#চিল্কিগড়: নির্জন অরণ্যের মধ্যে দণ্ডায়মান এক ইতিহাস৷ এটি ইতিহাসের এমন এক অধ্যায়, যা শহুরে সভ্যতার কাছে এখনও অনেকটাই অজানা৷ নীলবসনা চতুর্ভুজা দেবী দুর্গার এই ঐতিহ্য নিয়ে আজও পর্যটকদের কাছে ব্যতিক্রমী ঠিকানা ঝাড়গ্রামের চিল্কিগড়৷ প্রকৃতি তার সব রূপ যেন ঢেলে দিয়েছে। নদী, ছায়া ঘন জঙ্গল, গাছে গাছে রঙবেরঙের প্রজাপতি, কী নেই সেখানে! জঙ্গলের মধ্যে কনকদুর্গা মন্দির, ডুলুং নদী এবং জঙ্গলের টানে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে বছরভর। কিন্তু, রাতে থাকার ঠিকঠাক ব্যবস্থা না থাকায় মুখ ফেরাচ্ছিলেন পর্যটকরা। এবার সেই কালিমা ঘুচিয়ে নবরূপে তৈরি চিল্কিগড়। জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় দু’কামরার অতিথিশালা রয়েছে।
প্রশাসনের উদ্যোগে মন্দির চত্বরে সৌন্দর্যায়নের কাজ হয়েছে। বোটিংয়ের ব্যবস্থাও হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির টাকায় মন্দির চত্বরে বসানো হয়েছে বিশালাকৃতি ডাইনোসর, হাতি, হরিণ ও কুমিরের মডেল। শাল, মহুল, কেঁদ, অশ্বথ, আমলকি, হরিতকির মতো প্রায় সাড়ে তিনশো প্রজাতির গাছ রয়েছে চিল্কিগড় সংলগ্ন অরণ্যে(West Medinipur News)৷ রয়েছে ১০৮ রকমের দুষ্প্রাপ্য ভেষজ গাছ-গাছড়ার সমারোহ৷ মাঝে ঐতিহ্যের গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে চিল্কিগড় রাজবাড়ি৷ এরই মাঝে কনকদুর্গার মন্দির৷ পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে ছোট ডুলুং নদী৷ তবে হ্যাঁ, বাঁদরকুলের দৌরাত্ম থেকে শতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়৷
আরও পড়ুন: জানলা খুললে শুধুই পাহার আর পাহাড়, গরমে অল্প খরচে বাসে চেপে চলুন পেডং
অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি চিল্কিগড়ের সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ স্বপ্নাদেশ পেয়ে তার ৩ রানীর হাতের কাঁকন দিয়ে তৈরি করেন দেবী কনকদুর্গার মূর্তি৷ চতুর্ভুজা এই দেবী অশ্ববাহিনী৷ বাঁদিকের দুই হাতে রয়েছে খর্পর ও অশ্বের লাগাম৷ ডানহাতে খড়্গ ও বরাভয়৷ অলঙ্কারে সজ্জিত দেবীর গায়ে ছিল নীল বস্ত্র৷ ১৯৬০ সালে আসল মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়৷ ১৯৯৬ সালে গোপীনাথের বংশধররা অষ্টধাতুর কনকদুর্গার একটি রেপ্লিকা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করেন৷ ঝাড়গ্রাম থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চিল্কিগড়। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ সুপ্রাচীন মা কনকদূর্গার মন্দির, প্রায় হাজার ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ ও জীব বৈচিত্র। রাস্তার দুপাশে রয়েছে শাল মহুয়ার জঙ্গলে কচি সবুজ পাতার সমাহার। মহুলের মাতাল করা মিষ্টি গন্ধে নেশা লেগে যায়। সবুজে ঘেরা বাগানের মাঝে সুন্দর ফোয়ারা দেখার জন্য কিছুক্ষণ বসতে পারেন। মন খুশিতে ভরে উঠবে।
আরও পড়ুন: গরমে নাজেহাল অবস্থা! স্বস্তি পেতে সেরা ঠিকানা জঙ্গলে ঘেরা নির্জন পাহাড়ি গ্রাম 'পাবং'
দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি ছেড়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য সবুজের তলায় বিশ্রাম নিতে হলে চলে আসতে হবে চিল্কিগড়ে। পর্যটকদের অ্যাডভেঞ্চারের জন্য জঙ্গলের ভেতরে খাল খনন করে বোটিং এর ব্যাবস্থাও করা হয়েছে এখানে।এখানকার জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য সরকার একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ এখানে। পার্কিং এর ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে রয়েছে প্রচুর হনুমান। পুজো দিয়ে ফেরার সময় যদি হাতে ফল থাকে সাবধান, হনুমান দৌড়ে এসে হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালায়।
আরও পড়ুন: গরমের ছুটিতে কোথায় যাবেন ভাবছেন? ঘুরে আসুন লেপচাখা 'হেভেন অফ ডুয়ার্স'
নতুন প্রবেশ দ্বার, পুরো জঙ্গলকে ঘিরে রেখেছে লোহার রেলিং। বয়স্ক মানুষদের মন্দির অবধি পৌঁছে দেওয়ার জন্য চালু হয়েছে টোটো পরিষেবা, সম্পূর্ণ বিনামুল্যে। মন্দির উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য যতসামান্য কিছু টাকা (৫ টাকা) নেওয়া হচ্ছে। গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থাও আছে। মন্দিরের লাগোয়া বাচ্চাদের খেলার জন্য পার্ক চালু হয়েছে। এলাকার সৌন্দর্যায়নের জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। হাতি-হরিণের মূর্তি বসেছে জঙ্গলের মধ্যে। ফোয়ারা চালু হয়েছে। রাস্তা ঘাট হয়েছে উন্নতমানের। রাস্তার ধারে ধারে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারটা লক্ষ্য করা যায় সেটি হল, প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া আছে বোটিং করার সুযোগ। প্রতিজন ২০ টাকা।
Partha Mukherjee
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।