রাজনীতি মানেই যখন ক্রমশ প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে কুৎসা ও গলার শির ফুলিয়ে স্লোগান তোলা ধারা হয়ে উঠছে, সেখানে ঝর্ণা মণ্ডলের প্রার্থী হওয়াটা সত্যিই চমকে দেয়। তিনি কথা বলতে পারেন না, শুনতেও পারেন না। বর্তমানে রাজনীতিবি দ বললেই গড়পড়তা যে ছবিটা আমাদের চোখের সামনে ভাসে তা থেকে সম্পূর্ণ উল্টো অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছেন এই মহিলা। তবুও ভোটের লড়াইয়ে নামতে পিছপা হননি তিনি। তাঁকে ময়ূরেশ্বর-২ ব্লকের কুন্ডলা পঞ্চায়েতের ১৭৮ নম্বর আসনে প্রার্থী করেছে সিপিএম। রাজ্যের প্রাক্তন শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, ঝর্ণা মণ্ডল ও তাঁর পরিবার বরাবরের বাম সমর্থক। এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে ঝর্ণাই প্রথম ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন।
advertisement
আরও পড়ুন: অসুখ থেকে সেরে প্রভু যাবেন মাসির বাড়ি! তাই নাওয়া-খাওয়া নেই ওদের, কিন্তু কেন
বাংলার বুকে প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষার দাবিতে সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের লড়াই অজানা নয়। তাঁর নেতৃত্বে বাম দলটি প্রতিবন্ধী অধিকার রক্ষা সংগঠন পরিচালনা করে। কিন্তু তা বলে একজন মূক ও বধির মহিলাকে সরাসরি পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করে দেবে তা সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো বিষয়। এই প্রসঙ্গে সিপিএমের ময়ূরেশ্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক জয়ন্ত ভল্লা বলেন, এই সরকারের প্রতিবাদ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিবন্ধীরাও যখন গণতন্ত্র রক্ষায় সামিল হতে চাইছেন তখন বুঝতে হবে রাজ্যের অবস্থা কতটা খারাপ।
এদিকে ঝর্ণা মণ্ডল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে এলাকায়। অনেকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। তবে একজন মূক ও বধির মহিলা ভোটে জিতলে এলাকার উন্নয়ন কতটা করতে পারবেন তা নিয়ে সন্দিহান কেউ কেউ। যদিও এই প্রসঙ্গে স্ত্রীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন স্বামী পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল। তিনি বলেন, স্ত্রীকে এলাকার মানুষ চেনেন। আমি আছি তাঁর মুখপাত্র হয়ে। সব কাজে সাহায্য করবো। তাঁর যুক্তি, একজন মানুষ যখন সমাজে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করে, নিজের কাজ নিজে করে, চলাফেরা করতে পারে তখন সে চিন্তাভাবনায় আর পাঁচ জনের মতোই স্বাভাবিক। সেখানে কথা বলতে না পারা বা কানে শুনতে না পাওয়াটা কোনও বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
শুভদীপ পাল