অনেকেরই মতে, কোনও প্রচার ছিল না, রেল দপ্তরের তরফেও পর্যটকদের বার্তা দিতে তেমন কোনো উদ্যোগও ছিল না ফলে যাত্রী না হওয়ার সম্ভবনা ছিল বেশি। অন্যদিকে, এর আগেও যাত্রীর অভাবে জঙ্গল সাফারিকে (Jungle Safari) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে জঙ্গল টি সাফারির ভবিষ্যৎ নিয়ে অশনিসংকেত দেখছে পর্যটন ও টয়ট্রেনপ্রেমীরা।
advertisement
জলপাইগুড়ি থেকে পাহাড়ে একটি কাজের জন্য আসে সৌমিক সান্যাল, পৌষালী সাহা ও সাহানা চক্রবর্তী। কিন্তু শিলিগুড়িতে নেমেই ভার হয়ে গেল যুবদের মন। 'ধস নেমেছে, টয়ট্রেন (Toy Train) চলবে না।' হতাশার সুরে পৌষালী জিজ্ঞেস করল, 'কবে খুলবে।' ওদিক থেকে উত্তর এল, 'জানা নেই।' অগত্যা সেই রাতটি শিলিগুড়িতে কাটাতে হল তাদের। তবে পরের দিন নিউজ ১৮ লোকালের (News 18 Local) প্রতিনিধিকে স্টেশন চত্বরেই সৌমিক একগাল হাসি নিয়ে বলে, 'ট্রেন আজ চলবে। পাহাড়েই আমাদের একটা কাজ পড়েছে। তাই যাচ্ছি। তবে, এতদিন পর টয়ট্রেন খুললেও খুব একটা ভিড় দেখছি না। করোনাকালে (Covid-19) একদিকে যেমন এটা স্বস্তির, তেমনি দুর্ভাগ্যজনক। কারণ এক সময় এই টয়ট্রেনের টিকিট পাওয়াই মুশকিল ছিল। বুকিং হয়ে যেত চটজলদি।'
পৌষালী ক্যামেরা বের করে ফটো তুলতেই ব্যস্ত ছিল। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে বলে, 'কত্তদিন থেকে ভাবছি সবাই মিলে ঘুরতে যাব। হচ্ছে না। তবে এবার কাজের সূত্রেই পাহাড় যাওয়া। একদিন থাকতে হলেও সার্থক আসা। ট্রেন ফাঁকা দেখে মন খারাপ লাগছে। বহু বছর আগে গেছিলাম, তখন সবাই হৈ হৈ করে টয়ট্রেনে উঠত। কিন্তু এখন তেমন উৎসাহ নেই কারও মধ্যে।'
শিলিগুড়ির বিশিষ্টজন তথা শিক্ষাবিদ অভয়া বসু বলেন, 'বিষয়টা খুব সহজ। করোনাকালে পর্যটকদের পর্যটনমুখী (Tourism) করা সবথেকে কঠিন। আর আমরা কোথাও যেন সেই জায়গাটা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। এই প্যানডেমিকের (Pandemic) সময় তো কিছুটা অভাব আছেই পর্যটক নেই। যারা শিলিগুড়িতে থাকে বা এখানকার স্থানীয় তাদের কাছে টয়ট্রেন তো হয়তো ততটা উৎসাহের নয় যতটা না বাইরের থেকে আগত পর্যটকদের (Tourist) কাছে। অর্থাৎ বাইরের পর্যটকদের কাছে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে হবে বলে মনে করছি।'
তিনি বলেন, 'মার্চ মাসে আমার মনে আছে আমরা দার্জিলিংয়ে (Darjeeling) গিয়েছিলাম। তখন প্রচুর ভিড় ছিল। সেই সময় কিন্তু দুদিন আগে টিকিট (Tickets) কাটতে হয়েছিল আমাদের। আর এখন দ্বিতীয় ঢেউ (covid second wave) পেরিয়ে তৃতীয় ঢেউয়ের দিন গুনছি আমরা। বিশেষজ্ঞদের একাংশ তো নিশ্চিতও করেছেন। এবার যতক্ষণ না পর্যন্ত ঠিকঠাকভাবে সবটা শুরু হচ্ছে ততক্ষণ টয়ট্রেনে তো দৈনিক যাত্রী পাওয়াটা একটু কঠিনই ব্যাপার।'
তবে কি পন্থা অবলম্বন করা উচিত প্রশ্ন করা হলে এই শিক্ষিকা তার উত্তরে বলেন, 'হ্যাঁ। আমরা যদি ছোট ছোট ট্রিপ প্ল্যান (Trip Planning) করি। যদি এখানকার যারা পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাঁরা যদি অন্যরকমভাবে চিন্তা করেন। যেমন যত অবধি যাচ্ছে সেই নিয়ে ছোট ছোট ট্রিপগুলো (Toy train Trips) করায় সেভাবে করে যদি সপ্তাহে একদিন বা দুদিন করে যদি চালানো যায় তবে তাঁরা হয়ত ধীরে ধীরে তার দৈনন্দিনতা ফিরে পাবে।'
অভয়াদেবী আরও বলেন, 'এটা তো সঠিক যে টয়ট্রেনের প্রতি আমাদের লোকালদের (Locals) যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা কোথাও কোথাও তো হতাশা যোগায়। পর্যটন ব্যবসায়ীদের সেই জায়গাটা নিয়ে একটু ভাবা উচিত। একটু অন্যভাবে চিন্তা করতে হবে। যদি আমরা স্থানীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারি টয়ট্রেনের (Toy train) মধ্যে; তাহলে হয়ত নতুনের একটু ছোঁয়া থাকতে পারে। এছাড়াও টয়ট্রেনটাকে যদি ডেস্টিনেশন আউটিংয়ের (Destination Outing) জন্য ব্যবহার করা যায়, ঠিক অনেকটা ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের মতো করে, তাহলে কিন্তু টয়ট্রেনের যে গ্ল্যামার (Glamour) আছে তা আরেকটু বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করি।'
বলাবাহুল্য যাত্রী আকর্ষণে রেলের তরফে কোনও প্রচার বা অন্য কোনও উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। রেল দপ্তরের তরফে টয়ট্রেন পরিষেবা নিয়ে বিশেষ করে ডিএইচআর সেকশনে (DHR section) কতটা মনোযোগী হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। টয়ট্রেনকে রেল যে বেসরকারিকরণের পথে হাঁটছে সে কথা তো আগেও উঠে এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। এমনকি রেল কর্মীদের একাংশের দাবি, লোকসানে চলা ডিএইচআরকে (DHR) এভাবেই ধীরে ধীরে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেবে কর্তৃপক্ষ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
তবে সেইসব অভিযোগকে একপ্রকার উড়িয়ে দেন হিমালায়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কে (HHTDN) সম্পাদক সম্রাট সান্যাল। তাঁর কথায়, 'প্রতিদিনের পরিষেবা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তা অব্যাহত। আর যাত্রী? সেটাও হবে। তবে ধীরে ধীরে এখনই আশাহত হওয়ার কিছু নেই। একটা পরিষেবা যা দেড়টা বছর বন্ধ হয়ে বসেছিল। তার ওপর কোভিড; সবটাই থমকে গিয়েছে। একটু সময়ের প্রয়োজন সবটা আগের ছন্দে ফিরবে বলে আমার বিশ্বাস।'
ভাস্কর চক্রবর্তী