#আলিপুরদুয়ার: প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর ডুয়ার্সের পাহাড়ি গ্রাম 'লেপচাখা'। গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহ থেকে স্বস্তি পেতে কোলাহল থেকে অনেক দুরে এ বারের গন্তব্য হতে পারে ডুয়ার্সের স্বল্প পরিচিত ড্রুকপা গ্রাম অর্থাৎ লেপচাখা যাকে 'The Heaven Of Dooars' নামে অভিহিত করা হয়। বক্সা টাইগার রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত লেপচাখা একটি পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত লুপ্ত প্রায় ড্রুকপা জনবসতির একটি ছোট্ট গ্রাম, এই ড্রুকপারাই এই স্থানটির মূল বাসিন্দা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পাহাড়ি গ্রামটি। কখনও রোদ ঝলমলে আকাশ, আবার কখনও উড়ে আসা মেঘ ক্ষণিকের মধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজিয়ে নিয়ে যায় বাস্তব থেকে কল্পনায়, যেন এক মেঘ পিয়নের দেশ।
আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে সান্তালবাড়ি। সান্তালবাড়ি যাওয়ার পথে রাজাভাতখাওয়া চেক পোস্ট থেকে বক্সায় প্রবেশের অনুমতি নিয়ে রওনা দিতে হবে সান্তালবাড়ির উদ্দেশ্যে। চেক পোস্ট থেকে এই সান্তালবাড়ির দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং সেখান থেকে কিছু দুরে রয়েছে ভিউয়ার্স পয়েন্ট, এর কিছু আগেই গাড়ি ছেড়ে পায়ে এবং মনে ভর করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে এগিয়ে যেতে হবে পাহাড়ি চড়াই উৎরাই পথ ধরে। ভিউয়ার্স পয়েন্ট যাওয়ার পথে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ট্রেকিং করে পৌছে যাওয়া যায় 'বক্সা ফোর্টে' , যেখানে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বন্দি করে রাখত বৃটিশ সরকার।
আরও পড়ুন: গরমের ছুটিতে ডেস্টিনেশন হতেই পারে পেলিং, কীভাবে যাবেন-কোথায় থাকবেন? জেনে নিন...
এই দূর্গ যাওয়ার পথেই রয়েছে সাময়িক জিরিয়ে নেওয়ার জন্য চা- মোমো ও ঠান্ডা পানিয়োর ছোট্ট গুটিকয়েক দোকান, যা অনেকটাই শরীরকে চাঙ্গা অনুভব করতে সাহায্য করে। সেখান থেকে প্রায় ১ ঘন্টায় পৌছে যাওয়া যায় মেঘ পিয়নের দেশ লেপচাখায়। দূর্গের কিছু পরেই এবার চোখে পড়বে ছোট্ট লেপচাখা গ্রাম। গ্রামটি ভুটানের কাছে অবস্থিত। যার দৈর্ঘ্য দুই থেকে তিন কিলোমিটারের বেশি নয়। এমনকি সেখানে রয়েছে একটি এস.এস.বি. ‘র ক্যাম্প। লুপ্তপ্রায় ড্রুকপা জনবসতির এই ছোট্ট গ্রামটিতে জনসংখ্যা প্রায় দুই শতাধিকের বেশি নয়। স্থানীয় মানুষদের কাছে জানা যায়, সেখানে কয়েকমাস পরপর মেডিকেল ক্যাম্প করে ওষুধ বিতরণ করা হয়। তবে কেউ অসুস্থ হলে চরম বিপাকে পড়তে হয় লেপচাখাবাসীক। তবে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা প্রসাশনের তরফে পালকি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা ।
আরও পড়ুন: গরম তো থাকবেই, গ্রীষ্মের ছুটিতে তাও যেতেই পারেন 'বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন' গনগনি
লেপচাখার প্রধান আকর্ষণ দীর্ঘ পাহাড়ি চূড়া অর্থাৎ ড্রুকপা গ্রাম থেকে চারদিকের পাহাড় অরণ্যে ঘেরা নৈসর্গিক দৃশ্য। ছুঁই ছুঁই পাহাড় আর ডুয়ার্সের বনভূমি ও পাহাড়ি নদী যা অনায়াসে মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলে পর্যটকদের মনকে। সেখান থেকে সমগ্র বক্সা বনভূমি দেখতে পাওয়া যায়, সাথে দেখতে পাওয়া যায় রায়ডাক, সংকোশ, বালা, জয়ন্তী-সহ বক্সা বনভূমি জুড়ে প্রায় ৭টি নদী । এমনকি পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে মহাকাল পাহাড়, চুনা ভট্ট, রোভার্স পয়েন্ট এবং রুপম ভালি যা ট্রেকিং এর জন্য দারুন ভাবে পর্যটককে আকৃষ্ট করে তোলে। লেপচাখায় রয়েছে একটি বৌদ্ধ গুম্ফা এবং নানা রংয়ের ফুলে বাগানে সাজানো একটি ছোট্ট মাঠ। সেখানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের প্রাকৃতিক দৃশ্য ভোলার নয়।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে ভুটানের বাসিন্দাদের 'লোসার ফেস্টিভ্যাল' হয়, যা দেখার মতন। ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা এর মধ্যে থাকার রুম পাওয়া যায় লেপচাখায়। স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকেন চামা ড্রুকপা, তেনজিং ড্রকপারা। তাঁদের আতিথেয়তা মন জয় করে নেয় স্বল্প সময়ের মধ্যেই। লেপচাখায় বিদুৎ থাকলেও তা ভীষন অনিয়মিত। তবে সৌরবিদুৎ-এর ব্যবস্থা রয়েছে। মোবাইল পরিষেবাও খুবই সীমিত। কিছুটা কষ্টের জীবন হলেও কংক্রিটের কৃত্রিম শহর- জঞ্জাল থেকে অনেক দূরে কোলাহল মুক্ত মায়াময় প্রকৃতি যেন সর্বদা স্নেহ উজাড় করে দিয়েছে ড্রুকপাদের ওপর। এই মনোরম প্রকৃতির হাতছানি সত্যি অনন্য, যা একেবারেই স্বর্গের মহিমায় যথার্থ। যার স্বাদ অনুধাবন না করলে অনেকটাই হয়তো বাকি রয়ে গেল বলে মনে হবে প্রকৃতি প্রেমি ও ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের কাছে। তাই সপ্তাহান্তে ব্যস্ত জীবন থেকে দু'দিনের ছুটিতে বা গরমের ছুটিতে প্রকৃতির অনাবিল আনন্দ উপভোগ করতে এবারের গন্তব্য হোক 'লেপচাখা – The Heaven Of Dooars'।
দীপেন্দ্র লাহিড়ী
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: North Bengal, Summer Travel, Summer Vacation