তবে সে সবকিছু বর্তমানে অতীত। সে সময় শুধু মাত্র মুন্সিরহাটে প্রায় হাজার ঊর্ধ্ব কারখানা গড়ে উঠেছিল। স্থানীয় মানুষের হাতের কাজ বলতে চশমার কাঁচ গ্রান্ডিং করাই ছিল প্রধান কাজ। এক একটি কারখানায় ৫-২৫ জন বা তারও বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। প্রতিটি কারখানায় সকাল থেকে কাজ শুরু হত, চলত রাত পর্যন্ত।
advertisement
আরও পড়ুন ঃ শুধু শনি ও রবিবার ক্লাস করেই মাধ্যমিক বসার সুযোগ! মুক্ত বিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন যখন খুশি
জানা যায়, কলকাতা থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চশমার কাঁচে গ্র্যান্ডিং-এর বরাত বা অর্ডার নিয়ে আসতেন। সেই অর্ডার মত কাজ হত গ্রামের কারখানা গুলিতে। মুন্সিরহাট ছাড়াও হাওড়ার বেশ কিছু এলাকায় এই কাজ ব্যাপক ভাবে চালু হয়েছিল। তবে বর্তমানে চশমায় ফাইবার পাওয়ার ব্যবহারের দাপট বেড়েছে।
ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে কাঁচে পাওয়ার বা গ্র্যান্ডিং এর কাজ। সে সময় মুন্সিরহাট গ্রামে প্রবেশ করলেই কানে বাজত কারখানায় কারখানায় চশমার কাঁচ গ্রাণ্ডিং করার কাজের গমগম শব্দ। কাজের ব্যাপক চাহিদার কারণে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল ব্যবসা। তেমনি প্রায় অধিকাংশ পরিবারের রোজগেরে যুক্ত ছিল এই কাজের সঙ্গে। এলাকায় হাজার ঊর্ধ্ব কারখানার গল্প, এখন যেন অতীত কথা।
আরও পড়ুন ঃ তৃণমূলকে পিছনে ফেলে হাওড়ার বিতর্কিত সারেঙ্গা পঞ্চায়েত দখল করল বিজেপি
বর্তমানে হাতে গোনা দু-একটি কারখানায় কোন রকমে কাজ চলছে। সেভাবে বরাত নেই কাজের, তেমনি মজুরি বৃদ্ধিও নেই, জানাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কাজ হারিয়েছে এলাকার কয়েক হাজার দক্ষ কারিগর। তাদের মধ্যে কেউ সংসার চালাতে বর্তমানে রাজমিস্ত্রি জোগাড়ে বা কারখানার শ্রমিক, কেউ ক্ষেত মজুর, কেউ আবার টোটো নিয়ে পথে নেমেছে।
একসময় চশমার কাজ করেই স্বাচ্ছন্দে কেটেছে সংসার। কিন্তু সেই সমস্ত সংসারেই অচল অবস্থা নেমে এসেছে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়ে। প্রায় ৪০ বছর এই চশমার পাওয়ার বা গ্র্যান্ডিং এর কাজে যুক্ত থাকা দক্ষ কারিগর ও ব্যবসায়ী মুন্সিরহাটের মেহরাজ মল্লিক।
আরও পড়ুন ঃ ঘন জঙ্গল, সরু জংলি রাস্তা, কলকাতার পাশেই হচ্ছে ‘নেচার ট্রেইল’! রইল বেড়ানোর বিস্তারিত তথ্য
তিনি জানান, ‘এই কাজের প্রায় সমস্তটাই জানা। আমার মত বহু কারিগর রয়েছে যারা দীর্ঘদিন এই কাজে যুক্ত ছিলেন। সকলেই বর্তমানে বাতিল। হাতে কাজ নেই। বরাতের অভাবে কারখানা বন্ধ হয়েছে। গত ৫-৬ বছর আগে পর্যন্ত কোনও রকমে চলেছে। কারণ চশমায় ফাইবারের ব্যবহার অত্যাধিক বেড়ে গেছে। কাঁচের চাহিদা কম হতে হতে একবারে প্রায় বন্ধ। শেষমেষ পড়ে থেকে মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ল। এভাবেই নষ্ট হয়ে গেলে এক হাজারেরও বেশি কারখানা।
রাকেশ মাইতি