ছাত্রজীবনেই—১৮৪৪ থেকে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত বঙ্কিম ছিলেন মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র। পরে প্রশাসনিক চাকরিতে যোগ দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৬০ সালে ডেপুটি মেজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেকটর হিসেবে নেগুয়া আসেন। সে সময় মাটির রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে চলত উটের গাড়ি ও পালকি। সরকারি ডাকবাংলো থেকে বঙ্কিমচন্দ্র উটের গাড়িতে কিংবা পাঙ্কিতে যাতায়াত করতেন। কাজের ফাঁকে তিনি চলে যেতেন সমুদ্রের নির্জনতা খুঁজতে—চাঁদপুরের বাংলো, দরিয়াপুর আর দৌলতপুর। ঝাউবন, বালিয়াড়ি আর সমুদ্রের গর্জনের কাছে প্রকৃতির সৌন্দর্যে ডুবে থাকতেন তিনি।
advertisement
আরও পড়ুনঃ দার্জিলিং ভ্রমণে এবারে আরও এক্সাইটিং…! প্রতিদিন ১২টি টয়ট্রেন জয়রাইড! জানুন নয়া সময়সূচি
নেগুয়ায় থাকাকালীন বঙ্কিমের জীবনে ঘটা নানান ঘটনা শুনলে আজও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ভাই পূর্ণচন্দ্রের লেখা থেকে জানা যায়—সেই সময় নেগুয়া মহকুমাতে বঙ্কিমচন্দ্রের পিছনে ঘুরত এক রহস্যময় সন্ন্যাসী কাপালিক। মাঝেমধ্যে নিশীথের নীরবতায় তাঁর সঙ্গে দেখা করত সে। অন্যদিকে তাঁর বড় ভাইপো শচীশচন্দ্র বর্ণনা করেছেন—এক গভীর রাতে বঙ্কিমের দ্বারে প্রবল করাঘাত, আর দরজা খুলতেই দীর্ঘদেহী এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব—হাতে নরকপাল!
আরও পড়ুনঃ শীতে মাত্র ৩ মাস মেলে ওল জাতীয় সবজিটি, ক্যালসিয়াম-ম্যাঙ্গানিজের খনি, পাতে থাকলে লৌহকঠিন হাড়
সাহিত্যিক সুশীলরঞ্জন মাইতির বর্ণনায় রয়েছে আরও এক শিহরণ জাগান ঘটনা। প্রথম প্রহরের রাত—বঙ্কিম পড়াশোনা করছিলেন। হঠাৎ তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল শুভ্রবসনা এক নারী। পরিচয় জানতে চাইলে কিছুই বলেননি। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন বাগানে—বঙ্কিমও এলেন পিছন পিছন। কিছুক্ষণ পরেই সেই নারীমূর্তি মিলিয়ে গেল অন্ধকারে। সেইসব অদ্ভুত অভিজ্ঞতারই ফল—১৮৬৬ সালের শেষ দিকে জন্ম নেয় কালজয়ী ‘কপালকুণ্ডলা’। বর্তমানে নেগুয়ায় গেলে দেখা যায়, বঙ্কিমচন্দ্র যেন এখনও বেঁচে আছেন এখানকার মানুষের গল্পে, আর নানান স্মৃতিতে। বিকেল হলেই গ্রামের ছেলেমেয়েরা দাদু–ঠাকুমাদের পাশে বসে শুনতে থাকে বঙ্কিমের গল্প—সেই রহস্যময় রাত, সেই সন্ন্যাসী, সেই শুভ্রবসনা নারী যেন আজও নেগুয়ার গাছ-তলায় বাতাসে ঘুরে বেড়ায়।





