

ডিসেম্বরের এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে, রাজ্যে ঠাণ্ডা এখনও তেমন ভাবে নেই বললেই চলে। তবে, রাত হলে তাপমাত্রা কমতে থাকে। ভোরেও তাপমাত্রা কমে যায়। ফলে গরম জামা পরা, আবার বেলা বাড়লে গরম লাগা, এই সব কিছুর মাঝে ঠাণ্ডা-গরম লেগে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। ছোট থেকে বড়, এই সময়টায় সকলেরই এমন সমস্যা হয়ে থাকে। জ্বর, সর্দি, কাশি খুব সহজেই হয়ে যায়। তাই এই ওয়েদার চেঞ্জের সময় নিজেকে সুস্থ রাখা জরুরি। আর শরীর সুস্থ রাখতে ইমিউনিটি (Immunity Boosting) বাড়ানো প্রয়োজন।


শীত পড়ার সময়ে প্রায়ই সর্দি, কাশির (Common Flu) সমস্যা শুরু হয়ে যায়। যা সারা শীতই থেকে যেতে পারে। ফলে এই সময়ে একটু বাড়তি নজর দিতে হয় ইমিউনিটির দিকে। আর ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য প্রথমেই নজর দেওয়া জরুরি ডায়েটে। খাওয়াদাওয়া ঠিক থাকলে ভিতর থেকেই শরীর ঠিক থাকে। তা ছাড়াও এমন অনেক সবজি বা ফল থাকে, যা প্রাকৃতিক ঔষধি হিসেবে শরীরে কাজ করে। এমনই কিছু খাবারের তালিকা রইল, যা ইমিউনিটি বাড়াতে ও সুস্থ থাকতে ডায়েটে অ্যাড করা যেতে পারে।


রসুন - অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল (Antimicrobial) ও অ্যান্টিভাইরাল (Antiviral) উপাদান থাকে রসুন (Garlic)-এ । যা ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza) থেকে সুস্থ হতে সাহায্য করে। University of Western Australia-য় প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, সাধারণত ঠাণ্ডা-গরম লাগলে রসুন খেলে তা দারুণ কাজ করে। সমীক্ষায় দু'ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। একটি রসুন ও অন্যটি প্লাসিবো। তাতে দেখা যায় ফ্লু থেকে উপশম দিতে, সারিয়ে তুলতে রসুন বা গার্লিক গ্রুপের অনেক বেশি কার্যকারিতা রয়েছে।


আদা - এখনও বাড়ির বড়রা, মা-ঠাকুমারা প্রায়ই বলে থাকেন, গলা খুসখুস করলে বা কাশি হলে আদা (Ginger) দিয়ে চা খেতে। আর বেশিরভাগ বাড়িতেই আদা দিয়ে চা পান করাটা বেশ কমন বিষয়। আদায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি (Anti-inflammatory) উপাদান থাকে। যা গলা সর্দি-কাশির সময় গলা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ফলে যখনই এমন সমস্যা হবে, তখন যদি আদা চা পান করা যায়, তাহলে উপশম হতে পারে।


স্যুপ - ডায়েট করলে বা পছন্দের খাতিয়ে অনেকেই সারা বছর স্যুপ খেয়ে থাকেন। অনেকের আবার শুধু শীতকালেও স্যুপ (Soup) খাওয়ার অভ্যাস থাকে। দ্রুত হজম হওয়া, পেট ভালো রাখার পাশাপাশি কিন্তু স্যুপের আরও গুণ রয়েছে। এতে ইলেক্ট্রোলাইটস (Electrolytes) থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের সবজি, চিকেন থাকে বলে শরীর অসুস্থ থাকলে বা জ্বরের সময় স্যুপ খেলে এনার্জি পাওয়া যায়। American College of Chest Physicians-দের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ঠাণ্ডা লাগলে চিকেন স্যুপ অত্যন্ত উপকারী। এটি ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করে।


লেবু - এমনিতেই ইমিউনিটি বাড়াতে Vitamin C-র প্রয়োজন। তা ছাড়াও জ্বর হলে বা সর্দি-কাশি হলে ভিটামিন C-এর থেকে উপশম দিতে পারে। আর লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C থাকে। পাশাপাশি লেবুতে ইলেক্ট্রোলাইট (Electrolytes)- ও থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, নাক থেকে জল পড়া কমায় ও অতিরিক্ত ঘাম হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে এই সময়ে লেবু খেলে উপকার মিলতে পারে। খাবারের সঙ্গে লেবু বা সকালে গরম জলে লেবু (Lemon) চিপে খাওয়া যেতে পারে।


মধু - জ্বর যাতে না হয় বা ঠাণ্ডা-গরম যাতে না লাগে, তার জন্য বহু কাল ধরে মধু (Honey)-র ব্যবহার হয়ে আসছে। সমীক্ষাও বলছে, ফ্লু বা সাধারণ জ্বর কমাতে এর জুড়ি মেলা ভার। মধুতে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল (Antimicrobial) ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (Anti-inflammatory) উপাদান রয়েছে। যা সর্দি কমায়, কাশি থেকে উপশম দেয়। অগস্টে Oxford University Medical School-এর প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মধু যে শুধু এই উপসর্গগুলি কমায় তা নয়, অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও কাজ করে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। চায়ের সঙ্গে বা গরম জলের সঙ্গে সকালে ঘুম থেকে উঠে মধু খেলে তা শরীর সুস্থ রাখে।


হলুদ - হলুদেও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (Anti-inflammatory) উপাদান থাকে যা জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। The Journal of Clinical Immunology-তে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, হলুদে কারকিউমিন (Curcumin) থাকে, থাকে যা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি হলুদ ইমিউনিটি বাড়াতেও সাহায্য করে। রান্নায় হলুদ (Turmeric)-এর ব্যবহার সর্দি-কাশির পাশাপাশি অন্যান্য রোগও সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। আর জ্বর হলে গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে খেলে উপশম মিলতে পারে।


লঙ্কা - হাঁচি, কাশি, নাক থেকে অনবরত জল পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা গা-হাত-পা ব্যথা কমন ফ্লুর লক্ষণ। এই গা-হাত-পা ব্যথা বা নাক থেকে জল পড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে লাল লঙ্কা বা যে কোনও ধরনের মরিচ (Chilli Peppers )। ২০১৬-য় প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, লঙ্কায় ক্যাপসাইসিন থাকে, থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস (Antioxidant) ও অ্যান্টি- ইনফ্ল্যামেটরি (Anti-inflammatory) উপাদান। যা গা-হাত, পা ব্যথা কমায়। ক্যাপসাইসিন (Capsaicin) মিউকাস (Mucus) বের হওয়া কমায়, ফলে লঙ্কা নাক থেকে জল পড়া আটকায়। তাই জ্বর হলে খাবারে সামান্য লঙ্কা দিয়ে খেলে উপশম মিলতে পারে। তবে, অনেকেরই জ্বরের সঙ্গে ডায়ারিয়াও হয়। সে ক্ষেত্রে লঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া ভালো।