দুই পরীক্ষার্থীই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। সুজয় রক্ত নিয়েছেন পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে এবং কোয়েল রক্ত নিয়েছেন পরীক্ষা শুরুর দুইদিন আগে। সুজয়ের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তার মধ্যেও নিজের জীবন সংগ্রামকে ছাপিয়েও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। সত্যিই এই লড়াই অনুপ্রেরণার।
বর্তমানে ৮-১০ দিন অন্তর অন্তর রক্ত নিতে হয় সুজয় পরমানিককে। বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের ছাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুজয় পরমানিক জানান, “রক্তের অভাবে খুবই কষ্ট হয়। দুর্বল লাগে, সাইকেল চালাতে পারি না। অর্থের অভাবে টিউশনি নিতে পারিনি। হাল ছাড়িনি যাতে পড়াশোনা করে বাবার পাশে দাঁড়াতে পারি।” সুজয়ের বাবা জয়দেব পরমানিক একজন ইলেকট্রিশিয়ান। কাজের অভাবে আর্থিক পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও সুজয়ের মা মামণি পরমানিক, কিডনির অসুস্থতায় ভুগছেন। পুত্র সুজয়ের জেদের সামনে অসুস্থতা হার মানবে বলেই আশা করছেন তিনি।
advertisement
অপরদিকে বাঁকুড়া শহরের আর এক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কোয়েল কাইতি পরীক্ষা শুরুর দুইদিন আগে রক্ত নিয়েছেন। কোয়েল নিজের পরিস্থিতিতে মাথা নত করতে নারাজ। থেমে যাওয়া মানেই হার মেনে নেওয়া, মাধ্যমিকের মতই উচ্চ মাধ্যমিকে তাক লাগানো রেজাল্ট করতে মাথা গুঁজে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন বাঁকুড়ার এই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত পরীক্ষার্থী।
বাঁকুড়া শহরে থ্যালাসেমিয়া সংক্রান্ত চিকিৎসা নিয়ে যথেষ্ট হতাশ কোয়েল কাইতির মা আগমনী কাইতি জানান, থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার ওষুধ থেকে শুরু করে চিকিৎসকের যথেষ্ট অভাব বাঁকুড়ায়। এছাড়াও রক্ত জোগাড় করতে সহৃদয় ব্যাক্তি এবং কিছু সংস্থার উপর নির্ভর করেই এগিয়ে যেতে হচ্ছে।
জীবনভর একটি রোগকে বহন করা। মাসে দুইবার করে রক্ত নেওয়া সম্ভব নয় সব আক্রান্তদের। অসচেতনতার অভিশাপ থালাসেমিয়া। তাহলে কিভাবে এড়ানো সম্ভব এই রোগ? উত্তর দিলেন বাঁকুড়া বাঁকুড়া ভলেন্টারি ব্লাড ডোনার সোসাইটির সেক্রেটারি বিপ্রদাস মিদ্যা। তিনি জানান, “কুষ্ঠি পরীক্ষা নয়, বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করতে হবে। জনসচেতনতাই এই রোগ রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।”
বাঁকুড়ার এই দুই পরীক্ষার্থীর কাছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুধুমাত্র উজ্জ্বল ভবিষ্যতের একটি সোপানই নয়। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে বসাটাও তাদের কাছে এক বিরাট যুদ্ধ। অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের কাছে এই গল্প অনুপ্রেরণার।
নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়





