শিলিগুড়ির বিভিন্ন রাস্তা, মোড়ের অলিগলিতে দেখা মিলবে ভুট্টার (Siliguri Corn Craze)। পাহাড়ের দিকে গেলে কুয়াশা মোড়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে লেবু, লঙ্কা দেওয়া মিষ্টি ভুট্টা খাওয়া অনেকেরই পছন্দের। এবার শীতে সেই মজা উপভোগ করছেন শিলিগুড়ির মানুষ। বলা বাহুল্য, তথাকথিত ফাস্টফুডকে টেক্কা দিচ্ছে এই সুস্বাদু ভুট্টা। এই ভুট্টার স্বাদ যেমন মনমাতানো, তেমনই এর গুণ অনেক। শিলিগুড়ির আশেপাশে এমন বহু বিক্রেতা রয়েছেন যাঁরা এই গুণে সম্পন্ন ভুট্টাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। শিলিগুড়ির মানুষও কিন্তু বেশ পছন্দ করছেন সেই ভুট্টাকে।
advertisement
শিলিগুড়ির বিখ্যাত আড্ডাস্থল সূর্যনগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন। প্রেম থেকে বন্ধুদের আড্ডা, সবের শিরোনামে এই মাঠের নাম আসে। মাঠ লাগোয়া বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শিলিগুড়ি পার্ক। ঠিক তার সামনেই এই বিক্রেতাকে দেখা গেল ভুট্টা বিক্রি করতে। সেই জ্বলন্ত কয়লার আঁচে ভুট্টা ক্ষেত থেকে সোজা চলে আসা মিষ্টি ও সুস্বাদু ভুট্টা যেন তৈরি হচ্ছে রসনাতৃপ্তির জন্য। বিক্রেতার মুখেই শোনা যায়, "এখানে বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই আসে ভুট্টার স্বাদ নিতে। এর মধ্যে তেমন কোনও তেল মশলা দেওয়া হয় না। তাছাড়া পুষ্টিকরও বটে। তাই বিকেলে অনেকেই নিজেদের হাঁটার সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় গরম ভুট্টা।"
এদিন বিকেলে নাতনীর সঙ্গে হাঁটছিলেন মালা চক্রবর্তী। তাঁকে দেখা গেল দুটো ভুট্টা কিনতে। "একটু লেবু মাখিয়ে দিন", বলতে শোনা গেল তাঁকে। ভুট্টা খেতে খেতেই নাতনীর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে গল্প করছিলেন তিনি। জিজ্ঞেস করা হল, পাশেই তো মোমো, চাউমিন। সেসব ছেড়ে ভুট্টা কেন? কাঁপা স্বরে উত্তর এল, "ভুট্টার মধ্যে খারাপ কোনও জিনিস নেই। না এটায় তেল মশলা রয়েছে, না দীর্ঘক্ষণ তেলের মধ্যে ভাজা হয়। তাই এটাই আমাদের পছন্দ।" (Siliguri Corn Craze)
সুস্বাদু ভুট্টার কিন্তু উপকারিতা অফুরাণ। এছাড়াও ভুট্টা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। সে মাইক্রোওয়েভে কিছুক্ষণ রাখাই হোক, কিংবা কয়লার আঁচে পোরানো। এছাড়াও বিদেশে 'কর্ণ অন দা কব' (corn on the cob) অর্থাৎ গোটা ভুট্টাকে বিভিন্নভাবে পরিবেশন করা হয়। মাখন দিয়ে ভুট্টাকে মাখিয়ে তার উপর চিজ (cheese), কায়েন পেপার (cayenne pepper), লবণ, গোলমরিচ, র্যাঞ্চ ড্রেসিং (ranch dressing) ইত্যাদি দিয়ে পরিবেশন ভীষণ জনপ্রিয় বিদেশে। আমাদের দেশেও কিন্তু ভুট্টার ক্রেজ (craze) কম কিছু নয়। এই জিনিসটা অন্তত শিলিগুড়ি ও পাহাড়ের রাস্তার ধার ঘেঁসে বসে থাকা বিক্রেতাদের মুখের হাসি দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
এবার আসি উপকারিতার কথায়। বিভিন্ন বয়সে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। সেসব কিছু সবসময় ওষুধ দিয়ে না কমলেও সাধারণ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
• ওজন বৃদ্ধিতে ফুলস্টপ (full stop): প্রতিদিন ভুট্টা খেলেও ওজন বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে দুশ্চিন্তা থাকবে না। এছাড়াও ভুট্টায় ফ্যাট (fat) বলে কিছু নেই। ফলে মনের আনন্দে খান ভুট্টা।
• পুষ্টিগুণে সম্পন্ন: ভুট্টায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার (fiber) রয়েছে। এতে পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে। ভুট্টায় বায়োফ্লাভোনয়েডস ও ক্যারোটিনয়েডসের মতো প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
• বর্ষাকালীন রোগ থেকে মুক্তি: বর্ষাকালে শরীরে নানা রকম রোগ দেখা দিতে পারে। তরতাজা ও গরম ভুট্টা খেলে সেই রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে। এছাড়াও ভুট্টা ভিটামিন এ, সি ও লাইকোপিনে ভরা। তাই ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে ভুট্টাকে বেছে নিতেই পারেন।
• হজমের বন্ধু: ভুট্টায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আপনাকে দূরে রাখে। হজমেও যথেষ্ট সহায়তা করে।
• দীর্ঘমেয়াদি শক্তি: প্রচুর শর্করা থাকে বলে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদে শরীরে শক্তি জোগাতে পারে। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যক্রমের সহায়ক। এক কাপ ভুট্টায় ২৯ গ্রাম শর্করা থাকে। শরীরচর্চার শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ভুট্টা খাওয়া উচিত।
এদিকে নিউজ ১৮ লোকালকে ৯ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ক্লিনিকাল নিউট্রিশনিস্ট প্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, "করোনা দেড় বছর ধরে চোখ রাঙাচ্ছে। আমরা তথাকথিত ফাস্টফুড-এর সঙ্গে যদি ভুট্টার তুলনা করি, তা অবশ্যই পুষ্টিকর। এর মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, প্রোটিন, ফাইবার, বিভিন্ন ভিটামিন। ফলে খারাপের কোনও প্রশ্নই উঠছে না। এবার শীতকালেই আমরা ঘুরতে যাই, রাস্তায় গরম গরম খাবারের মজা নিই। তার মধ্যে অন্যতম কিন্তু এই ভুট্টা।"
তিনি আরও বলেন, "শীতকালে বহু রোগে মানুষ ভোগে। বর্ষাকালও ব্যতিক্রম নয়। তাই দুই মরশুমের জন্যই ভুট্টা উপকারি। তবে একটা জিনিস যা আমাদের মেনে চলতে হবে, সেটা হচ্ছে সঠিক ডায়েট অনুসরণ করা। সবধরণের লাভ যাতে আমরা পাই। তাই মরশুমি ফল থেকে শুরু করে মাংস, সবজি। সবই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।"
Vaskar Chakraborty