১৭৫৩ খ্রীষ্টাব্দে শেওড়াফুলির রাজা রাজচন্দ্র রায় শ্রীরামপুর বটতলার কাছে রামসীতার মন্দির নির্মাণ করেন। এই শ্রীরামচন্দ্র জিউ থেকে শ্রীরামপুর নামটি উদ্ভব হয়েছে। ১৭৫৭ খ্রীষ্টাব্দে ডেনীয় বা দিনেমাররা ডেনমার্কের তৎকালীন রাজা পঞ্চম ফ্রেডরিকের নামানুসারে এই শহরের নাম রাখেন ফ্রেডরিক নগর। শ্রীপুর, আকনা, গোপীনাথপুর, মোহনপুর ও পেয়ারাপুর এই পাঁচটি স্থান নিয়ে ফ্রেডরিক নগর গঠিত হয়। বার্ষিক ১৬০১ সিক্কা টাকা খাজনায় দিনেমাররা শেওড়াফুলি রাজার কাছ থেকে এই স্থানগুলি ইজারা নেয়। ১৮৪৫ খ্রীষ্টাব্দে ইংরাজরা ডেনীয়দের কাছ থেকে এই শহরটিকে কিনে নেন। আগে শ্রীরামপুর মহকুমা ছিল না। ইংরাজদের হাতে আসার পর ১৮৪৭ খ্রীষ্টাব্দে দ্বারহাট্টা মহকুমার বদলে শ্রীরামপুর মহকুমা হয়। বিশপ হেবার শ্রীরামপুর সম্পর্কে বলেছিলেন যে এই শহরটি কলকাতার চেয়ে বেশি ইউরোপীয়।
advertisement
শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে ২ কিমি দক্ষিণে বটতলার কাছে রামসীতা লেনে অবস্থিত রামসীতার মন্দির। অল্প উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, ত্রিখিলানযুক্ত, পশ্চিমমুখী, ছোট দালান মন্দির। গর্ভগৃহের সামনে অলিন্দ, তার সামনে রোয়াক। মন্দিরটি গাছ-গাছালিতে ভরা। গর্ভগৃহে ঢোকার একটিই প্রবেশদ্বার। গর্ভগৃহে একটি কাঠের সিংহাসনে রামচন্দ্র, লক্ষণ, সীতাদেবী ও হনুমানের মূর্তি বিরাজমান। এছাড়া অন্যান্য বিগ্রহও আছেন।
আরও পড়ুন: রান্না ঘরেই টাটকা থাকবে কাঁচালঙ্কা! প্রায় দু’মাস ধরে রেখে খাওয়া যাবে! জানতে হবে এই সহজ পদ্ধতি!
শেওড়াফুলির রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা মনোহর চন্দ্র রায়ের পুত্র রাজা রাজচন্দ্র রায় বাংলার ৭ জ্যৈষ্ঠ, ১১৬০ বঙ্গাব্দে ইংরেজির ১৭৫৩ খৃষ্টাব্দে মন্দির ও বিগ্রহগুলি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিগ্রহের সেবা নির্বাহের জন্য তিন শ’ বিঘা জমি দেবোত্তর করেন। কিন্তু সেই জমির কিছুই আজ মন্দির কর্তৃপক্ষের হাতে নেই। শ্রীরামচন্দ্রের নামে শ্রীপুর, মোহনপুর ও গোপীনাথপুর এই তিনটি গ্রামের মিলিত নাম হয় শ্রীরামপুর। ডক্টর হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত তার রচনায় লিখেছেন, “শ্রীপুর, মোহনপুর ও গোপীনাথপুর নামক তিনটি গ্রাম শ্রীরামচন্দ্র বিগ্রহের সেবায় দেবোত্তর করেছিলেন বলে গঙ্গাতীরস্থ শ্রীরামপুর তীর্থস্থান।”
আরও পড়ুন: হঠাৎই পায়ে কিসের একটা কামড়! তারপরেই ঘটল কাণ্ড! জানুন
তবে এত ঐতিহ্যপূর্ণ মন্দিরের বর্তমান অবস্থা খুবই বেহাল। মন্দিরের ছাদে ধরেছে ফাটল। দেয়াল কোথাও ধ্বসে পড়েছে। অষ্টধাতুর বিগ্রহ আজও নিত্য সেবা হয়। তবে বর্ষা আসলেই ছাদের জল টোপে-টোপে পড়ে বিগ্রহর মাথায়। ঔরঙ্গজেবের আমলে তৈরি এই মন্দির আজও বহন করে আসছে প্রাচীন শ্রীরামপুর শহরের ইতিহাসের কথা। একইসঙ্গে এই মন্দির থেকেই নাকি নামকরণ করা হয়েছিল শহর শ্রীরামপুরে। মন্দিরের বর্তমান সেবাইত বলেন, সাত প্রজন্ম ধরে তারা এই রামসীদা মন্দিরের নিত্য সেবা করে আসছেন। মন্দিরের ভগ্ন দশা কথা তার প্রশাসন কেউ জানিয়েছিলেন। তবে সদ উদ্যোগের অভাবে মন্দিরের হাল এখনো ফেরেনি। এই মন্দিরের বিগ্রহ এমনই যা আর অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে না। তবে মন্দিরের হাল যদি না ফেরে তাহলে একসময় ইতিহাস বহনকারী সমস্ত নিদর্শনই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।
রাহী হালদার





