি সচেতনতা শিবির করেছি। ফুলবাড়ি, গজলডোবা, আমবাড়ি, বেলাকোবা, বন্ধুনগর, জটিয়খালি পুরো চত্বরটাতে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি করেছি।'
অন্যদিকে, রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্র এবং বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের সেন্ট্রাল ম্যানেজার তথা সায়েন্টিফিক অফিসার সৌম্যসুন্দর চক্রবর্তী বলেন, 'শকুনের হারিয়ে যাওয়া বা অসুস্থতার পেছনে একটা ওষুধই কারণ। সেটা হচ্ছে ডাইক্লোফেনাইড সোডিয়াম। আমরা শারীরিক ব্যথার জন্য যে মলম বা ওষুধ ব্যবহার করি, তার প্রধান উপকরণ এটি। এবার এগুলি যখন গবাধি পশু যেমন গরু, বাছুরের উপর ব্যবহার করা হতো। ব্যবহারের ৭২ ঘন্টার মধ্যে যদি সেই পশুটির মৃত্যু হয়, এবং ভাগাড়ে ফেলার পর সেটির উপর শকুনের নজর থাকে। শকুন সেই মাংস খেলেই মারা যাবে। কারণ এই ওষুধ ভয়ানক শকুনের জন্য। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে শকুনের সংখ্যা ৯৯.৯ শতাংশ কমে গিয়েছে। এই কারণে যতদূর সম্ভব পশুর মৃতদেহে কীটনাশক বা ভয়ানক কোনও ওষুধ দেওয়া বন্ধ করতে হবে।'
সৌম্যবাবুর বক্তব্য, 'এমন ঘটনা সম্প্রতি মালবাজারে ঘটেছে। ফলে সচেতন হতেই হবে। শকুনের গন্ধ পাওয়ার বা শোঁকার ক্ষমতা নেই। তাই তারা সরাসরি মাংসের উপর হামলা করে এবং বেঘোরে প্রাণ হারায়। তাই আমরা কীটনাশক ব্যবহার, শকুনকে বাঁচানোর উপায় ইত্যাদি নিয়ে সচেতমতামূলক কর্মশালা ও আলোচনা করছি।'
পাশাপাশি, সরকারি নজরদাড়ির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বৈকুন্ঠপুর বন বিভাগের এডিএফও জয়ন্ত মণ্ডলের উত্তর, 'সরকারের তরফে যা যা করণীয় তা করছি। সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা বুঝে সরকারের তরফে নানান ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। এতে একটাই জিনিস স্পষ্ট যে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। পশু চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওষুধ এবং অনেকেই গবাধি পশুর উপরে ব্যবহার করে, সেই ওষুধের জন্য শকুনের সংখ্যা লোপ পাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসছি। এতে আশা করি কিছুটা সমস্যার সমাধান বের হবে।'