এদিকে, সংক্রমণকে রুখতে চলতি করোনা আবহে রাজ্যের মুখ্যসচিবের নির্দেশিকা জারির পরই ‘নাইট কারফিউ’ সফল করতে তৎপর হয়েছে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশ। রাত নটার পর থেকে শিলিগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকায় জোরদার নজরদারি চালায় পুলিশ। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী রাত নটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ‘নাইট কারফিউ’ কার্যকর রয়েছে। এরপরেও সেই নির্দেশিকাকে এককথায় বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শহরের সফদর হাসমিচক, চম্পাসরি, তিনবাত্তি মোড়, হাতিমোড় সহ বিভিন্ন এলাকায় গাছাড়া ভাব নিয়ে রাতে 'শহর উপভোগকারীদের' বিরুদ্ধে পথে নামে শিলিগুড়ি পুলিশ। কিন্তু তাতে কী! বাগে আসতেই চাইছে না করোনা।
advertisement
বলাবাহুল্য, উত্তর-পূর্ব ভারতে করোনার প্রথম ঢেউ গত বছরের মার্চ মাসে প্রথম ধরা পড়ে। এরপর জুন থেকে জুলাই মাসে ভয়ঙ্কর হারে বাড়তে থাকে। এদিকে, বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ তৃতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু জুলাই মাসের শেষে এসেও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং জেলার সংক্রমণ না বাড়লেও কমছে আর না। এই জেলাগুলিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জনেরও বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে এও বলে রাখা ভালো, রাজ্যের দৈনিক সংক্রমণ গড়ে ১.৫-২ শতাংশেরও কম।
এই বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (জনস্বাস্থ্য) ডাঃ সুশান্ত রায় বলেন, 'সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। জেলায় জেলায় কোভিডবিধি মেনে চলতে হবে। রাত্রিকালীন শহরযাপন বন্ধ করতে হবে। তবে হ্যাঁ, করোনার চারিত্রিক পরিবর্তনই এই ডেল্টা, ইউকে ভ্যারিয়েন্ট। কিন্তু এরসঙ্গে তৃতীয় ঢেউয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। পাশাপাশি এও বলে রাখা ভালো, ঢেউ কখন কেমন করে আছড়ে পড়বে তা গণনা করা মুশকিল। দেখা যাক!'
অন্যদিকে শিলিগুড়ি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সঞ্জীব মজুমদার বলেন, 'প্রতি মুহূর্তেই এই ভাইরাস মিউটেড হচ্ছে। ফলে এর চারিত্রিক পরিবর্তনও ক্ষণে ক্ষণে চোখে ধরা পড়ছে। তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ডেল্টা ও ইউকে ভ্যারিয়েন্ট। আর এর ফলেই এর ইনফেক্টিভিটি অর্থাৎ সংক্রমণের ক্ষমতা যথেষ্টই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা অবশ্যই উদ্বেগের।' সঞ্জীববাবু বলেন, 'তবে ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের তরফে প্রতিটি ওয়ার্ডে টিকাকরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত ২৪টি ওয়ার্ডে টিকাকরণ সম্পন্ন করা হয়। প্রতিটি স্লাম এলাকাগুলিতে আমরা দফায় দফায় টিকাকরণের ব্যবস্থা নেব। যাতে কেউ টিকা থেকে বঞ্চিত না হয়। আমাদের লক্ষ্য সুপারস্প্রেন্ডারদের নিয়ে। তাই অধিক গুরুত্বের সঙ্গে আমরা সুপারস্প্রেন্ডারদের টিকার ব্যবস্থা করছি। সেইসঙ্গে মায়েদের টিকাকরণের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।' পাশাপাশি, ডাঃ মজুমদার আরও বলেন, 'তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আমরা কেউই এখনই কিছু বলতে পারব না। সবটাই সাধারন মানুষের সচেতনতা উপর নির্ভর করে। সময় এসেছে মানুষকে আরও বেশি সজাগ হতে হবে। প্রশাসনিক তরফেও কড়াকড়ি ভাবে করোনাবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। তবেই আমরা করোনার মোকাবিলার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারব।'
প্রসঙ্গত, উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে সংক্রমণ কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তারমধ্যে মনিপুর, মিজোরাম, আসাম, সিকিমের মতো রাজ্যও রয়েছে। এরইমধ্যে সিকিমে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মেলায় বঙ্গ সিকিম বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ ডেল্টা ও ইউকে ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ফলে তৃতীয় ঢেউয়ের সম্মুখসমরে যে আমরা এসে পৌঁছেছি, তার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞরা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
ভাস্কর চক্রবর্তী