কিন্তু এ বার বহু সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। কখনও ভিসা জনিত সমস্যা, আবার কখনও বা কোভিডের ভ্রুকুটি। অদম্য ইচ্ছা যে তাঁর, সমস্ত প্রতিকূলতার জাঁতাকলে থেকেও হার মানেননি তিনি। অপ্রতিরোধ্য ইচ্ছেশক্তিকে সাথে নিয়েই স্বপ্নপূরণ করলেন ইংলিশ চ্যানেল জয়ী বিশ্বের প্রথম মুসলিম মহিলা তথা বাংলার কৃতি সাঁতারু উলুবেড়িয়ার নিমদীঘির তাহরিনা নাসরিন৷ সমস্ত বাধাবিপত্তি কাটিয়ে ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যস্থিত বিশ্ববিশ্রুত জিব্রাল্টার প্রণালী জয় করলেন বাংলার মেয়ে তাহরিনা।
advertisement
আরও পড়ুন: পোড়ো বাড়ি মাস ঘুরতেই চোখ ধাঁধানো প্যালেস! শ্রাবণ সোমবার ছিল অনুব্রতর গৃহ প্রবেশ! চমকে ওঠা তথ্য
জিব্রাল্টার প্রণালী অ্যাসোসিয়েশন তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, মাত্র ৪ ঘন্টা ২৩ মিনিটে বৃহস্পতিবার জিব্রাল্টার প্রণালী জয় করেন তাহরিনা। তাহরিনা কোনও ওয়েটশ্যুট ব্যবহার না করেই এই খেতাব জয় করলেন বলে জানিয়েছে সংস্থা। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) স্পেনের ট্যারিফা থেকে জিব্রাল্টারের জলে নামেন তাহরিনা। প্রচন্ড ঠান্ডা জল আর অসম্ভব স্রোতের মাঝেও অভীষ্ট লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে ছান্দিক গতিতে এগিয়ে চলেন 'জলপরী'। ৪ ঘন্টা ২৩ মিনিটে আফ্রিকার মরক্কোয় শেষ করেন এই রুদ্ধশ্বাস যাত্রা। স্পেন থেকে থেকে ফোনে তাহরিনা জানান, এই সাফল্য তিনি তাঁর গুরু প্রবাদপ্রতিম বাঙালি সাঁতারু মাসুদুর রহমান বৈদ্য, তাঁর বাবা আফসার আহমেদ ও পরিবারকে উৎসর্গ করেছেন।
তিনি বলেন, তাঁদের নিরন্তর ত্যাগ ও সহযোগিতাই তাকে এই দুঃসাধ্য স্বপ্নপূরণে সাহস জুগিয়েছে। তিনি বলেন, "জিব্রাল্টার প্রণালীর দৈর্ঘ্য ১৪ কিমি হলেও আমায় মোট ১৫.১ কিমি টানতে হয়েছে।" যাত্রাপথে সঙ্গী ছিল অ্যাসিস্ট্যান্ট বোট। সেই বোটে ছিলেন তাহরিনার বাবা আফসার আহমেদ ও বোট মাস্টার। যাত্রাপথে তাঁকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, বলে জানান তাহরিনা। তাহরিনা জানিয়েছেন, "ভীষণ ঠান্ডা জল সঙ্গে প্রবল স্রোত। সেই স্রোত ঠেলেই গন্তব্যের পথে এগিয়ে চলা।"
সি সিকনেসের শিকার হন তাহরিনা ও তার বাবা। দু'জনেই বমি করতে থাকেন। তবু দমেননি তিনি। আসে একের পর এক জেলিফিশ, নানা সামুদ্রিক প্রাণী। একটা সময় তাহরিনার গোটা গা চিড়ে যেতে থাকে। উল্লেখ্য, ভিসা পেতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন তাহরিনা। অবশেষে মেলে ভিসা। তারপরই জিব্রাল্টার প্রণালী অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট টাইম পিরিয়ড। তারপরই ৮ অগাস্ট স্পেনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন তিনি। তাহরিনার এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বহু মানুষ। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাহরিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে আমতার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ' সহ অজস্র মানুষ। তার এই জয়ের আনন্দে গা ভাসিয়েছে উলুবেড়িয়ার মানুষ।
রাকেশ মাইতি