উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ অরুণাভ সরকার অবশ্য জানিয়েছেন, মৃত ব্যক্তি মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত ছিলেন। অন্যদিকে, মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগের দাবি, এই রোগ সেই রোগ নয়, যা বলে দাবি করা হচ্ছে। অ্যাসপারজিলাস ছত্রাককে মিউকরমাইকোসিস বলে দাবি করা ঠিক নয়। স্বভাবতই, দুটি ভিন্ন বিভাগের আলাদা দাবিতে প্রশ্নের মুখে চিকিৎসা ব্যবস্থা।
advertisement
যদিও উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের সুপার অবশ্যই বলেন, 'রোগীর টিস্যু সেল নিয়ে কালচার করাই সম্ভব হয়নি তবে রোগীর মিউকরমাইকোসিসের উপসর্গ ছিল।' আর উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিকের এই দাবীতে যথার্থই বিতর্ক বেড়ে যায়।
এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে ৬ জনের শরীরে ছত্রাকজনিত এই রোগের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। যদিও সরকারি সূত্রে খবর ৬ জনের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও দুই সন্দেহজনক চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। ফলে স্বভাবতই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চিকিৎসকদের কপালে।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একজন। এরপরই ফের বুধবার মাঝরাতে প্রধান নগর থানার অন্তর্গত মিলন মোড় এলাকার বছর ৪৮-এর এক বাসিন্দা মারা যান। ওই ব্যাক্তির পরিবার সূত্রে খবর, তিনি পড়না সংক্রমিত হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি করোনা মুক্ত হন কিন্তু শরীরে এই ছত্রাকের সংক্রমণ হয়েছে বলে সন্দেহ করেন চিকিৎসকরা।
এদিকে ওই বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে খবর, মৃত ওই রোগীর ডায়াবেটিসের সমস্যা ছিল। তবে করোনায় সংক্রামিত হয় তিনি ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শরীরের অবস্থার অবনতি হওয়ার ফলে, ওই রোগীকে ভেন্টিলেশনে পর্যন্ত দিতে হয়। এরপর এই আচমকা তার শরীরে এই ছত্রাকের সংক্রমণ হয়। সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে ক্রমশই ওই রোগীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হতে থাকে। অবশেষে বুধবার ওই ব্যক্তিকে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় এবং সেখানেই রাত দেড়টা নাগাদ তিনি মারা যান।
বলা বাহুল্য, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে, তখন নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে মিউকরমাইকোসিস। বেসরকারি মতে উত্তরবঙ্গের মধ্যে শিলিগুড়িতেই মিউকরমাইকোসিসের আক্রান্তে সংখ্যা সব থেকে বেশি। এখনও বেশ কয়েকজন রোগী শিলিগুড়ির বিভিন্ন নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
তবে সবমিলিয়ে রীতিমতো যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে চিকিৎসক মহলে তাতে এক প্রকার প্রশ্ন উঠছে, 'আমরা সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছি তো?' করোনা কালে সাধারণ মানুষের জীবন জেরবার! সেখানে চোখরাঙানি মিউকরমাইকোসিসের। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাই যে এখন অন্যতম রক্ষাকবচ। সেখানে নানান বিভাগের এহেন দায়সারা ভাবে চিকিৎসা কোনও অশনিসংকেত নয় তো? প্রশ্ন কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের।
ভাস্কর চক্রবর্তী