ধার্মিকদের জন্য এটি হল একটি দৃষ্টান্তমূলক স্থান। ধার্মিক না হলেও ক্ষতি নেই গাছে-গাছে প্রজাপতি, ফড়িং, হরেক রকমের পাখি, শিয়ালের ডাক মন ভালো করবে আপনার। চারিদিকের কোলাহলে হাঁপিয়ে ওঠা থেকে একটু শান্তি খুঁজে নিতে এখানে আসতেই পারেন আপনি( Durga Puja) ।
পুজোর ছুটিতে জনসমাগম থেকে যদি আপনি নিজেকে আলাদা রাখতে চান তাহলে আপনার গন্তব্য হতেই পারে অট্টহাস সতীপীঠ( Durga Puja)। রাতে প্যাঁচার ডাক, প্রহরে প্রহরে শেয়ালের ডাক অট্টহাস সতীপীঠের পরিবেশকে যে একটা আলাদা মাত্রা এনে দেয় তা বলাই বাহুল্য।
advertisement
লোকচক্ষুর আড়ালে এমন একটা মোহময়ী মন্দির অনেকেরই অজানা। কারণ এখানকার পরিবেশ ভয়ার্ত। যুগ যুগ ধরে সাধকেরা এখানে এসেছেন, পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে দশ মহাবিদ্যার তন্ত্র সাধনা করেছেন। এমনকি মহামায়ার লীলা প্রত্যক্ষও করেছেন তাঁরা। এই সাধকেরা কখনওই কিছু ব্যক্ত করেননি কারও কাছে। তাই অট্টহাস সতীপীঠের( Durga Puja) রহস্য আজও মানুষের কাছে অজানা।
পরিবেশ, কি কি দেখতে পাবেন এখানে এলে?
মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ঈশাণী নদী। কাছেই রয়েছে শ্মশান। এই এলাকাটি আগে এত বেশি জঙ্গলে ভরা ছিল যে, দিনের বেলায়ও যেতে সাহস পেতেন না অনেকে। তবে এখন খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে মন্দিরটিকে। রাতে ঘুমানোর সময় কানে আসবে শিয়ালের ও প্যাঁচার ডাক, সকালে উঠবেন পাখির ডাকে। শান্ত পরিবেশে ভক্তি ভরে পুজো দিতে পারবেন আপনি। কথিত আছে একমনে মাকে ডাকলে সতীমায়ের উপস্থিতি অনুভব করা যায় আজও।
কি ভাবে আসবেন?
হাওড়া, শিয়ালদা থেকে আপনি উঠুন কাটোয়া লোকালে। কাটোয়া থেকে বাসে উঠে নামুন নিরোল। বাসে আপনার সময় মিনিট ২৫। নিরোলে নেমে টোটো রিক্সা পাবেন অট্টহাস, তাতে করেই নেমে পরুন আপনার গন্তব্যে। এছাড়াও কাটোয়া থেকে আজিমগঞ্জ এর ট্রেন ধরে নামুন গঙ্গাটিকুরি। ওখানে টোটো রিক্সা রিসার্ভ reserve করে চলে আসতে পারেন অট্টহাস সতীপীঠে। ভাড়া লাগবে প্রায় ১৫০ টাকার মতো। কাটোয়া থেকে গাড়ি ভাড়া করেও অট্টহাস আসতে পারেন। খরচও যৎসামান্য ৫০০-৬০০ টাকা মতো ভাড়া লাগে এক্ষেত্রে।
এছাড়াও আরও একটি উপায় আছে, যদি আপনি ট্রেনে যেতে পছন্দ না করেন তাহলে আপনি বেছে নিতেই পারেন বাস। সেক্ষেত্রে, ধর্মতলা থেকে নিরোলের সরকারি বাস (SBSTC) পাবেন। তবে বাসে সময়টা একটু বেশিই লাগে। বাস ছাড়ার সময় হল বিকেলে তিনটে। ওই বাস বাসটি নিরোল পৌঁছায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ। নিরোলে নেমেই টোটো রিক্সা করে পৌঁছে যান অট্টহাস সতীপীঠে। আপনি চাইলে মন্দিরে আগে থেকে ফোন করেও আসতে পারেন। তাতে আপনারই সুবিধা। অতিথিতের থাকার জন্য জায়গা আছে। ভক্তদের থাকা, খাওয়া মন্দির থেকেই পরিচালিত হয়।
এছাড়াও কাটোয়ার আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মস্থান। যেমন, চৈতন্য চরিতামৃতের লেখক কৃষ্ণদাস কবিরাজের বাড়ি ঝামতপুর নামের এক গ্রামে। বাংলায় মহাভারতের রচয়িতা কাশীরাম দাসের বাড়ি কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত সিঙ্গি গ্রামে। ফলে অট্টহাসে এলে আপনি এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্মস্থানেও আসতে পারবেন ঘুরতে। অন্যদিকে কাটোয়া থেকে ১০ কিলোমিটার দূরেই জগদানন্দপুর গ্রাম। সেখানেই রয়েছে রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দির। যদি আপনার পুরাতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহ থাকে, তাহলে এই মন্দিরের গঠনশৈলি আপনাকে অবাক করবেই।
Malobika Biswas