Independence Day : জাতীয় পতাকার প্রথম রূপকার হেমচন্দ্র কানুনগো আজও ইতিহাসে উপেক্ষিত
Last Updated:
স্বাধীন ভারতের এই জাতীয় পতাকার রূপকার হিসেবে পিঙ্গালী বেঙ্কাইয়াকে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতবর্ষ।
#পশ্চিম মেদিনীপুর: এবার ভারতের স্বাধীনতা দিবস ৭৫ এ পা দিল। সর্বত্র উত্তোলিত হবে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা তিরঙ্গা। স্বাধীন ভারতের এই জাতীয় পতাকার রূপকার হিসেবে পিঙ্গালী বেঙ্কাইয়াকে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতবর্ষ। কিন্তু জাতীয় পতাকা তৈরি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আজও উপেক্ষিত হেমচন্দ্র কানুনগো। আসল নাম হেমচন্দ্র দাস কানুনগো। স্বদেশ প্রেমী এই বীর বিপ্লবীই ভারতবর্ষের প্রথম জাতীয় পতাকার স্কেচ তৈরি করেন বিদেশের মাটি থেকে। সালটা ১৯০৭। জার্মানির স্টুয়ার্টগার্টে সেই পতাকা তুলে ধরেছিলেন ভিকাজী রুস্তম মাদাম কামা, একজন ভারতপ্রেমী স্বাধীনতা সংগ্রামী পার্সি মহিলা।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, আলিপুর বোমা মামলার অন্যতম রূপকার, হেমচন্দ্র কানুনগোকে "অগ্নিযুগের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য" বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব এই উপমহাদেশের ইতিহাস।
আরও পড়ুন Large Mushroom: বৃষ্টি না থাকলেও দেখা মিলল বিশাল আকৃতির ব্যাঙের ছাতা!
১৮৭১ সালে তদানীন্তন নারায়ণগড় থানার রাধানগর গ্রামে তাঁর জন্ম। জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কোথাও উল্লিখিত ৪ আগষ্ট আবার কোথাও ১২ জুন। বাবা ক্ষেত্রমোহন, মা কমলেকামিনী দাস কানুনগো। কমলেকামিনী ছিলেন দাঁতন থানার খন্ডরুই গড়ের রাজা (জমিদার) কালীপ্রসন্ন সিংহ গজেন্দ্র মহাপাত্রের বোন। শৈশবে বড়মোহনপুর হাইস্কুল (তদানীন্তন নাম বড়মোহনপুর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল) এ ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েই মেদিনীপুর টাউন স্কুলে ভর্তি হন। এরপর মেদিনীপুর কলেজে ভর্তি হন। যদিও পরে ডাক্তারি পড়তে প্রভাবশালী মামার ইচ্ছা পূরণ করতে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। না, সম্পূর্ণ হয়নি। তিনবছর পর তিনি কলকাতার সরকারী আর্ট কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানেও মাত্র ছ' মাস। কলকাতা ছেড়ে মেদিনীপুরে ফিরে আসেন। কারণ ততদিনে তাঁর বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষের কাছে স্বদেশী মন্ত্রে দীক্ষা হয়ে গিয়েছে। মেদিনীপুরে কলিজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা, কলেজে রসায়নের ইনষ্ট্রাক্টার, জেলা বোর্ডের চাকরি কিছুদিন করেই ছেড়ে দেন।
advertisement
advertisement
মেদিনীপুরের আর এক দিকপাল ঋষি রাজনারায়ণ বসুর দুই ভ্রাতুষ্পুত্র জ্ঞানেন্দ্রনাথ এবং সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়। হেমচন্দ্র নাম লেখান অনুশীলন সমিতিতে। ১৯০৩ সালে মেদিনীপুরে আসেন ভগিনী নিবেদিতা। মিঞাবাজার এলাকায় তিনি একটি আখড়ার উদ্বোধন করেন। এদিকে হেমচন্দ্রের পরিবার পরিজনেরা তাঁর বিয়ে দিয়ে ঘর পাতার চেষ্টা করেন৷ তমলুকের পাঁচবেড়িয়ার শরৎকুমারী দেবীর সঙ্গে হেমচন্দ্রের বিয়ে হয়। দুইকন্যা ও এক পুত্রের জন্ম হয়। কন্যাদ্বয়ের মৃত্যু হয়। তবুও ভেঙে পড়েননি এবং বাঁধাও পড়েননি সংসারে।
advertisement
আরও পড়ুন Jalpaiguri News: জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি পার্কে আবার ভিড়, খুশি এলাকাবাসী
ভগিনী নিবেদিতার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি এবং তাঁর দুই বন্ধু জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু বদ্ধপরিকর হন ইংরেজকে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়েই ভারত ছাড়া করবেন। ১৯০৫ এ ভারতছাড়ো আন্দলোনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর তর সইল না। ১৯০৬ সালেই তিনি ইউরোপ যাত্রার সিদ্ধান্ত নেন। উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড এর বিপ্লবীদের কাছ থেকে সশস্ত্র সংগ্রামের তথ্য সংগ্রহ এবং প্যারিসে বোমা তৈরির কৌশল শেখা। শোনা যায়, তাঁর বিদেশ যাত্রা এবং সংসারের খরচ চালানোর জন্য মামা যথেষ্ট উৎসাহ দেখালেও বরাবর একরোখা মামার বাড়ির সম্পত্তি না নিয়ে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশে যান। বাড়িতে তখন স্ত্রী ও পুত্র।
advertisement
১৯০৬ সালে বিদেশেই হেমচন্দ্রের সঙ্গে মাদাম কামার দেখা হয়। ১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুয়ার্টগার্টে বিশ্ব সমাজতন্ত্রী সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধি হয়ে মাদামকামা যে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা তুলে ধরে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বক্তব্য রেখেছিলেন তার স্কেচ তৈরি করেছিলেন দক্ষশিল্পী হেমচন্দ্র কানুনগো। সেটাই দেশের প্রথম জাতীয় পতাকা। হেমচন্দ্র কানুনগোর স্কেচ করা জাতীয় পতাকার উপরে ছিল বিপ্লবের প্রতীক লাল রং। এই রঙের উপর ছিল তদানীন্তন দেশের আটটি প্রদেশের প্রতীক আটটি আধফোটা পদ্ম। মাঝে ছিল স্বদেশ প্রেমের প্রতীক গেরুয়া। এই রঙের মধ্যে দেবনগরী হরফে লেখাছিল ''বন্দে মাতরম"। এক্কেবারে নীচে ছিল স্বাধীনবদেশের প্রতীক নীল রং। সেই রঙের উপর আঁকা হিন্দুদের প্রতীক সূর্য আর মুসলিমদের প্রতীক অর্ধচন্দ্র। পরাধীন ভারতবর্ষে সেটাই প্রথম জাতীয় পতাকা। এখনও পুনের তিলক মন্দিরে এই স্কেচ রাখা আছে।
advertisement
বেঙ্কাইয়া জাতীয় পতাকার রূপ দিয়ে পরিবর্তন করে মাঝে সাদা রঙে চরকার জায়গায় অশোক চক্র আঁকেন। তা গৃহীত হয় ১৯৪৭ এর ২২ জুলাই। হেমচন্দ্র অনেক আগে সেই পথ প্রশস্ত করলেও জাতীয় পতাকার ইতিহাসে হেমচন্দ্র কানুনগো উপেক্ষিত। বিদেশ থেকে বোমা তৈরি শিখে এসে তিনি কলকাতা ও চন্দন নগরে বোমা তৈরির শিবির করেন। ১৯০৯ সালে আলিপুর বোমা মামলা তারই অন্যতম ফল। তিনি তাঁর শিষ্য ক্ষুদিরাম বসুর হাতেও বোমা তুলে দিয়েছিলেন। আলিপুর বোমা মামলায় তাঁর দ্বীপান্তর হয়। ১৯২০ সালে দীর্ঘ ১১ বছর পর আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পেয়ে রাধানগর গ্রামে নিজের তৈরি বাড়িতেই শেষ জীবন অতিবাহিত করেন।
advertisement
১৯৫১ সালে ভারতমাতার এই কৃতি সন্তানের মৃত্যু হয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেমন হেমচন্দ্র আজ উপেক্ষিত, তেমনি রাধানগর গ্রামে উপেক্ষিত তাঁর ভিটেও,এমনই আক্ষেপ স্থানীয়দের।
Partha Mukherjee
Location :
First Published :
August 10, 2022 8:01 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/পশ্চিম মেদিনীপুর/
Independence Day : জাতীয় পতাকার প্রথম রূপকার হেমচন্দ্র কানুনগো আজও ইতিহাসে উপেক্ষিত