১৯১৩ সালে শুরু হয়েছিল বাগানের পথচলা। তখন থেকেই বাগানে শুরু হয়েছে পুজো। বাগানের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে লাল ডোমাকৃতির মন্দির। মন্দিরের বাইরে স্বল্প জায়গাজুড়ে মাঠ। সেখানে কালীপুজোর (kali puja) সময় বলি হয়। বৈঠক জমে দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষদের। ঠিক কোন সালে এই পুজো শুরু হয়েছিল, তা জানা নেই কারও। তবে শতাধিক বছর পুরোনো এক বট গাছ রয়েছে যার অস্তিত্ব এখনও স্পষ্ট। বট গাছের বয়সেরই হয়ত এই মন্দির, বলেন স্থানীয়রা। মন্দিরে রয়েছে কালী ঠাকুরের মূর্তি।
advertisement
কথিত আছে, এই মূর্তি ভীষণ জাগ্রত। তাই তো হাজার হাজার মানুষ এখানে মানত করেন। মানত পূরণ হলে কালী পুজোয় দেওয়া হয় বলি। প্রত্যেক অমাবস্যায় চলে পুজো। খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হয় বাগানের(sukna tea garden) সকলের মধ্যে।
সুকনা চা বাগানের ইতিহাস অনুযায়ী বাগানের মালিক এবং তাঁর পরিবার ভগবানের উপর ভীষণ আস্থা রাখেন। তাই তাঁদের খুব পছন্দের একটি জায়গা এই মন্দির। এছাড়া পুজোতে(sukna tea garden) কোনওরকম ত্রুটি রাখতে চান না তাঁরা। প্রতিমার বায়না দেওয়া থেকে প্যান্ডেল সাজানো, সবকিছু হয় সাধারণ একটা ক্লাবের মতই। বাগান কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর পুজোর সমস্ত আয়োজন করে এসেছে। এবারও তা ব্যতিক্রম নয়। গত বছর মন্দিরের ছোট্ট গেটে লাগানো হয়েছিল কোভিডবিধি মেনে চলার পোস্টার। সেই মতেই এসেছিল সবাই।
পুরোনো যুগের মানুষের মুখে শোনা যায়, দুর্গা পুজো (Durga Puja) ও কালী পুজোর সময় নাকি এখানে বসত আসর। আশেপাশের গ্রাম ও চা বাগানগুলি থেকে আসতেন অনেকে। মন্দিরে চত্বরে হতো পুজো এবং সেখানেই বসে সবাই আড্ডা দিতেন। অঞ্জলির সময় বাগানের আদিবাসী শিশুরা প্রবল উৎসাহ নিয়ে হাজির হত। এখনও সেই ধারা বহাল রয়েছে। সিঁদুরখেলার দিন আর মনে থাকত না জাতবৈষম্যের কথা। ম্যানেজার থেকে শুরু করে শ্রমিকপত্নী, সবাই যেন সিঁদুরের রঙে রাঙা হয়ে ওঠেন।
নেই কোনও থিম পুজো বা জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। সাবেকিয়ানার সাজই প্রতিমাকে আরও সুন্দর করে তোলে(sukna tea garden)। মনোযোগ দিয়ে গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে পুজো করে আসছেন গোপাল গোস্বামী। তিনি জানান, দুর্গা পুজো থেকে শুরু করে মা কালীর আরাধনা, সবই হয় এখানে। আশেপাশের প্রচুর মানুষ উপভোগ করতে আসেন এই পুজো। অঞ্জলির সময় যেন উৎসব আরও বেশি মনে হয়। তিনি বলেন, 'মায়ের আরাধনায় আমরা সকলে মিলে কাজ করি। ভোগ বিতরণ করা হয় সবার মধ্যে। এছাড়াও এখানকার বাচ্চারা ফুল জোগাড় করে(sukna tea garden)। ছোট ছোট জিনিসের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পায় তারা।'পুজোর দিন দেখা যায়, ভিন্ন ভিন্ন শাড়ি ও সাজে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের। যুবরা আবার দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে আসে। চেয়ার পাতাই থাকে, সেখানে বসে পড়ে আড্ডা দিতে।
চা বাগানের (sukna tea garden)ম্যানেজার ভাস্কর চক্রবর্তী বলেন, 'সারাবছর কাজের মধ্যে থাকি সবাই। এই চারটে দিনের অপেক্ষায় দিন গুনি। বাগানের পুজো যেন নিজের বাড়ির পুজো। সোনার অলঙ্কার দিয়ে আগাগোড়াই সুসজ্জিত থাকেন মা কালী। দুর্গা পুজোতেও থাকে সেই এক আড়ম্বর, একই উৎসাহ। মণ্ডপে এলেই মন ভরে যায়।'
স্থানীয় ঋতু দাসের কথায়, 'মাত্র কয়েক বছর এখানে বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এখন মনে হয় যেন এই মন্দির চত্বর ও এই পুজো বড্ড আপন। পুজোর দিন সেজেগুজে সপরিবারে অঞ্জলি দেওয়া থেকে সিঁদুর খেলা, সবই যেন নতুন এনার্জির জোগান দেয়।'
চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তীর কথায়, 'পুজোর জোগাড় ও অন্যান্য কাজ আমরা সবাই মিলেমিশেই করি(sukna tea garden)। সবাই মিলে উৎসাহের সঙ্গে কাজ করার মজাই আলাদা। ভোগের প্রসাদে খিচুড়ি, লাবড়া, পায়েস ও ফলপ্রসাদ হয়। অল্প আয়োজন থাকলেও আনন্দে যেন কোনও খামতি না থাকে, আমরা এটাই চাই।'
ভাস্কর চক্রবর্তী