কখনও তাঁর তত্ত্বাবধানে ডিম, পিউপা থেকে প্রকৃতিতে পাখা মেলছে প্রজাপতি। আবার তাঁরই বাগানে ফুটছে হাজার হাজার গাছের চারা। সে বাগানে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে ভেষজ, ফুল, ফল ও নানা দুষ্প্রাপ্য সব গাছ। সেই চারা গাছ বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলা জুড়ে। কংক্রিটের জঙ্গলে থেকেও প্রকৃতিতে যেন নতুন প্রাণ সঞ্চারের ভাবনা। সেই ভাবনা বাস্তবায়িত করতে বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন ষাট ছুঁই ছুঁই তাপস বাঙালি।
advertisement
পেশায় শিক্ষক তাপস বাঙালি অনলাইনে বীজ কিনে ছিলেন। গত অক্টোবরে চারা তৈরি করতে বীজ বুনেছিলেন বাগানে। কয়েক মাস ধরে সেই চালাকে লালন পালন। দিন পনেরো আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা পোস্ট। সেই পোস্টেই যোগাযোগ করেন বহু মানুষ। সেই সমস্ত মানুষের হাতে নন্দিনী গাছের চারা তুলে দিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে বাগনানের বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে তাপস বাবু যান উলুবেড়িয়া, তারপর দুপুরে হাওড়া স্টেশন। সেখানে থেকে পৌঁছন শিয়ালদহ।
আরও পড়ুন : নটী বিনোদিনী রূপে কঙ্গনা অধরাই, পূর্ণ হল না প্রদীপ সরকারের শেষ ইচ্ছে
এভাবেই একটা দিন জুড়ে প্রায় ৩৫০ টি নন্দিনী চারা ফুল গাছ শতাধিক মানুষের হাতে তুলে দিলেন। সেই চারা ফুলের গাছ উপহার নিতে হাওড়ার বিভিন্ন প্রান্ত ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে। ফুলের টানেই ছুটে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসেছেন উলুবেড়িয়া, হাওড়া বা শিয়ালদহ। তাঁদের হাতেই খোলা মনে ও হাসি মুখে দুষ্প্রাপ্য নন্দিনী liseanthus flower ফুলের চারা উপহার তুলে দিলেন তাপসবাবু। প্রকৃতিকে সাজাতে এমন ভাবনা খুব কম মানুষই ভাবতে পারেন।
ফুল বা ফুল গাছ নিয়ে মানুষের চর্চার শেষ নেই। বর্তমানে তো মানুষের শখের তালিকায় দারুন ভাবে জায়গা করে নিয়েছে ফুল গাছ। ব্যস্ততার বহু কাজের মধ্যেই দেখা যায়, বাড়ির সঙ্গে ফুলের চাষ বা শখের ফুল বাগান।
শীতকালে বাগানের নানা ফুলের সমাহার থাকলেও গরমে বাগান হয়ে যায় ফাঁকা। দোপাটি বা পরিচিত কয়েকটা ফুল ছাড়া গরমে অন্য ফুল সে ভাবে দেখা যায় না। এই গরমে বাগানে বেশ মানানসই অনেকটা গোলাপের মতো দেখতে বিভিন্ন রঙের এই নন্দিনী ফুল।
আরও পড়ুন : তাঁদের 'প্রদীপ দা'-র মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না বলিউড, শোকবার্তায় উজাড় স্মৃতি
যাঁরা সংগ্রহ করলেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই জানালেন, বহু খুঁজেও মেলেনি নন্দিনী ফুল গাছের চারা। অবশেষে তাপস বাবুর হাত ধরে অপেক্ষার অবসান। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যারা সংগ্রহ করলেন, কেউ কেউ হাতে করে অন্যান্য ফুলের গাছ, বীজ বা গাছের ডাল তাপস বাবুকে উপহার দিলেন। এভাবেই বিনা পয়সায় শখের বাগান ভরে উঠছে। এই আধুনিক যুগেও যেন কয়েকশো বছরের পুরনো ছবি ধরা পরল। সে যুগের সহজ সরল মানুষের বিনিময় প্রথার মত।
গাছ লাগানোর নিয়ম
নন্দিনী বা liseanthus-এ প্রায় ২২- ২৫ রঙের ফুল দেখা যায়। শীতে সেভাবে গাছের বৃদ্ধি হয় না। গরমের হাওয়া পড়লে বাড়তে শুরু করে। অল্প সার আর ঝুরঝুরে মাটি এই গাছের পক্ষে উপযোগী। ছোট অবস্থায় মাসে দু’বার ফাংগেসাইট স্প্রে প্রয়োজন হয়। গাছ বড় হলে মাসে একবার স্প্রে করলেই চলে। চারা গাছ থেকে ফুল ফুটতে সময় লাগে ৩২ থেকে ৩৪ মাস। ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত হয় এই গাছ। প্রতিবছর নতুন করে গাছ লাগানো যায়। আবার পুরনো গাছ থাকলে তাতে নতুন করে পাতা গজিয়েও ফুল আসে।
বাজারদর
চারা গাছ ১০-২০ টাকা এবং কুঁড়ি সহ গাছ ১০০ - ১৫০ টাকা।