শিলিগুড়ির আনন্দময়ী কালীবাড়ির(Durga Puja 2021) দৃশ্যটাও যেন এক। বিধিনিষেধের দরজার পেছনে আটকে পড়েছে হই হুল্লোড়। গতবছরের মতো এই বছরও চারণ কবি মুকুন্দ দাসের প্রতিষ্ঠিত আনন্দময়ী কালীবাড়ির দুর্গাপুজো থেকে বাদ যাচ্ছে জাঁকজমক। কিন্তু মন্দির তো! তাই রীতি মেনেই পুজো হবে। শুধু থাকবে না বিশাল আয়োজন। রোজকার মতই পুজো হবে মন্দিরে।
স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকায় ট্যুরিজম (Durga Puja 2021) সার্কিটে যুক্ত হয়েছে আনন্দময়ী কালীবাড়ি। রাজ্যের অন্যান্য ধর্মীয় স্থান নিয়ে ট্যুরিজম সার্কিট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে পর্যটনদপ্তর। সেই সার্কিটে থাকছে আনন্দময়ী কালীবাড়িও।
advertisement
• মন্দিরের ইতিহাস : স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় চারণ কবি মুকুন্দ দাসের ভূমিকার কথা অজানা নয় সবার কাছে। বিপ্লবী ও দেশবাসীদের নিজেদের গানের মাধ্যমে আন্দোলনে শামিল হওয়ার বার্তা (Durga Puja 2021) দিয়েছিলেন। এর পাশাপাশি স্বদেশী আন্দোলনের সময় স্বদেশী গান ও নাটক রচনা করে ব্রিটিশ শাসকদের নজরে পড়েছিলেন। ১৯২৪ সালের মে মাসে বরিশাল থেকে শিলিগুড়ি এসেছিলেন তিনি। সে সময় ডিআই ফান্ড মার্কেটের পাশে বর্তমান শিলিগুড়ি থানার পেছনে টিনের তৈরি একটি কালীবাড়িতে আশ্রয় নেন। সে সময় মন্দিরের পরিস্থিতি দেখে গান গেয়ে মন্দির পাকা করার উদ্যোগ নেন। তখন থেকেই চলছিল ভাবনাচিন্তা। বেশ কয়েকমাস তিনি গান গেয়ে ৫০১ টাকা দক্ষিণা জোগাড় করে মন্দির গড়ার জন্য দান করেছিলেন।
মন্দির স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় তার দু'বছর পর। ১৯২৬ সালে স্বাধীনতার বহু আগে এই মন্দিরে প্রবেশ করেন মা কালী(Durga Puja 2021) । কাশী থেকে আনা হযেছিল আনন্দময়ী কালীমূর্তি। মন্দিরে সবরকম আয়োজন করেন মুকুন্দ দাস। এভাবেই শুরু হয় মন্দিরের পথচলা। নামও রেখেছিলেন তিনি, 'আনন্দময়ী কালীবাড়ি'।
বহু পুরোনো উদ্যোক্তাদের মুখে শোনা গিয়েছে, পুজোর সময় দেশের ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে মন্দিরে একত্রিত হতেন বিপ্লবীরা(Durga Puja 2021) । মন্দির প্রাঙ্গণে চলত শরীরচর্চা। বৈঠক বসত এই মন্দিরেই। ব্যায়াম ও খেলাধুলোর মাধ্যমে নিজেদের শরীরকে চাঙ্গা রাখতেন বিপ্লবীরা। ব্রিটিশ রাজ থেকে মুক্তি পাওয়ার একাধিক পরিকল্পনাও করতেন বিপ্লবীরা এই মন্দির প্রাঙ্গণেই।
• এবারের আয়োজন : গতবছরের আগে পর্যন্ত বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবেই পুজো (Durga Puja 2021) হত। চলতি বছরে ৯০তম বর্ষে পদার্পণ করল আনন্দময়ী কালীবাড়ির পুজো। বহু বছর আগে রথের দিন থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে মূর্তি গড়ার কাজ করতেন প্রতিমাশিল্পী। রথের দিন থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে শুরু হতো মায়ের আরাধনার প্রস্তুতি। বর্তমান সময়ে রাজস্থান থেকে স্থায়ী মার্বেলের কালীমূর্তি এনে স্থাপন করা হয়েছে মন্দির কমিটির তরফে।এই বছরও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে। ফলে মন খারাপ উদ্যোক্তা থেকে শিলিগুড়িবাসী সকলের।
এখন মানুষের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে চাইছে মন্দির কমিটি। শত কষ্ট হলেও এবার নিয়মরক্ষার পুজো হবে, বলে জানান মন্দির কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর বিশ্বাস। তিনি বলেন, 'ঐতিহাসিক এই মন্দিরের পুজো দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসতেন দর্শনার্থীরা। শিলিগুড়ির প্রাচীনতম পুজোগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আনন্দময়ী কালীবাড়ি। গত বছরও এভাবেই পুজো সম্পন্ন করা হয়েছিল। আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এবং আমরা আবার আগের মত মেতে উঠব পুজোয়, উৎসবে, আনন্দে।'
Vaskar Chakraborty