কৃষকদের কথায় জানা যায়, এক সময় এই চাষের কাজ করে ব্যাংক ব্যালেন্স জমি বাড়ি করেছেন তাঁরা। কিন্তু বর্তমানে এই সময় চাষের কাজ করে শুধু সংসার চালানোও ঠিকমতো সম্ভব হচ্ছে না। তাই ক্রমশ চাষ ছেড়ে যাবার প্রবণতা বাড়ছে। এক সময় সারা বাংলা জুড়ে ধান পাট-সহ বিভিন্ন ফসল চাষ হত।
আরও পড়ুন: শীতে কোথায় পিকনিক করতে যাবেন ভাবছেন? ঘুরে আসুন সুভাষ দ্বীপ থেকে, রয়েছে নানা চমক
advertisement
হাওড়া জেলা এবং এ বাংলা জুড়ে সব মাঠে চাষ হতে দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে কৃষিকাজের পরিমাণ কমছে। জমি আগাছা জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি পরিবার চাষের কাজে যুক্ত ছিল। আস্থা হারিয়ে মানুষ ক্রমশ দূরে সরেছে চাষের থেকে। তেমনি হাওড়া জেলা জুড়ে চাষের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমেছে। জেলার দু একটি ব্লক ছাড়া। চাষ এক প্রকার হয় না বললেই চলে। আবার ধান চাষের ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। কঠোর পরিশ্রম করে ধান ফলিয়ে ন্যায্য দাম পায়না কৃষকরা।
আরও পড়ুন: আফগানি খাবার এবার কোচবিহারের আকর্ষণ! উপচে পড়ছে খাদ্য রসিকদের ভিড়
তবে এবার বিপরীত চিত্র হাওড়ায়। ধান চাষেই লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। মূলত কালো ধানের চাষ করে ৩-৫ গুণ বেশি পরিমাণ লাভের মুখ দেখছে কৃষকরা। এবার হাওড়ার শ্যামপুর ব্লকে শিখা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শ্যামপুর ভাগীরথী কো-অপারেটিভ জয়েন্ট ফর্মিং সোসাইটি লিঃ এর সহযোগিতায়। প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে কালো ধানের চাষ হয়েছে।
শিখা ফাউন্ডেশন মূলত কৃষিকাজে কৃষকদের লাভের মুখ দেখাতেই নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকে। সেই মত গত কয়েক বছর আগে থেকেই কালো ধানের চাষ এবং উৎপন্ন ফসলের মার্কেটিং-সহ খুঁটিনাটি আয়ত্ত করেন। উৎপন্ন ফসল বিক্রি করতে স্থানীয় একটি রাইস মিলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। সংস্থা এবং কৃষকদের জমিতে উৎপন্ন সমস্ত কালো ধান ৫০ টাকায় কিনে নেবে মিল কর্তৃপক্ষ।
সাধারণত সাদা বা অন্যান্য প্রজাতির ধান ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সেই দিক থেকে অনেকটাই লাভজনক কালো ধান। কালো ধানের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
কৃষকদের কথায় জানা যায়, কালো ধানের দাম দ্বিগুণের বেশি। ফলনও মন্দ নয়। দেশীয় প্রজাতির সাদা ধানের মতোই বিঘা প্রতি ১০-১২ মোন বা তারও বেশি ধান ফলছে। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে এই কালো ধানের চাষে খরচও কম।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্থানীয় কৃষকদের নতুন করে লাভের দিশা দেখাতে কালো ধান চাষ শুরু করার পরামর্শ দেন। লাভের কথা শুনে এবার প্রথম বার এক সঙ্গে প্রায় ৩০-৩৫ জন কৃষক কালো ধানের চাষ শুরু করেন। আগামীতে এই কালো ধান চাষে আরও বেশি কৃষকযুক্ত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কালো ধান চাষে উদ্যোক্তা সংগঠন ‘ শিখা ফাউন্ডেশন ‘ এর সভাপতি ভাস্কর কুইলা জানান, সাদা ধানের তুলনায় ঔষধি কালো ধান অনেক বেশি লাভজনক। এই ধান চাষে খরচও অনেক কম। প্রথমবার কৃষকরা চাষ করে লাভবান হয়েছে। পরের বছর আরও বেশি করে ধান চাষ করবে তারা। এই লাভের ফলে এবার আরও বেশি করে কালো ধান চাষে কৃষক আগ্রহ দেখাবে। পাশাপাশি অন্যান্য চাষ কিভাবে লাভজনক করা যায় সেই দিক গুরুত্ব রাখা হচ্ছে। কৃষকদের সহযোগিতা কিভাবে করা যায় সেই চেষ্টায় আগামীতে রয়েছে।
রাকেশ মাইতি